বদরগঞ্জ উপজেলা
বদরগঞ্জ উপজেলা (রংপুর জেলা) আয়তন: ৩০১.২৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°৩২´ থেকে ২৫°৪৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৫৬´ থেকে ৮৯°১০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে তারাগঞ্জ, রংপুর সদর ও সৈয়দপুর উপজেলা, দক্ষিণে নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) ও পার্বতীপুর উপজেলা, পূর্বে রংপুর সদর ও মিঠাপুকুর উপজেলা, পশ্চিমে পার্বতীপুর উপজেলা।
জনসংখ্যা ২৫৭৮৪৬; পুরুষ ১৩২৬১১, মহিলা ১২৫২৩৫। মুসলিম ২২৫৫০২, হিন্দু ৩০০৭৩, বৌদ্ধ ১৮৯১, খ্রিস্টান ৬৬ এবং অন্যান্য ৩১৪।
জলাশয় প্রধান নদী: যমুনেশ্বরী, চিরনাই। হাড়িভাঙ্গা বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন বদরগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৭৯৩ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১০ | ৬৪ | ১২০ | ৩১৯৭৪ | ২২৫৪৭২ | ৮৪৬ | ৪৯.৩ | ৩৬.৫ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |||
৬.৭৯ | ৯ | ১২ | ২৩৮৪২ | ৩৫১১ | ৫৩.৫৭ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
১১.৭১ | ৭৫ | ৮১৩২ | ৬৯৪ | ৩৬.১৪ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
কুতুবপুর ৬৩ | ৭১৮৯ | ১০৫৬২ | ১০০২৩ | ২৯.৬৯ | ||||
গোপালপুর ৩১ | ৫৪৯০ | ১৩৫৭৫ | ১২৬২৯ | ৩৮.৩০ | ||||
গোপীনাথপুর ৩৭ | ৭২৬৪ | ১১৪৭৬ | ১১০৪৮ | ৪১.৭৯ | ||||
দামোদরপুর ২৫ | ৮৩৯৭ | ১২৪৯৫ | ১১৬৩৭ | ৩২.২৩ | ||||
বদরগঞ্জ ১২ | ৮০২৩ | ৮১৪৯ | ৭৬৭৫ | ৩৩.৩৭ | ||||
বিষ্ণুপুর ১৮ | ৮০৬৬ | ১৪০২৮ | ১৩৩৮২ | ৩৩.২৩ | ||||
মধুপুর ৭৫ | ৭৩৪০ | ১৪৪২৪ | ১৩৪২৪ | ৩৮.৪৭ | ||||
রাধানগর ৮২ | ৫৬১৩ | ১০৮৯৭ | ১০৫৮০ | ৩৪.৬৭ | ||||
রামনাথপুর ৮৮ | ৮৭০০ | ১৩১৩৮ | ১২৮১৩ | ৪৯.১৬ | ||||
লোহানীপাড়া ৬৯ | ৮৩৬৬ | ১১৩৯০ | ১০৬৫৯ | ৩১.২২ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ রাধানগর ইউনিয়নে ৯ গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদ (মুগল আমল), কুতুবপুর ইউনিয়নে কুতুব শাহের মাযার, বখতিয়ারের ডাঙ্গা, মানসিংহপুরে ভীমের গড়, মাদাই খামার, দিলালপুর জমিদার বাড়ি, বারোয়ারী কালীমন্দির (১৩০৫ বঙ্গাব্দ), শ্রী শ্রী প্রান্তেশ্বরী কালীমন্দির (১৩১০ বঙ্গাব্দ), গোপীনাথপুর আশ্রম ও মন্দির (১৩৩৫ বঙ্গাব্দ), জলুবার ভাঙা মন্দির, ঘাটাবিল মন্দির, বুড়ির মন্ডপ, শেকেরহাট শিবমন্দির।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি একাদশ শতাব্দীতে বদরগঞ্জ ছিল বরেন্দ্রভূমির অন্তর্গত। বরেন্দ্রভূমির রাজা দ্বিতীয় মহীপাল অত্যন্ত নির্মমভাবে খাজনা আদায় করতেন। এতে কৈবর্ত (মৎস্যজীবী) সম্প্রদায় কৈবর্ত বিদ্রোহ (১০৭১) ঘোষণা করে। ইংরেজ বিরোধী ফকির সন্ন্যাসী এবং কৃষক প্রজা বিদ্রোহে (১৭৬০-১৮১২) এ অঞ্চলের মানুষ অংশগ্রহণ করে। বদরগঞ্জ থানায় নীলকরদের অনেক কুঠি ছিল, যেমন হাড়িয়ার কুঠি, চান্দামারীর কুঠি। শোনা যায় বদরগঞ্জের কৃষকদের মধ্যে নীল বিদ্রোহ (১৮৫৯-১৮৬২) দেখা দিয়েছিল। এছাড়াও দিনাজপুরের বিপ্লবী হাজী দানেশের নেতৃত্বে বর্গাচাষীদের স্বার্থে তেভাগা আন্দোলন সংঘটিত হয়। এ আন্দোলনে যোগদান করেন দরাজউদ্দিন মন্ডল, কমরেড জিতেন দত্ত, ছয়েন উদ্দিন প্রমুখ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ২ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল বদরগঞ্জকে মুক্তাঞ্চল ঘোষণা করা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা রেললাইন উঠিয়ে পাকসেনাদের চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করে। ১৭ এপ্রিল পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা এ উপজেলায় ব্যাপক গণহত্যা চালায় এবং খালিসা হাজীপুর, বুজরুক হাজীপুর, ঘাটাবিল, রামনাথপুর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি ২ (ঝাড়ুয়ার বিল ও পদ্মপুকুর)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩১৫, মন্দির ৩২, গির্জা ৬, তীর্থস্থান ১।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৮.২%; পুরুষ ৪২.৮৩%, মহিলা ৩৩.৩%। কলেজ ৭, এসএসসি প্রোগ্রাম কেন্দ্র ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৬১, স্যাটেলাইট ৯, মাদ্রাসা ৪১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বদরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, বকশীগঞ্জ হাইস্কুল এন্ড কলেজ, রাধানগর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২০)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: দৈনিক রংপুরের কাগজ; ম্যাগাজিন: বাতায়ন (বাংলা ১৪০৯), সাঁকো (২০০৬)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৯, নাট্যদল ৬, নাট্যমঞ্চ ১, মহিলা সংগঠন ৩, সিনেমা হল ২।
গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা শ্যামপুর সুগার মিল, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৯.৫৪%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৩২%, শিল্প ০.৪৮%, ব্যবসা ১৩.৮%, পরিবহন ও যোগাযোগ ২.২৫%, চাকরি ৪.৫৮%, নির্মাণ ০.৭৫%, ধর্মীয় সেবা ০.২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৭% এবং অন্যান্য ৫.০১%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪১.৪২%, ভূমিহীন ৫০.৫৮%। শহরে ৩৬.৫৬% এবং গ্রামে ৫১.২৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আলু, সরিষা, তামাক, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, তিল, ডাল।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কলা, জাম, জামরুল, আতা।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৭৯ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২১ কিমি, কাঁচারাস্তা ৮৬৬ কিমি; রেলপথ ১৯.৩১ কিমি; নৌপথ ২৯.৭০ নটিক্যাল মাইল।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা চিনিকল, ধানকল, আটাকল, চিড়াকল, আইসক্রীম ফ্যাক্টরি, ওয়েল্ডিং কারখানা, স্টিল কারখানা, ইটভাটা, হিমাগার।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, দারুশিল্প, শতরঞ্জি শিল্প, বিড়ি শিল্প, বুননশিল্প, বাঁশের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৪৩, মেলা ৭। বদরগঞ্জ হাট, লালদীঘি হাট, কুতুবপুর হাট, বাগমারা হাট, ফরিদপুর হাট, বকশীগঞ্জ হাট, বদরগঞ্জ হাট, মোমিনপুর হাট, সেকের হাট, টেকের হাট, পাঠানের হাট, চিলাপাকের হাট, শ্যামপুরের হাট, নাগের হাট এবং বদরগঞ্জ মেলা, বকশীগঞ্জ মেলা, শেখেরহাটের বারুণী মেলা, করতোয়া মেলা, বুড়ির পার্বণ মেলা, চরক মেলা ও দুর্গাপূজার মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, গম, আম, পাট, শাকসবজি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১১.৭৭% (শহরে ৯.৭২% এবং গ্রামে ২৬.২১%) পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৪.৬২%, ট্যাপ ০.৬৮%, পুকুর ০.৩৩% এবং অন্যান্য ১৪.৩৭%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলায় ৭.৯৩% (শহরে ২১.৪১% এবং গ্রামে ৬.০২%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৮.৮৯% (শহরে ২৬.৯৩% এবং গ্রামে ১৭.৭৫%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৭৩.১৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১০, ক্লিনিক ১।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৭৭০, ১৯৪৪ এবং ১৯৪৭ সালে বদরগঞ্জে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। কলেরা ও গুটি বসন্ত মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়ে অসংখ্য প্রাণহানি ঘটায়। ১৮৯৭ সালে এক ভূমিকম্পে বদরগঞ্জে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
এনজিও ব্র্যাক, আশা, আরডিআরএস, সেবা, আর্তের আশা। [আবদুস সাত্তার]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বদরগঞ্জ উপজেলার সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।