ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯
ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ বিদ্যমান তথ্য অনুযায়ী ভোটার তালিকা অধ্যাদেশ ১৯৮২ সালে জারী করা হয় (১৯৮২ সালের ৬১ নং অধ্যাদেশ)। এই অধ্যাদেশের ভিত্তিতে ২০০৬ সালের সংসদীয় নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্ত্তত করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়ায় ৯,০১,৩০,০০০। ২০০১ সালের এ তালিকায় মোট ভোটার সংখ্যা ৭,০৪,৬০,০০০ ছিল। এ ধরনের বিপুল ব্যবধান জনসংখ্যা হার বৃদ্ধির সাথে মোটেও সংগতিপূর্ণ ছিল না। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হার ছিল ১.৪৬ শতাংশ। মিডিয়া ও নাগরিক সমাজ এ কারণে ২০০৬ সালে প্রণীত ভোটার তালিকাকে অবিশ্বাস্য মর্মে আখ্যায়িত করে।
এর ফলে কম্পিউটারের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও বছরওয়ারী এ তালিকা হালনাগাদ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়। তালিকাভুক্ত প্রতি ভোটারের ছবিও সংরক্ষণ করার প্রস্তাব আসে। এ লক্ষ্যে ছবিসহ ভোটার শনাক্তকরণ কার্ডের প্রথা চালু করার প্রয়োজন দেখা দেয়। এ প্রসংগে সরকার একটি অধ্যাদেশ (অধ্যাদেশ নং ১৮, ২০০৭) জারী করে। পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশন কম্পিউটারে ধারণকৃত ছবিসহ তথ্যভিত্তিক ভোটার তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করে। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এ অধ্যাদেশটি রহিত করে সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত এ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করে। মুখবন্ধে বিদ্যমান ভোটার তালিকা আইন সংশোধন ও আধুনিকীকরণের আইন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ২০০৯ সালের ২৪ জানুয়ারি এ আইন জনসাধারণের অবগতির জন্য গেজেটে প্রকাশিত হয় (আইন ৬, ২০০৯)।
২০০৭ সালের ভোটার তালিকা আইন রহিত করা ছাড়াও ১৯৮২ সালের অনুরূপ অধ্যাদেশ রহিত করা হয়। তবে উক্ত আইনদ্বয়ের অধীনে কৃত কার্যাবলিকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল উদ্ভূত কোনো আইনি জটিলতা এড়ানো।
আইনটি কারিগরী বান্ধব ভোটার তালিকা প্রণয়ন, কম্পিউটারের মাধ্যমে ভোটার নিবন্ধন প্রক্রি্য়া এবং ভবিষ্যতে তা হালনাগাদ করার অধিকার কমিশনকে প্রদান করে। ইতিপূর্বে ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিধান ছিল নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্ধারিত তারিখের মধ্যবর্তী সময়ে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা। নতুন আইনে এ প্রথার আমূল পরিবর্তন হয়। বিদ্যমান আইনের বিধান অনুযায়ী নির্ধারিত পদ্ধতিতে বছরের যেকোন সময় তালিকা হালনাগাদ করা যায়।
আইনটির অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান হলো কম্পিউটারে ধারণকৃত তালিকার বিষয়াবলি প্রতি বছর জানুয়ারি ২ তারিখ থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত সংশোধন করা যাবে। এ প্রক্রি্য়ায় আইনে নির্ধারিত পদ্ধতি অনুযায়ী যোগ্য ভোটারকে তালিকায় অন্তর্ভূক্ত এবং অযোগ্য ভোটারের নাম বিয়োজন করা যায়। ভোটারদের যোগ্যতা ও অযোগ্যতার মাপকাঠি আইনে নির্দিষ্ট করে বলা আছে। আইনের বিধানে আরও রয়েছে যেকোন ভোটারের সাধারণ বসতবাড়ি সংক্রা্ন্ত ঠিকানার রদবদলের তথ্য হালনাগাদ করা।
ভোটার তালিকার বৈধতার বিষয়েও আইনে বিধান রয়েছে। এক, ভোটার তালিকা নির্ধারিত পদ্ধতিতে হালনাগাদ না করা হলে তালিকার বৈধ্যতা বা ধারাবাহিকতা ক্ষুন্ন হবে না। দুই, তালিকার বৈধতার বিষয়ে আরও বলা হয় যে, তালিকায় ভুল ত্রুটি বা অযোগ্য ভোটারের অন্তর্ভুক্তি সত্ত্বেও এর বৈধতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে আইনটি কমিশনের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে যেকোন সংস্থা থেকে কমিশন বাধ্যতামূলকভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। কমিশন আইনের অধীনে বিধান প্রণয়ন করবে এবং তালিকার বৈধতা সম্পর্কে আদালতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। অন্যান্য বিধানের মধ্যে রয়েছে মিথ্যা তথ্য প্রদান এবং তালিকা প্রণয়নে বাধা সৃষ্টির জন্য শাস্তি। এ ছাড়া একটি বিশেষ বিধানও আইনে বিদ্যমান। কোনো অনিবার্য কারণে কোনো নির্বাচনী এলাকায় বা ক্ষেত্রমত ভোটার এলাকায় তালিকা প্রস্তুতকার্য সম্পন্ন করা সম্ভব না হলে, কমিশন গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা ঐ নির্বাচনী বা ভোটার এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থায় ভোটার তালিকা প্রণয়ন এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। [এ.এম.এম শওকত আলী]