বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ
বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ ঢাকার মোহাম্মদপুরে ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতির এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত একটি সংস্থা। প্রতিষ্ঠানটি সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে পুনর্গঠিত হয়েছে। জাতীয় পুষ্টি পরিষদের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিবর্গ, সচিব, ঊর্ধ্বতন কার্যনির্বাহক, নীতিপ্রণেতা, পুষ্টিবিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও বিভাগীয় মহিলা প্রতিনিধিগণ। একটি নির্বাহী কমিটির ওপর এই পরিষদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ন্যস্ত, যার প্রধান হচ্ছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ নির্বাহী কমিটির সদস্যের দায়িত্ব পালন করেন। তদুপরি বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের পুষ্টি প্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি স্থায়ী প্রযুক্তি কমিটিও রয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের লক্ষ্য হলো জাতীয় খাদ্য ও পুষ্টি নীতি প্রণয়ন ও হালনাগাদকরণ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও ইনস্টিটিউটের পুষ্টি পরিকল্পনা অনুমোদন, পুষ্টি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা ও মূল্যায়ন। পরিষদের অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম পুষ্টি তথ্য ও দলিলপত্র সংরক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও প্রশিক্ষণ কোর্সের ব্যবস্থা, পুষ্টি সম্পর্কিত সাধারণ তথ্যাদি প্রচার ও প্রসার এবং পুষ্টি বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রমের জন্য আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ কর্তৃক সম্পন্ন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় কর্মকান্ডে মধ্যে রয়েছে জাতীয় খাদ্যনীতি ও পুষ্টিনীতি বিধিবদ্ধকরণ, জাতীয় পুষ্টিনীতির কর্মপরিকল্পনা প্রস্ত্ততকরণ, বাংলাদেশের পুষ্টি পরিস্থিতির বিবরণী তৈরি, খাদ্যনির্ভর পথ্য-নির্দেশিকা ও সম্ভাব্য পুষ্টিহীনদের জন্য সহায়ক পাঠ্যক্রম প্রণয়ন, শারীরিক বৃদ্ধির হিসাব রাখার জন্য গ্রোথ কার্ডের (growth card) ব্যবস্থা এবং শিশুদের ওজন পরিমাপের জন্য দন্ডমাপনি (bar scale) উদ্ভাবন। বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ দেশের সমন্বিত পুষ্টি পরিকল্পনা নীতি তৈরি এবং শিক্ষার সকল স্তরের জন্য পুষ্টি সম্পর্কিত পাঠ্যক্রম উদ্ভাবন করেছে। তদুপরি এই পরিষদ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষক এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) সংস্থার মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরও পুষ্টির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা চালু করেছে। এটি ১৯৯৮ সাল থেকে প্রতি বছর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় পুষ্টিসপ্তাহ পালনের আয়োজন করে থাকে। বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে সাহায্যকারী অথবা দাতাগোষ্ঠীকে পুষ্টির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা চালু করেছে। এটি খাদ্য ও পুষ্টির বিভিন্ন বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনার, কর্মশালা ও সম্মেলনের ব্যবস্থা করে থাকে এবং বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধ্যমে পুষ্টি সম্পর্কিত তথ্যাদি প্রচার করে। পরিষদের মুখপত্র হিসেবে রয়েছে অর্ধবার্ষিক South Asian Journal of Nutrition।
বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের সচিবালয় পরিষদ এবং এর বিভিন্ন কমিটিকে দাপ্তরিক কার্যক্রমগত ও প্রযুক্তিগত সহায়তা যুগিয়ে থাকে। সচিব এই পরিষদের নির্বাহী প্রধান; ১৬ জন কর্মকর্তা ও ১৩ জন কর্মচারী তাঁকে সহায়তা করেন। এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদ সচিবালয় নিজস্ব বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে এবং অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। [মোহাম্মদ আবদুল মান্নান]