কবির, আহমদুল
কবির, আহমদুল (১৯২৩-২০০৩) সাংবাদিক, শিল্প-উদ্যোক্তা ও রাজনীতিক। তিনি ১৯২৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ায় যোগ দেন। তারপর ইস্ট পাকিস্তান ফরেন এক্সচেঞ্জ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৪ সালের জানুয়ারিতে তিনি সরকারি চাকুরি ছেড়ে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করেন। তিনি ছিলেন পাকিস্তানের ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক এবং বাংলাদেশের আইএফআইসি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। আহমদুল কবির প্রতিষ্ঠিত উল্লেখযোগ্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে এসেন্সিয়াল ইন্ডাস্ট্রিজ, ভিটা কোলা ও বেঙ্গল বেভারেজ কোম্পানি।
ব্যবসার পাশাপাশি আহমদুল কবির দৈনিক সংবাদ প্রকাশ হওয়ার প্রায় শুরু থেকে এ পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি সংবাদ-এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে তিনি প্রধান সম্পাদক হন এবং মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এ দায়িত্বে বহাল ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে আহমদুল কবির ছিলেন একজন ছাত্রনেতা। তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর নির্বাচিত ভি.পি (১৯৪৫-১৯৪৬)। ১৯৪২-১৯৪৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ইউনিয়নের ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন।
আহমদুল কবির ১৯৬৫ সালে পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনকে সমর্থনের দায়ে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে। ফলে তাঁকে দৈনিক সংবাদ-এর অফিস বন্ধ রাখতে হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পত্রিকাটির প্রকাশনা পুনরায় শুরু হয়।
আহমদুল কবির নরসিংদী নির্বাচনী এলাকা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দু’বার বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন (১৯৭৯ ও ১৯৮৬)। তিনি পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন কৃষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। ১৯৯০ সালে তিনি গণতন্ত্রী পার্টি গঠন করেন এবং দলের সভাপতি হন। তিনি কমনওয়েলথ প্রেস ইউনিয়নের বাংলাদেশ ইউনিটের সভাপতি ছিলেন। এ পদে থাকাকালীন তিনি বাহামা, হংকং এবং গ্লাসগো সহ বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনির্ভাসিটি অব বাংলাদেশ-এর গভর্নিং ও ট্রাস্টি বোর্ডেরও সদস্য ছিলেন।
২০০৩ সালের ২৪ নভেম্বর ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়।
[সমবারু চন্দ্র মহন্ত]