রাজবাড়ী জেলা
রাজবাড়ী জেলা (ঢাকা বিভাগ) আয়তন: ১১১৮.৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৪০´ থেকে ২৩°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১৯´ থেকে ৯০°৪০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পাবনা জেলা, দক্ষিণে ফরিদপুর ও মাগুরা জেলা, পূর্বে মানিকগঞ্জ জেলা, পশ্চিমে কুষ্টিয়া এবং ঝিনাইদহ জেলা।
জনসংখ্যা ৯৫১৯০৬; পুরুষ ৪৮৯৫৫৭, মহিলা ৪৬২৩৪৯। মুসলিম ৮৪৭৬১৬, হিন্দু ১০৩৬৬৪, বৌদ্ধ ১৭৩ এবং অন্যান্য ৪৫৩।
জলাশয় প্রধান নদী: পদ্মা, যমুনা, গড়াই, চন্দনা, চিত্রা।
প্রশাসন ১৯৮৪ সালে রাজবাড়ী জেলা গঠিত হয়। এটি এক সময় যশোর জেলার অংশ ছিল। ১৮১১ সালে ফরিদপুর জেলা গঠন করা হলে রাজবাড়ীকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়াও রাজবাড়ী জেলার বর্তমান উপজেলাগুলি অতীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। পাংশা থানা এক সময় পাবনা জেলার অংশ ছিল। ১৮৫৯ সালে পাংশা ও বালিয়াকান্দি নবগঠিত কুমারখালি মহকুূমার অধীনে নেয়া হয়। ১৮৭১ সালে গোয়ালন্দ মহকুমা গঠিত হলে পাংশা ও রাজবাড়ী এই নতুন মহকুমার সঙ্গে যুক্ত হয় এবং রাজবাড়ীতে মহকুমা সদর দফতর স্থাপিত হয়। ১৯৮৪ সালের মার্চ মাসে গোয়ালন্দ জেলায় উন্নীত হয় এবং এই জেলার নতুন নাম হয় রাজবাড়ী। জেলার চারটি উপজেলার মধ্যে পাংশা উপজেলা সর্ববৃহৎ (৪১৪.২৪ বর্গ কিমি)। জেলার সবচেয়ে ছোট উপজেলা গোয়ালন্দ (১৪৯.০৩ বর্গ কিমি)। নদীবিধৌত পদ্মার পলি মাটি দিয়ে এই জেলার অধিকাংশ ভূমি গঠিত। ঢাকা বিভাগের ১৭টি জেলার মধ্যে রাজবাড়ী জেলার অবস্থান ১৫ তম এবং বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে এর অবস্থান ৫৬তম।
জেলা | |||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | উপজেলা | পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |
শহর | গ্রাম | ||||||||
১১১৮.৮ | ৪ | ৩ | ৪২ | ৮২০ | ৯৮৪ | ১১৮৮৯১ | ৮৩৩০১৫ | ৮৫১ | ৩৯.৮১ |
জেলা | |||||||||
আয়তন(বর্গ কিমি) | উপজেলা | পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |
শহর | গ্রাম | ||||||||
গোয়ালন্দ | ১৪৯.০৩ | ১ | ৪ | ১১৩ | ১৬৯ | ১১৭৩১৩ | ৭৮৭ | ৩৪.৮ | |
পাংশা | ৪১৪.২৪ | ১ | ১৭ | ৩৪৩ | ৩৪৫ | ৩৫২৬৬১ | ৮৫১ | ৪০.০ | |
বালিয়াকান্দি | ২৪২.৫৩ | - | ৭ | ১৫১ | ২৫৮ | ১৮৬৫৬২ | ৭৬৯ | ৪০.১ | |
রাজবাড়ী সদর | ৩১৩.০০ | ১ | ১৪ | ২১৩ | ২১২ | ২৯৫৩৭০ | ৯৪৪ | ৪১.৪ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ এ জেলায় একটি সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। ২১ ও ২২ এপ্রিল পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে পর্যায়ক্রমে ২ জন এবং ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পাকবাহিনী পাংশা উপজেলার রামকোল ও মাথুরাপুর গ্রামের ১০ জন লোককে হত্যা করে এবং ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। নভেম্বর মাসে বালিয়াকান্দি উপজেলায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে বেশকিছু অস্ত্রশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত হয়। এছাড়াও নভেম্বর মাসে রাজবাড়ী সদর উপজেলার আলহাদীপুর গ্রামে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৯ জন পাকসেনা নিহত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ৪ (গোয়ালন্দ, খানখানাপুর, পাংশার হাবাসপুরের চর এলাকা, বালিয়াকান্দি)।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৯.৮১%; পুরুষ ৪৩.৬৬%, মহিলা ৩৫.৭৫%। হোমিওপ্যাথ কলেজ ১, কলেজ ২১, ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৯৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৪০৮, স্যাটেলাইট স্কুল ১৩, কমিউনিটি স্কুল ৯, গণশিক্ষা স্কুল ৮৫, মাদ্রাসা ৪২। উলেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রাজবাড়ী সরকারি কলেজ (১৯৬১), পাংশা কলেজ (১৯৬৯), রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯২), বালিয়াকান্দি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭)।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬০.৮৪%, অকৃষি শ্রমিক ৩.১৯%, শিল্প ১.৫৯%, ব্যবসা ১৪.৩৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৪১%, নির্মাণ ২.০৩%, ধর্মীয় সেবা ০.১৬%, চাকরি ৬.৬৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৬% এবং অন্যান্য ৬.১৫%।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: অনুসন্ধান (১৯৮৪), সহজ কথা, রাজবাড়ী কণ্ঠ; দৈনিক মাতৃকণ্ঠ (রাজবাড়ী), গতকাল (রাজবাড়ী), পাংশা বার্তা, পথবার্তা (পাংশা); অবলুপ্ত: কোহিনূর (১৮৯৮), খাতক (১৮৯৩), কাঙ্গাল (১৯০৫), শাপলা-শালুক।
লোকসংস্কৃতি ছড়া, ধাঁধাঁ, প্রবাদ-প্রবচন, মুর্শিদি, মারফতি, কবিগান, জারিগান, সারিগান, বিচারগান উল্লেখযোগ্য।
বিশেষ আকর্ষণ মীর মশারফ হোসেনের মাযার (বালিয়াকান্দি), বহরপুর বিনোদন কেন্দ্র (রাজবাড়ী), গোয়ালন্দ ফেরী ঘাট। [মো. শরীফুল ইসলাম]
আরও দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা।
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; রাজবাড়ী জেলার সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; রাজবাড়ী জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।