বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বাংলাদেশের জাতীয় এয়ারলাইনস। ১৯৭২ সালে ৪ জানুয়ারি তারিখের রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ১২৬ অনুযায়ী বাংলাদেশ বিমান অধ্যাদেশবলে বাংলাদেশ বিমান কর্পোরেশন নামে একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৭ সালের জুলাই মাসে বিমানকে একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত করা হয়, যদিও এর শতভাগ শেয়ারের মালিকানা এখনো বাংলাদেশ সরকারের।
বিমান বাহিনী কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহূত একটি পুরানো ডাকোটা, ডিসি-৩ বিমান নিয়ে এটি সংগঠিত হয়। গঠনের এক মাসের মধ্যে ডিসি-৩ দিয়ে এর অভ্যন্তরীণ সার্ভিস শুরু হয়। কিছুদিনের মধ্যেই বিমানটি একটি পরীক্ষামূলক উড্ডয়নকালে বিধ্বস্ত হলে বিমান বাংলাদেশ দুটি পুরানো এফ-২৭ উড়োজাহাজ ক্রয় করে। এগুলি শীঘ্রই চট্টগ্রাম এবং সিলেটে চলাচল শুরু করে। ব্রিটিশ ক্যালেডোনিয়ান থেকে ভাড়া করা একটি বিমান দিয়ে ১৯৭২ সালে ৪ মার্চ থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে কয়েকটি বেসরকারি বিমান সংস্থাকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি প্রদানের আগে পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে বিমান-ই ছিল একমাত্র বিমান সংস্থা।
কোনরূপ সহায়-সম্বল ছাড়াই যাত্রা শুরু করার পর এক পর্যায়ে বিমান বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ২৯টি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করতো। তবে উড়োজাহাজ সংকটসহ নানা কারণে বিমান তাদের গন্তব্যসংখ্যা কমাতে বাধ্য হয়েছে। বর্তমানে বিমান ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে বিশ্বের ১৮টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে উড্ডয়ন পরিচালনা করে। এছাড়া দেশের অভ্যন্তরে চারটি গন্তব্যে বিমানের ফ্লাইট চলাচল করে। এগুলি হলো আবুধাবি, বাহরাইন, ব্যাংকক, কলকাতা, দিল্লি, দোহা, দুবাই, ফ্রাঙ্কফুর্ট, হংকং, জেদ্দা, করাচি, কাঠমুন্ডু, কুয়ালালামপুর, কুয়েত, লন্ডন, মাস্কাট, রিয়াদ, রোম এবং সিঙ্গাপুর। দেশের মধ্যে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চলাচল করে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কক্সবাজার বিমান বন্দরে।
বিমানের বর্তমান বহরে চারটি সুপরিসর ডিসি ১০-৩০, দুটি সুপরিসর এয়ারবাস এ-৩১০, একটি বোয়িং ৭৭৭ ও দুটি বোয়িং ৭৩৭ এবং তিনটি এফ-২৮ এক্সিকিউটিভ জেট। এছাড়া এছাড়া আরো চারটি বোয়িং ৭৭৭, চারটি ৭৮৭-৮ এবং দুটি বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজ ক্রয়ের জন্য এরই মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এরমধ্যে ৪৬৩ আসন বিশিষ্ট সুপরিসর বোয়িং ৭৭৭ চারটি ২০১৩ সালে, ১৭৭ আসন বিশিষ্ট বোয়িং ৭৩৭ দুটি ২০১৫ সালে এবং ২৯৪ আসনবিশিষ্ট বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার চারটি ২০১৭ সালে বিমানের বহরে যুক্ত হওয়ার কথা।
বিমান নিজস্ব সহায়ক ব্যবস্থা ও রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধাদি গড়ে তুলেছে। বিমানের নিজস্ব ফ্লাইট ক্যাটারিং সেন্টার, ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, হ্যাঙ্গার, বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ট্রেনিং সেন্টার এবং পোলট্রি কমপ্লেক্স রয়েছে।
এয়ারলাইনসের আসন সংরক্ষণ, নির্গমন নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে কম্পিউটারাইজড হয়েছে। বিমানের অভিজ্ঞ কারিগরগণ বিমানের নিজস্ব উড়োজাহাজসহ ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে বিদেশি এয়ারলাইনসেরও অনেক বিমান মেরামত করে আসছে। [সৈয়দ মোহ. সালেহ উদ্দীন]