ফ্লি
ফ্লি (Flea) Siphonaptera বর্গের ডানাবিহীন এক দল পরজীবী পতঙ্গ। এদের আকার ক্ষুদ্র (১-৮ মিমি), দেহ দুপাশ থেকে অতিমাত্রায় চাপা। সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের দেহের রং বাদামি, শরীরে পশ্চাদমুখী কাঁটা থাকে। পা বেশ লম্বা এবং লাফিয়ে চলার উপযোগী। মুখোপাঙ্গ চোষণক্ষম। চোখ থাকতেও পারে নাও থাকতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক এই কীট পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীরে বহিঃপরজীবী হিসেবে থাকে এবং পোষকদের দেহ থেকে রক্ত চুষে খায়। এই পরজীবীর ২১৯টি গণে প্রায় ২,৫০০ প্রজাতির বর্ণনা হয়েছে। বাংলাদেশে রয়েছে প্রায় এক ডজন প্রজাতির ফ্লি।
পৃথিবী জুড়েই এদের দেখা যায়, তবে অনেক প্রজাতির বিস্তৃতি সীমিত। যেমন, প্লেগ রোগের জীবাণুবাহী ফ্লি Xenopsylla বাংলাদেশসহ গ্রীষ্মমন্ডলীয় দেশে এবং নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের উষ্ণতর এলাকায় দেখা যায়। X. cheopis প্লেগ রোগের জীবাণু (Yersinia pestis) এবং টাইফাসের জীবাণু (Rickettsia typhi) বহন করে। আরও কতক ফ্লি যেমন, Ctenocephalides ফিতাকৃমির (cestodes) মধ্যপোষক।
ফ্লি ব্রুসেলোসিস (Brucellosis) ও টুলারেমিয়া (Tularemia) রোগের বিস্তার ঘটাতে পারে। জিগার ফ্লি (Tunga penetrans) মানুষের পায়ের পাতা ছিদ্র করে ভিতরে প্রবেশ করে।
ফ্লি-র কতকগুলি প্রজাতি দংশনের মাধ্যমে যথেষ্ট বিরক্তি ঘটায়। যেসব ফ্লি বাংলাদেশে দেখা যায় তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিড়ালের ফ্লি (Ctenocephalides felis), কুকুরের ফ্লি (C. canis) ও মানুষের ফ্লি (Pulex irritans)। দেখা গেছে, সাধারণত ১০ বছরের কমবয়সীরা এই কীটের কামড়ে বড়দের তুলনায় বেশি কষ্ট পায়।
বাংলাদেশে ইদানিং ফ্লি-বাহিত প্লেগ রোগের কোন ঘটনা ঘটে নি। ১৯৯৪ সালে ভারতে প্লেগ দেখা দিলে বাংলাদেশে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছিল, ফলে এখানে কোন প্লেগ দেখা দেয় নি। [হুমায়ুন রেজা খান]
আরও দেখুন প্লেগ।