আবদুল হাকিম
আবদুল হাকিম (১৬২০-১৬৯০) মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের একজন কবি। নোয়াখালী জেলার বাবুপুর (মতান্তরে সন্দ্বীপের সুধারাম) ছিল কবির আবাসভূমি। তাঁর পিতা শাহ্ রাজ্জাক ছিলেন একজন পন্ডিত ব্যক্তি এবং তাঁর পীর ছিলেন সাহাবুদ্দীন। আবদুল হাকিম আরবি, ফারসি ও সংস্কৃত ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপন্ন ছিলেন। হাদীস, আল-কুরআন, ফেকাহ প্রভৃতি শাস্ত্র এবং রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণ সম্পর্কেও তাঁর গভীর পান্ডিত্য ছিল।
আবদুল হাকিম প্রধানত প্রণয়োপাখ্যানের কবি ছিলেন। এ যাবৎ তাঁর পাঁচটি গ্রন্থ পাওয়া গেছে: ইউসুফ-জুলেখা, নূরনামা, দুররে মজলিশ, লালমোতি সয়ফুল্মূল্ক এবং হানিফার লড়াই। ইউসুফ-জুলেখা মোল্লা জামী রচিত ফারসি কাব্য ইউসুফ ওয়া জুলায়খা (১৪৮৩) এবং নূরনামা ফারসি নীতিকাব্য নূরনামাহ্ অবলম্বনে রচিত। ‘যেসব বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী। সেসব কাহার জন্ম নির্ণয় না জানি।।’ বাংলা ভাষার প্রতি এরূপ শ্রদ্ধাপূর্ণ বক্তব্যের জন্য কবির নূরনামা কাব্য বিশেষভাবে প্রশংসিত। দুররে মজলিশ নামের নীতিকাব্যও ফারসি কবি সাইফুজ জাফর রচিত দুর্রুল মজলিশ কাব্যের ভাবানুবাদ। এ কাব্যে আবদুল হাকিম শুধু শাস্ত্রকার নন, কবিও। লালমোতি সয়ফুল্মূল্ক একটি মৌলিক প্রণয়োপাখ্যানমূলক কাব্য। হানিফার লড়াই কাব্যের প্রাপ্ত পান্ডুলিপিটি খন্ডিত। আবদুল হাকিম সমাজের সার্বিক কল্যাণে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই তিনি বিভিন্ন গ্রন্থে আদর্শ জীবন গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন। [রাজিয়া সুলতানা]