মুনীর, আশফাক
মুনীর, আশফাক (১৯৫৯-২০১১) মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং সংবাদ পরিবেশন কুশলীদের অগ্রনায়ক। মিশুক মুনীর নামেই সুপরিচিত।
মিশুক মুনীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ অধ্যাপক মুনীর চৌধরীর দ্বিতীয় সন্তান। ১৯৫৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ইউনিভার্সিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে তিনি এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি পাশ করেন। ১৯৮২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতোকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮০ সালে একটি শিক্ষার্থী বিনিময় কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তিনি কানাডায় যান এবং নিউ ব্রান্সউইক ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে কাজ করেন। তিনি ছাত্র অবস্থাতেই বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের অডিও ভিজ্যুয়াল বিভাগে তার কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯০ সালে মিশুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে তিনি ইলেকট্রনিক সাংবাদিকতায় পাঠদান ও প্রশিক্ষণ দান করতেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুদানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং যন্ত্রপাতি আনার জন্য আমেরিকায় গমন করেন।
১৯৯৯ সালে মিশুক বাংলাদেশের প্রথম বেসরকারি টেরিস্ট্রিয়াল টেলিভিশন ‘একুশে টিভি’তে সংবাদ বিভাগের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন এবং একুশে টিভিকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একজন অগ্রনায়ক হিসেবে কাজ করেন। এখানে তিনি বি.বি.সি-এর বিখ্যাত প্রবীণ সাংবাদিক সাইমন ড্রিং এর সাহচর্য লাভ করেন।
২০০১ সালে মিশুক কানাডায় গমন করেন। সেখানে কয়েকজন বন্ধুর সাথে মিলে অনেকটা স্ব-উদ্যোগেই ইন্টারনেট মাধ্যমকে ব্যবহার করে ‘দি রিয়েল নিউজ নেটওয়ার্ক’ নামে একটি সংবাদ পরিবেশন চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করেন। কানাডাতে তিনি ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফিও করতেন।
‘এটিএন নিউজ’ নামে একটি টিভি নিউজ চ্যানেল গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ২০১০-এর শেষের মিশুক আবার দেশে আসেন। তাঁর নিষ্ঠা ও পরিশ্রমে কিছুদিনের মধ্যেই এটিএন নিউজ জনপ্রিয় নিউজ চ্যানেল হিসেবে পরিচিতি পায়। মৃত্যুর আগপর্যন্ত তিনি এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সদাহাস্য মিশুক ছিলেন এমন একজন মানুষ যাঁর ছিল কঠোর নিষ্ঠা ও ন্যায় পরয়ণতা, প্রগাঢ় সমাজ-চেতনা এবং সাধারণ মানুষের জন্য গভীর ভালোবাসা।
ছাত্রজীবন থেকেই ফটোগ্রাফির প্রতি ছিল তাঁর নেশা, আর তাই পরবর্তীকালে রূপান্তরিত হয়েছিল সিনেমাটোগ্রাফিতে (চলচ্চিত্র গ্রাহক)। পরে ডিজিটাল মিডিয়া ও ব্রডকাস্ট সাংবাদিকতার দিকে তিনি ঝুঁকে পড়েছিলেন। বাংলাদেশের বিকল্প ধারার চলচ্চিত্রের অগ্রদূত তারেক মাসুদের সাথে তাঁর গড়ে উঠেছিল নিবিড় সখ্যতা এবং তারেকের প্রায় সবকয়টি চলচ্চিত্রের চিত্রগ্রাহক ছিলেন মিশুক। মিশুকের অন্যান্য প্রামাণ্য চিত্রের মধ্যে ঢাকা টোকাই (১৯৮৬) ও রিটার্ন টু কান্দাহার (২০০৩) আর্ন্তজাতিক খ্যাতি অর্জন করেছিল; প্রথমটি পুরস্কৃত হয়েছিল ওবার হাউজেন ইন্টারন্যাশনাল শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভাল-এ এবং দ্বিতীয়টি কানাডিয়ান এম্মি জোমিনি অ্যাওয়ার্ড-এ।
১৯৭১ সালে মিশুকের বয়স ১২। ঘাতকেরা যখন তাঁর বাবা মুনীর চৌধুরীকে ধরে নিয়ে যায় তখন তার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন মিশুক মুনীর। ২০১১ সালে সরকার কর্তর্ৃক গঠিত ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইবুনালে তিনি একজন প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবে অর্ন্তভুক্ত হয়েছিলেন।
২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়। [আসিফ মুনীর]