মঈনুদ্দীন, খান মুহম্মদ
মঈনুদ্দীন, খান মুহম্মদ (১৯০১-১৯৮১) কবি, সাহিত্যিক। তিনি ১৯০১ সালের ৩০ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার চারিগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবকালেই তিনি পিতামাতা হারান এবং তাঁরা তাঁদের উত্তরাধিকারীদের জন্য কোনো ভূসম্পত্তি বা অন্য কোনো সহায় সম্পদ রেখে যাননি। ফলে অল্প বয়সেই মঈনুদ্দীনকে জীবিকার অনুসন্ধান করতে হয় এবং এতদুদ্দেশ্যে তিনি কলকাতা গিয়ে সেখানে পুস্তক-বাঁধাই কর্মী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। কাজের পাশাপাশি তিনি নৈশকালীন বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে থাকেন এবং প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে কলকাতা কর্পোরেশন শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি কলকাতা কর্পোরেশন ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন এবং এখানে বিশ বছর কাজ করেন। শিক্ষকতাকালীন তিনি শিশুদের জন্য লেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন।
১৯২৩ সালে মুহম্মদ মঈনুদ্দীন সাপ্তাহিক মুসলিম জগত পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন। পত্রিকায় ‘বিদ্রোহ’ শীর্ষক একটি সম্পাদকীয় প্রকাশের দায়ে তাঁকে ছয় মাস কারাভোগ করতে হয়। হুগলি জেলখানায় থাকাকালীন তিনি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হন। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর মুহম্মদ মঈনুদ্দীন ঢাকায় চলে আসেন। ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকায় ‘আলহামরা লাইব্রেরি’ নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এখান থেকে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও প্রকাশ করতেন।
১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকে মুহম্মদ মঈনুদ্দীন শিশুতোষ কবি হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর রচিত অনেক ছড়া এখনও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের মুখে উচ্চারিত হয়। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে মুসলিম বীরাঙ্গনা (১৯৩৬), আমাদের নবী (১৯৪১), ডা. শফিকের মোটর বোট (১৯৪৯), খোলাফা-ই-রাশেদীন (১৯৫১), আরব্য রজনী (১৯৫৭), বাবা আদম (১৯৫৮), স্বপন দেখি (১৯৫৯), লাল মোরগ (১৯৬১), শাপলা ফুল (১৯৬২)। তিনি অনেক কবিতা, গল্প ও উপন্যাস লিখেন। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: কবিতা- পালের নাও (১৯৫৬), হে মানুষ (১৯৫৮), আর্তনাদ (১৯৫৮); উপন্যাস- অনাথিনী (সহচর পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত, ১৯২৬), নয়া সড়ক (১৯৬৭); ছোটগল্প- ঝুমকোলতা (১৯৫৬)। তিনি যুগস্রষ্টা নজরুল (১৯৫৭) শিরোনামে একটি জীবনীগ্রন্থ রচনা করেন।
খান মুহম্মদ মঈনুদ্দীন শিশুসাহিত্যের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬০), যুগস্রষ্টা নজরুল রচনার জন্য ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৬০) এবং একুশে পদক (১৯৭৮) লাভ করেন। ১৯৮১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। [সমবারু চন্দ্র মহন্ত]