মানকালীর ভিটা মসজিদ
মানকালীর ভিটা মসজিদ প্রাচীন পুন্ড্রনগরের (বর্তমান বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়) নগর দুর্গের বর্ধিত অংশে আদি ঐতিহাসিক যুগের ধ্বংসাবশেষের উপর স্থাপিত। ১৯৬৫-৬৬ সালের শীতকালে নিয়মিত খননকালে অস্বাভাবিক কিছু স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট্য সম্বলিত প্রাক-মুগল যুগের ১৫ গম্বুজের একটি জামে মসজিদের চিহ্ন আবিস্কৃত হয়।
ইটের তৈরী এ মসজিদের পরিত্যক্ত ধ্বংসাবশেষসমূহ চতুর্দিকের ভূমি থেকে প্রায় ১.৫মি উঁচু। ভূমি নকশায় আয়তাকার এ মসজিদটির পরিমাপ ২৮.৪মি × ১৬মি। এর দেওয়ালগুলি ১.৫মি পুরু। এর পশ্চিমের কক্ষটি পাঁচটি আইলে বিভক্ত। এ পথগুলিকে আয়তকার ইটের স্তম্ভের দুটি সারি ও তিনটি ‘বে’ (দুস্তম্ভের মধ্যবর্তী স্থান) দ্বারা পৃথক করা হয়েছিল। সুতরাং মনে হয় যে, আদিতে ১৫টি গম্বুজ উবু করে বসিয়ে মসজিদটিতে ছাদ দেওয়া হয়েছিল। পশ্চিম দেওয়ালের অভ্যন্তরে পাঁচটি খাঁজকৃত অর্ধগোলাকৃতি মিহরাব আছে। পূর্ব দেওয়ালে আছে পাঁচটি প্রবেশদ্বার। খননকালে সুলতানি যুগের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ চমৎকার পোড়ামাটির ফলক এবং খোদাইকৃত ইটের নিদর্শন পরিলক্ষিত হয়। অলংকরণ রীতির মধ্যে ছিল প্রধানত ফুলের নকশা, জ্যামিতিক নকশা, শিকল, পিরামিড, খোদাই করা পদ্ম-পাপড়ি ও গোলাপ।
নামায কক্ষের অভ্যন্তরে অদ্ভুত ধরনের বেশ কয়েকটি ছোট পাকা মঞ্চের সাথে কেন্দ্রীয় মিহরাবের নিকটে উত্তর দিকে ধাপসহ একটি মিম্বার বা প্রচারমঞ্চ দেখা যায়, যার আয়তন ১.৮ × ১.৭ মিটার। এগুলির একটি কেন্দ্রীয় মিহরাবের নিকটে ছিল, যা ১.৫ মিটার প্রশস্ত প্রবেশ পথসহ দেওয়ালের ভেতরে ছিল। এতে এটি মসজিদের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। সম্ভবত এ এলাকার প্রশাসনের সাথে যুক্ত উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য এটি প্রথম থেকেই নির্দিষ্ট করে রাখা হয়েছিল। মসজিদটির অন্যান্য অপরিচিত বৈশিষ্ট্যের মধ্যে রয়েছে নামায কক্ষের অভ্যন্তরে তিনটি ছোট উঁচু মঞ্চ, যা মেঝের সাধারণ স্তর থেকে প্রায় ০.২৫ মিটার উঁচু। এর উদ্দেশ্য কি ছিল তা স্পষ্ট নয়। পূর্ব দিকে রয়েছে ৭.৮ মিটার প্রশস্ত একটি খোলা আঙিনা।
মসজিদটি একাধিকবার সংস্কার করা হয়েছে। এসময় মেঝের উচ্চতা বৃদ্ধি পায় এবং গম্বুজের ভার রক্ষাকারী অষ্টভুজী স্তম্ভগুলি অতিরিক্ত ইটের সাহায্যে আবৃত করে আরও শক্তিশালী করা হয়। এর ফলে এগুলি বিশাল আয়তাকার রূপ লাভ করে। [নাজিমউদ্দীন আহমেদ]