বোরহানউদ্দিন উপজেলা
বোরহানউদ্দিন উপজেলা (ভোলা জেলা) আয়তন: ২৮৪.৬৭ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°২১´ থেকে ২২°৩৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৩৫´ থেকে ৯০°৫১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভোলা সদর ও দৌলতখান উপজেলা, দক্ষিণে লালমোহন উপজেলা, পূর্বে তজুমদ্দিন উপজেলা, পশ্চিমে বাউফল উপজেলা।
জনসংখ্যা ২৪৪১৩৭; পুরুষ ১২৫৮২৮, মহিলা ১১৮৩০৯। মুসলিম ২৩০৯০০, হিন্দু ১৩১৭৪, বৌদ্ধ ১৪ এবং অন্যান্য ৪৯।
জলাশয় তেঁতুলিয়া, বেতুয়া ও গঙ্গাপুর নদী এবং দেউলা বিল ও মেঘনা-শাহবাজপুর চ্যানেল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন বোরহানউদ্দিন থানা গঠিত হয় ১৯২৮ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৫ এপ্রিল ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ৯ | ৫৭ | ৫৮ | ৩৫৬৫৭ | ২০৮৪৮০ | ৮৫৮ | ৫০.৯ | ৩৪.৭ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |||
৩.২৭ | ৯ | ১৩ | ৯৬০৪ | ২৯৩৭ | ৫৭.৯৫ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
২৫.৬৬ | ৩ | ২৬০৫৩ | ১০১৫ | ৪৮.১৮ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
কচিয়া ৪৭ | ৭২০৯ | ১৫৭০৩ | ১৫৪৪৮ | ৪০.০০ | ||||
কুতুবা ৫৭ | ৫৮৮৪ | ১১৫৫০ | ১১২৪২ | ৪৩.২৪ | ||||
গঙ্গাপুর ২৮ | ১২৯৯৬ | ১৩৯৫৬ | ১০৫৬১ | ৩০.০১ | ||||
টবগী ৯৫ | ৬৩৩৮ | ১৩৬৪৭ | ১৩২৩৮ | ৩৭.১৩ | ||||
দেউলা ১৯ | ৬১৯৫ | ১০৬৩৮ | ১১৩০৫ | ২৬.৪২ | ||||
পাকশিয়া ৬৬ | ৬৪৩৩ | ১৬৩২৮ | ১৪৯৭৩ | ৩৬.৪৩ | ||||
বড় মানিকা ১৬ | ৭১৭২ | ১৭৩৮৯ | ১৬৮২৪ | ৩৯.৪৩ | ||||
সাচড়া ৭৬ | ৫২৫৪ | ১০৫৬৮ | ১০৫৬৬ | ২৩.১৪ | ||||
হাসান নগর ৩৮ | ৫৬৯৩ | ১০৯৭৭ | ৯৬২০ | ৪৫.৯৪ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ বোরহানউদ্দিন চৌধুরীবাড়ি মসজিদ, বিদ্যাসুন্দরীর দিঘি, হায়দার আলীর বাড়ি, দেউলা তালুকদার বাড়ি, মঙ্গলের দিঘি, সাজির কাচারী, মনিরাম মঠ।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে সুবেদার সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে সচরা-দেউলা গ্রামে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনীর লড়াই হয়। ২২ অক্টোবর পাকবাহিনী তেতুঁলিয়া, বেতুয়া ও দেউলা গ্রামে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ করে। সিদ্দিকুর রহমান সহযোদ্ধাদের নিয়ে দেউলা দিঘির পাড়ে পাকবাহিনীকে আক্রমণ করেন। এ লড়াইয়ে প্রায় অর্ধ-শতাধিক পাকসেনা এবং তাদের সহযোগী থানার ওসি নিহত হয়। ২৯ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা বোরহানউদ্দীন থানা আক্রমণ করে এবং পরে পাকসেনারা গ্রামে ঢুকে নিরীহ জনগণকে নির্বিচারে হত্যা করে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন স্মৃতিফলক ১ (উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনে)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪৫৭, মন্দির ২৫।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৭.২%; পুরুষ ৪০.০%, মহিলা ৩৪.২%। কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪৬, কমিউনিটি বিদ্যালয় ১, কিন্ডার গার্টেন ৪, এনজিও স্কুল ৭০, মাদ্রাসা ১১০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: আব্দুল জববার মহাবিদ্যালয় (১৯৭২), বোরহানউদ্দিন মহিলা ডিগ্রী কলেজ (১৯৯৫), বোরহানউদ্দিন হাইস্কুল (১৯১৭), মির্জাকালু হাইস্কুল (১৯২০), কুতুবা মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯৮৮), বোরহানউদ্দিন আলীয়া মাদ্রাসা (১৯২১)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী মাসিক: পল্লীচিত্র; দেয়ালিকা: আহবান (অনিয়মিত)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, সাহিত্য একাডেমি ১, নাট্যদল ৩, সিনেমা হল ৩, ক্লাব ২০৫, খেলার মাঠ ৫৭।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৬.৩৭%, অকৃষি শ্রমিক ৪.০৯%, শিল্প ০.৩৫%, ব্যবসা ১১.২৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৬৫%, চাকরি ৬.১৪%, নির্মাণ ২.০৫%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৯৮% এবং অন্যান্য ৫.৭১%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৯.৮৯%, ভূমিহীন ৪০.১১%। শহরে ৫৮.৯৬% এবং গ্রামে ৬০.০৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, আলু, বাদাম, ডাল, আখ, পান, সুপারি, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, সরিষা।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, ফুটি, তরমুজ, নারিকেল।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৪৬, গবাদিপশু ১, হাঁস-মুরগি ৩৮, হ্যাচারি ৪৭।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৮৫.৮৭ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৫.৩০ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৬০.২ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা আটামিল, স’মিল, তেলকল।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩০, মেলা ৩। বোরহানউদ্দিন হাট, মির্জাকালু হাট, রানীগঞ্জ হাট ও খয়ের হাট এবং চড়ক মেলা, বোরহানগঞ্জের বটতলা মেলা ও চৈত্র সংক্রান্তি মেলা।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, পাট, পান, সুপারি, মাছ, শাকসবজি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৮.৬৬% (শহরে ২৩.৩৪% এবং গ্রামে ৫.৯৯ %) পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ শাহবাজপুরে গ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৭০.৬৩%, ট্যাপ ০.১১%, পুকুর ২.৮২% এবং অন্যান্য ২৬.৪৪%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২৭.৭৫% (শহরে ৫৩.৭৫% এবং গ্রামে ২৩.০৩%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৬৩.২৪% (শহরে ৩৮.৬৯% এবং গ্রামে ৬৭.৭০%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ৯.০১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৮, পশু হাসপাতাল ১।
এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা। [সৈয়দ মুজতবা আহমদ খান]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বোরহানউদ্দিন উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।