বাবুর
বাবুর (১৪৮৩-১৫৩০) ভারতে মুগল বংশের প্রতিষ্ঠাতা। পিতার দিক থেকে আমীর তৈমুর (১৩৩৬-১৪০৫ খ্রি.) এবং মায়ের দিক থেকে চেঙ্গিজ খানের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। ১৪৮৩ খ্রিস্টাব্দে বাবুর তুর্কিস্তানের খোকন্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা উমর শেখ মির্জা ফরগানার অধিপতি ছিলেন। ১৪৯৪ খ্রিস্টাব্দে পিতার মৃত্যুর পর বাবুর অল্প বয়সে ক্ষমতা লাভ করেন। বারবার রাজ্যহারা হয়ে তিনি মধ্যএশিয়া ত্যাগ করেন এবং ১৫০৪ খ্রিস্টাব্দে কাবুল দখল করেন। ১৫০৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি বাদশাহ উপাধি গ্রহণ করেন। ১৫১১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বাবুর প্রায় সমগ্র মধ্য এশিয়ার শাসকে পরিণত হন। উজবেকগণ কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে তিনি ১৫১৪ খ্রি. কাবুলে ফিরে আসেন। ভারতীয় উপমহাদেশ অধিকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষে বাবুর ১৫১৫ খ্রিস্টাব্দে বাজাউর, সোয়াত, ইউসুফজাই উপজাতিদের পরাজিত করেন ও ১৫১৯-২০ খ্রি. ভিরা, শিয়ালকোট, সাঈদপুর এবং ১৫২২ খি. কান্দাহার দখল করেন। সর্বপরি বাবুর ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে লোদী বংশের সুলতান ইবরাহিম লোদীকে পরাজিত করে ভারতে মুগল শাসনের সূচনা করেন।
এসময়ে বাংলার শাসক ছিলেন নাসিরুদ্দীন নুসরত শাহ। বাবুরের কাছে পরাজিত হয়ে আফগান নেতাগণ নুসরত শাহের আশ্রয় প্রার্থী হওয়ায় বাবুর বাংলার শাসকের বিরুদ্ধে অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন। ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে বাবুর গোগরা নদী পর্যন্ত অগ্রসর হন। তিনি মোল্লা মুহাম্মদ মাজাহার নামক একজন দূতকে নুসরত শাহের কাছে পাঠিয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চান। নুসরত স্পষ্ট কোন উত্তর না পাঠিয়ে দূতকে প্রায় এক বছর নিজ দরবারে রাখেন। নুসরত শাহ নিরপেক্ষতা অবলম্বন করেন এবং ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দে প্রচুর উপঢৌকনসহ একজন দূতকে বাবুরের দরবারে প্রেরণ করেন। বাবুর নিরপেক্ষতা প্রদর্শনের জন্য নুসরতের প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং বাংলা আক্রমণের পরিকল্পনা ত্যাগ করেন।
আফগান নেতাগণ বাবুরের বিরুদ্ধে সৈন্য পরিচালনা করে ব্যর্থ হন। বাবুর ত্রিহুত অধিকার করে গঙ্গা ও গন্ডকের সঙ্গম স্থানে বীবন ও বায়েজীদের অধীন আফগানদের পরাজিত করে বাংলার সৈন্যদলের সম্মুখীন হন। বক্সারের শিবির থেকে বাবুর গোগরা নদীর তীর ত্যাগ করার জন্য নুসরত শাহের কাছে দূত পাঠান। নুসরত উত্তর দিতে একমাস দেরি করায় বাবুর পুনরায় দূত পাঠান। অবশেষে যুদ্ধ শুরু হয় এবং বাংলার পদাতিক, অশ্বারোহী ও নৌবাহিনী যথেষ্ট বীরত্ব প্রদর্শন করেও বাবুরের রণকৌশলের কাছে পরাজিত হয়। এ বিজয়ের দ্বারা গোগরা নদীর পূর্বতীরে বাবুরের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কূটনৈতিক কারণে বাবুর বিহার ও অযোধ্যা জয়ের পূর্বে বাংলা আক্রমণ করা সমীচীন মনে করেন নি। এসময়ে বাবুরের শর্তাবলি বাংলার সুলতান মেনে নেন। এর ফলে মুগলদের সরাসরি আক্রমণ থেকে বাংলা রক্ষা পায়। ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে বাবুরের মৃত্যুর পর বাংলা অঞ্চল আপাতত মুগল আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। [গোলাম কিবরিয়া ভূইয়া]