বেঙ্গল পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্ট
বেঙ্গল পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্ট ক্যালকাটা হিস্টরিক্যাল সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত একটি গবেষণা পত্রিকা। ১৯০৭ সালে পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়। দক্ষিণ এশিয়ার সোসাইটি সমূহের মধ্যে ক্যালকাটা হিস্টরিক্যাল সোসাইটি প্রাচীনতম। ১৯০৭ সালের ২৭ এপ্রিল কলকাতার কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ইংরেজ কলকাতা সম্পর্কে তাদের অতীত ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য তৎকালীন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যার ফ্রান্সিস ম্যাকলিয়েনকে সভাপতি করে এ সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।
প্রাচীন কলকাতার স্মৃতি সংরক্ষণ এবং এ শহরের পূর্ণাঙ্গ ও দীর্ঘস্থায়ী ইতিহাসের উপাদান সংগ্রহের প্রচেষ্টা হিসেবে সোসাইটির সদস্যবৃন্দ কলকাতার প্রাচীন প্রতিষ্ঠানসমূহ, ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ ও অট্টালিকাসমূহ সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ওয়াল্টার কে ফারমিঙ্গার ছিলেন পত্রিকাটির প্রথম সম্পাদক। কলকাতা শহরের বাণিজ্যিক এবং অর্থনৈতিক ইতিহাস ছাড়াও এ পত্রিকা শহরের প্রাচীন ভবন, অট্টালিকা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শহরের বিভিন্ন সম্প্রদায় সম্পর্কে প্রবন্ধ প্রকাশের ইচ্ছা প্রকাশ করে।
বেঙ্গল পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্ট শুরু থেকেই ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পীঠস্থান কলকাতা সম্পর্কে ইংরেজদের স্মৃতি সংরক্ষণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। প্রথম দিকের সংখ্যাসমূহে কলকাতার দালানকোঠা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, বাগান, খেলাধুলা, ক্লাব, বারমেড (barmaid), অভিনেত্রীদের জীবন, স্মরণীয় ঘটনাবলি (উদাহরণস্বরূপ, ১৮৪২ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়) গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হয়। অবশ্য বেঙ্গল পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্ট-এর প্রাথমিক বছরগুলির প্রবন্ধসমূহ প্রাচীন বিষয় নিয়ে লিখিত হলেও পাঠকগণ কৌতূহল নিয়েই সেগুলি পড়তেন।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস পাঠক্রম শিক্ষা দেওয়া শুরু করার কারণে জার্নালটির প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন হতে থাকে। অচিরেই জার্নালটি আধুনিক ভারত এবং এশিয়ার ইতিহাসের প্রাতিষ্ঠানিক জার্নাল হিসেবে বিকশিত হয়। এ জার্নাল সম্পাদনার দায়িত্ব ধীরে ধীরে পেশাজীবী ইতিহাসবিদগণ গ্রহণ করেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক নরেন্দ্রকৃষ্ণ সিনহা ও প্রতুলচন্দ্র গুপ্তের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান শিক্ষকবৃন্দ। দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসবিদদের পরিবর্তনশীল ইতিহাস রচনা সম্বন্ধীয় বিষয়গুলি জার্নালে বৈজ্ঞানিকভাবে পরিবেশিত হয়। পত্রিকাটিতে সাধারণত উপনিবেশিক যুগের ইতিহাসের ওপরই অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করা হয়।
এ সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও এটি আধুনিক ভারতীয় ইতিহাসের পাঠক্রম বিকাশের প্রাথমিক ভিত্তিরূপে কাজ করে এবং ইতিহাসবিদগণ তাঁদের রাজনৈতিক ইতিহাসের গন্ডি অতিক্রম করে অর্থনৈতিক জীবন, সামাজিক স্তরবিন্যাস এবং গণ আন্দোলনের ওপর যথোচিত গুরুত্ব আরোপ করেন। যোগেশচন্দ্র সিনহা, নরেন্দ্রকৃষ্ণ সিনহা, অমলেশ ত্রিপাঠী, অশ্বিনী দাশগুপ্ত এবং বিনয়ভূষণ চৌধুরীর মতো পন্ডিতদের প্রথম জীবনের রচনা এ জার্নালে প্রকাশিত হয়।
ভারতীয় ইতিহাসে বিশেষজ্ঞ বিদেশি পন্ডিতগণও নিয়মিতভাবে এ জার্নালে লিখতেন। সাম্প্রতিককালে জার্নালটি অপরাধ, জনমনস্তত্ত্ব, শ্রমিক এবং নারীদের ইতিহাসের পাশাপাশি ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ও সামাজিক কাঠামোর ইতিহাসে ইতিহাসবিদদের মধ্যে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। বেঙ্গল পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্ট কলকাতা শহরের ঐতিহ্যসমৃদ্ধ পান্ডিত্যপূর্ণ ধারা বজায় রেখে চলেছে। এ জার্নালের ১২৫তম সংখ্যা ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয়েছে। [ভাস্কর চক্রবর্তী]