বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন (বিপিসি) বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটানোর জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। এটি দেশের জাতীয় পর্যটন সংস্থা। পর্যটন খাতের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং দেশে-বিদেশে পর্যটন পণ্যের প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে বাংলাদেশের একটি ইতিবাচক ইমেজ তৈরি করার লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭৩ সালে এ সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়। একজন চেয়ারপারসন এবং তিনজন পূর্ণকালীন পরিচালকের সমম্বয়ে গঠিত একটি বোর্ডের তত্ত্বাবধানে সংস্থাটি পরিচালিত হয়।
শুরু থেকেই পর্যটন কর্পোরেশন পর্যটকদের সুযোগ সুবিধার পুনর্বিন্যাস এবং গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থানগুলিতে নতুন নতুন সুবিধা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে। এই সুবিধাগুলির মধ্যে রয়েছে হোটেল, মোটেল, ইয়থ ইন, রেস্টুরেন্ট, ডিউটি ফ্রি দোকান স্থাপন এবং বিভিন্ন পর্যটন স্থাপনাগুলিতে স্থল এবং জলপথে যাতায়াতের সুবিধা চালু করা।
সরকারের বেসরকারিকরণ নীতি অনুসারে কর্পোরেশনের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ইউনিটগুলি বর্তমানে লিজ চুক্তির আওতায় বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি তারা নগরের আশেপাশে দর্শনীয় স্থান কেন্দ্রিক ট্যুর, প্যাকেজ ট্যুর ইত্যাদি পরিচালনা করে। বিমানবন্দরের ট্রানজিট প্যাসেঞ্জারদের জন্য সিটি সাইট সিয়িং ট্যুর এবং ঢাকায় অবস্থানরত অতিথিদের জন্য রিভার ক্রুজ প্যাকেজেরও আয়োজন করে সংস্থাটি। এছাড়া বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন দেশে পর্যটন শিল্পের জন্য মানব সম্পদ উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে। এই লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে কর্পোরেশনের মাধ্যমে জাতীয় হোটেল ও পর্যটন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (এনএইচটিটিআই) প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের বেশিরভাগই দেশে এবং বিদেশে কর্মরত আছে।
পর্যটন খাতের উন্নয়ন এবং দেশে ও বিদেশে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য পর্যটন কর্পোরেশন প্রমোশনাল বুকলেট, পোস্টার, ব্রোশিওর, মানচিত্র ইত্যাদি প্রকাশ করে থাকে। এছাড়া বিপণন কর্মসূচির আওতায় বিপিসি কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছে। বিদেশে বাংলাদেশ মিশন এবং বাংলাদেশ বিমানের বিদেশি শাখাগুলির মাধ্যমে এগুলি প্রচার পাচ্ছে। বিপিসি নিয়মিতভাবে পর্যটনকেন্দ্রিক প্রদর্শনীগুলিতে অংশগ্রহণও করে থাকে।
কক্সবাজার এবং সুন্দরবনকে পৃথিবীর প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের চুড়ান্ত তালিকায় স্থান পাইয়ে দিতেও বাংলাদেশে পর্যটন কর্পোরেশন চেষ্টা করেছে। পর্যটন খাতে উন্নতির জন্য ১৯৯২ সালে ঘোষিত সরকারের জাতীয় পর্যটন নীতিমালার আওতায় সরকার পর্যটনকে শিল্প নীতির ‘তৃতীয় খাত’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এই খাতে ব্যক্তিগত উদ্যোগের পরিপূর্ণ বৃদ্ধি এবং একে উৎসাহ দেয়ার জন্য বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি ‘পর্যটন প্রটেক্টেড এরিয়া’ এবং ‘এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন’ ইতোমধ্যেই তৈরি হয়েছে। এই প্রকল্পগুলির বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেতে পারে। [মোফাজ্জল হোসেন]