লালমনিরহাট সদর উপজেলা
লালমনিরহাট সদর উপজেলা (লালমনিরহাট জেলা) আয়তন: ২৫৯.৫৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৪৬´ থেকে ২৬°০০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২০´ থেকে ৮৯°৩৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ও আদিতমারী উপজেলা, দক্ষিণে কাউনিয়া ও রাজারহাট উপজেলা, পূর্বে ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) ও রাজারহাট উপজেলা, পশ্চিমে আদিতমারী ও গঙ্গাচড়া উপজেলা।
জনসংখ্যা ২৮৯২৭২; পুরুষ ১৪৮৬২৫, মহিলা ১৪০৬৪৭। মুসলিম ২৪৩৪৮৬, হিন্দু ৪৫১১৭, বৌদ্ধ ৪৪৮, খ্রিস্টান ৩৪ এবং অন্যান্য ১৮৭।
জলাশয় প্রধান নদী: তিস্তা, ধরলা, স্বর্ণমতি।
প্রশাসন লালমনিরহাট থানা গঠিত হয় ১৯০১ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে। লালমনিরহাট পৌরসভা গঠন করা হয় ১৮৭৩ সালে। ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলীয় সদর দফতর লালমনিরহাট।
উপজেলা | ||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ৯ | ১২৩ | ১৪৮ | ৫৭২৩৬ | ২৩২০৩৬ | ১১১৪ | ৬০.৮ | ৪১.৫ |
পৌরসভা | |||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
১৭.৬১ | ৯ | ৬৩ | ৫৭২৩৬ | ৩২৫০ | ৬০.৮ |
ইউনিয়ন | ||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |
পুরুষ | মহিলা | |||
কুলাঘাট ৫১ | ৬৭৮২ | ১২৩০৩ | ১১৭৫৭ | ৩৬.৫৮ |
খুনিয়াগাছ ৪৩ | ৬১৬৮ | ১৩২৮৯ | ১২৪২৮ | ২৮.৩৫ |
গোকুন্ডা ২৯ | ৪৫৬৪ | ১৫০৪৫ | ১৪৫১৯ | ৫৪.৪১ |
পঞ্চগ্রাম ৮৩ | ৬৭৬৩ | ১৩৩৩১ | ১২৯২৩ | ৪৩.১৫ |
বড়বাড়ী ২০ | ৫৫১৯ | ১১৭১২ | ১১২৭৬ | ৪১.০০ |
মহেন্দ্রনগর ৭৩ | ৮৪৬১ | ১৬০৫৭ | ১৫৪৫০ | ৪৫.০০ |
মোগলহাট ৬৫ | ৭৫২৩ | ১৫২৯৪ | ১৪৮৩২ | ৩৫.৯১ |
রাজপুর ৯৪ | ৬৫০৩ | ৮১৬৬ | ৭৮১৩ | ৫২.৭৫ |
হারাটি ৩৬ | ৫৪৯৯ | ১৩৪৫৬ | ১২৩৮৫ | ৩৮.০৪ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ সুবাদার মনসুর খাঁ মসজিদ (নিদাঁড়িয়া মসজিদ), হারানো মসজিদ (হিজরি ৬৯), সিন্দুরমতি পুকুর, হোসেন সরোবর (সুকান দীঘি) উল্রেখযোগ্য।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় লালমনিরহাট সদর ছিল ৬ নং সেক্টরের মোগলহাট সাবসেক্টরের অধীন। ৪ এপ্রিল পাকবাহিনী লালমনিরহাট বিমানঘাঁটিতে অবস্থান গ্রহণ করে। ৫ এপ্রিল পাকবাহিনী বিহারীদের সহযোগিতায় বাড়িঘর অগ্নিসংযোগসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ৯ নভেম্বর পাকবাহিনী বেশসংখ্যক লোককে ধরে এনে আইরখামার ডাকবাংলো প্রাঙ্গনে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় পাকবাহিনী বহু বাঙালি রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হত্যা করে। ৪ ও ৫ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর প্রবল আক্রমণের ফলে পাকবাহিনী লালমনিরহাট উপজেলা ত্যাগ করে। ৬ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ৩ (রাইফেল্স ব্যাটালিয়নের পিছনের পুকুর, রেলওয়ে মূল ভবনের পেছনে, লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সায়েন্স ল্যাবরেটরির পেছনের কূপ); স্মৃতিস্তম্ভ ২; সরণী ১ (রেলওয়ে ওভার ব্রিজের পশ্চিমে শহীদ ড. জোহা সরণী)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৬০৭, মন্দির ১২১, গির্জা ৪, তীর্থস্থান ৩। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: নিদাড়িয়া মসজিদ, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, থানাপাড়া জামে মসজিদ, বায়তুল মজুদ জামে মসজিদ, তেলীপাড়া কালীমন্দির, শ্রী শ্রী বৃদ্ধেশ্বরী মন্দির, পুরান বাজার চার্চ অব গড, খাতাপাড়া বড় দরগাহ, সিন্দুরমতি তীর্থ, বানিয়ার দীঘি তীর্থ।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৫.৫%; পুরুষ ৫১.৯%, মহিলা ৩৮.৮%। কলেজ ১০, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৩৩, মাদ্রাসা ৫৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: লালমনিরহাট সরকারি কলেজ (১৯৬৪), মজিদা খাতুন সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৮৮), শেখ সফিউদ্দিন কমার্স কলেজ (১৯৯১), লালমনিরহাট আদর্শ ডিগ্রি মহাবিদ্যালয় (১৯৯৪), সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ (১৯৭৮), লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), লালমনিরহাট সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯৩০), চার্চ অব গড উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৬), কাশিপুর দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৯), রেলওয়ে চিলড্রেন পার্ক সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬০), কবি শেখ ফজলল করিম বালিকা বিদ্যালয় (১৯৮৬), নেছারিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৯৬৫)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: লালপ্রভাত (২০০০); সাপ্তাহিক: লালমনিরহাট বার্তা (১৯৯১), জানাজানি (১৯৮৪); সাহিত্য পত্রিকা: ত্রৈমাসিক চলমান (১৯৮৪), রক্তসুর্য (১৯৭৭), অস্বীকার (১৯৭৮), বিকাশ (১৯৮৬), সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা (১৯৯০), লালপোস্টার (১৯৯৫), মাসিক রোদ্দুর (২০০১) ও সম্প্রীতি (২০০৫); অবলুপ্ত: চলমান, একতা, দারুচিনি ছাড়পত্র, ইদানিং, অরণ্যে রোদন।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৭৯, ক্লাব ১৭৫, সাংস্কৃতিক সংগঠন ১২, মহিলা সংগঠন ২, অডিটোরিয়াম ২, যাত্রাপার্টি ৪, জাদুদল ১, নাট্যদল ২, সিনেমা হল ২।
দর্শনীয় স্থান বিমান ঘাঁটি, মোগলহাট জিরো পয়েন্ট, তিস্তা রেলওয়ে সেতু, রেলওয়ে পার্ক ও মুক্তমঞ্চ, কুতুব খানা, সিন্দুরমতি, লালমনিরহাট জেলা জাদুঘর।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬২.৪৫%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৪৬%, শিল্প ০.৫৫%, ব্যবসা ১৩.৫৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.০৬%, চাকরি ৮.১৮%, নির্মাণ ১.০৮%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩৫% এবং অন্যান্য ৭.১৩%।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, তামাক, আখ, আলু, ভূট্টা, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পাট, চীনা, কাউন।
প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, লিচু, সুপারি, পেঁপে, বাতাবি লেবু, নারিকেল।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৯, হাঁস-মুরগি ৩৬, হ্যাচারি ৭।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১২৯ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২৮ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৯১ কিমি; রেলপথ ২৪ কিমি; নৌপথ ৩৫ নটিক্যাল মাইল। রেলষ্টেশন ৪।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও মোষের গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা ফ্লাওয়ারমিল, অয়েলমিল, স’মিল, আইস ফ্যাক্টরি, বিস্কুট ফ্যাক্টরি।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৩, মেলা ১৪। গোশলা হাট, নবাবের হাট, মহেন্দ্রনগর হাট, বুড়ির বাজার হাট, তিস্তা হাট, কুলাঘাট হাট, রাজপুর হাট এবং সিন্দুরমতি মেলা, সুকান দীঘির মেলা, গড়কাটা মাষাণের মেলা ও দূর্গাপূজার মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য তামাক, আখ, সুপারি, পেঁপে, আলু, ভুট্টা, শাকসবজি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৩.২৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ এ উপজেলায় উন্নতমানের সিলিকেট, ম্যাঙ্গানিজসমৃদ্ধ পাথর, আকরিক ও তেলের খনির সন্ধান পাওয়া গেছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৪.৪%, পুকুর ০.১৭%, ট্যাপ ০.৮৩% এবং অন্যান্য ৪.৬%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩১.৪৭% (গ্রামে ২৩.২১% এবং শহরে ৬৪.২৩%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩২.৩% (গ্রামে ৩৪.৩৪% এবং শহরে ২৪.২%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩৬.২৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ৩, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ৪, মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র ১, ক্লিনিক ৬।
এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা, আরডিআরএস।
[তানজিমুল নয়ন]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; লালমনিরহাট সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।