ইসলামাবাদী, মওলানা মনিরুজ্জামান
ইসলামাবাদী, মওলানা মনিরুজ্জামান (১৮৭৫-১৯৫০) ইসলামি চিন্তাবিদ, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ও সাংবাদিক। তিনি চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানাধীন আড়ালিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মওলানা মনিরুজ্জামান ছিলেন বিশ শতকের প্রথম চার দশকে বাংলার মুসলিম রাজনীতিতে এক বৈচিত্র্যময় ব্যক্তিত্ব। আধুনিক শিক্ষায় স্বল্প শিক্ষিত হলেও তিনি ছিলেন প্রবল আত্মোপলব্ধি ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি। ইসলামাবাদের অধিবাসী হওয়ায় সমসাময়িকদের অনেকের ন্যায় তিনিও ‘ইসলামাবাদী’ নাম গ্রহণ করেন। ইসলামাবাদ মুসলিম যুগের চট্টগ্রামের সরকারি নাম। তিনি অনেক ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। মুসলিম পুনর্জাগরণবাদী হিসেবে তাঁর কর্মকান্ডের জন্যই তিনি মূলত খ্যাতি লাভ করেন। অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য তিনি সাংবাদিকতা এবং জনসাধারণের মধ্যে বক্তৃতা দানকে গণযোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেন। তিনি মুসলিম সংস্কারমূলক সাময়িকী সোলতান (১৯০১), হাবলুল মতিন (১৯১২), মুহাম্মদী (১৯০৩), কোহিনূর (১৯১১), বাসনা (১৯০৪) ও আল-এসলাম (১৯১৩) পত্রিকার সম্পাদনা বা প্রকাশের দায়িত্ব পালন করেন।
একজন জাতীয়তাবাদী হিসেবে ইসলামাবাদী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস সমর্থন করেন এবং বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তিনি সক্রিয়ভাবে অসহযোগ এবং খিলাফত আন্দোলনেও অংশগ্রহণ করেন। তিনি প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সদস্য ছিলেন (১৯০৬)। ইসলামাবাদী ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্ট এর অন্যতম স্থপতি। বিশ শতকের ত্রিশের দশকে তিনি কংগ্রেসের রাজনীতি ছেড়ে কৃষক প্রজা পাটিতে যোগদান করেন। এই দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে তিনি ১৯৩৭ সালে বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। মওলানা ইসলামাবাদী আঞ্জুমান-ই-উলামা-ই-বাঙ্গালার (১৯১৩) অন্যতম সংগঠক ছিলেন। এটি পরবর্তীকালে ‘জামিয়াত-ই-উলামা-ই-বাঙ্গালাহ’ হিসেবে পরিচিত লাভ করে। আঞ্জুমানের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে বাংলা ভাষাকে জনপ্রিয় করে তোলা। তিনি জামিয়াত-ই-উলামা-ই-হিন্দ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এবং তিনি ১৯২২ ও ১৯৩০ সালে চট্টগ্রামে জাঁকজমকপূর্ণভাবে সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠান করেন। তিনি সংগঠনটির চট্টগ্রাম শাখা প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর সভাপতি নিযুক্ত হন। ইসলামাবাদী চট্টগ্রামে একটি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য আপ্রাণ চেষ্টাু করেন। কিন্তু পরিস্থিতি তাঁর অনুকূলে না থাকায় তা সম্ভব হয় নি। [এম. ইনামুল হক]