পন্নী, ওয়াজেদ আলী খান
পন্নী, ওয়াজেদ আলী খান (১৮৭১-১৯৩৬) জমিদার, সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ। ডাক নাম চাঁদ মিয়া। স্থানীয় জনগণের নিকট তিনি আটিয়ার চাঁদ নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি টাঙ্গাইল জেলার করটিয়া গ্রামে ১৮৭১ সালে সম্ভ্রান্ত পন্নী জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম হাফেজ মাহমুদ আলী খান পন্নী। গৃহশিক্ষকের নিকট শৈশবশিক্ষা গ্রহণ; নিজের প্রচেষ্টায় আরবি, ফারসি, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় অসামান্য পান্ডিত্য অর্জন করেন। ১৮৯২ সালে তাঁর পিতার পৃষ্ঠপোষকতায় কবি মুহম্মদ নঈমউদ্দীন কর্তৃক চার খন্ডে ফতোয়ায়ে আলমগীরী-র অনুবাদ করা হয়। ওয়াজেদ আলী এ কাজে শরিক হন। ১৯১৩ সালে তাঁর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহর সভাপতিত্বেব করটিয়ায় ‘মুসলিম এডুকেশন কনফারেন্স’ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯১৯ সালে তিনি করটিয়ায় ‘হাফেজ মাহমুদ আলী খান হাই স্কুল’ স্থাপন করেন। তিনি স্ত্রীর নামানুসারে করটিয়াতে ‘রোকেয়া আলিয়া মাদ্রাসা’ প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি ময়মনসিংহ জেলা কংগ্রেস কমিটি ও জেলা খিলাফত কমিটির সভাপতি ও নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯২১ সালে তিনি খিলাফত আন্দোলন এ যোগ দেন এবং আইন অমান্য করার অভিযোগে একই বছর ডিসেম্বর মাসে গ্রেফতার ও ময়মনসিংহ জেলে অন্তরীণ হন।
অধ্যক্ষ ইব্রাহিম খাঁর সহযোগিতায় ১৯২৬ সালের জুলাই মাসে তিনি নিজ গ্রাম করটিয়ায় একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন এবং পিতামহ সা’দত আলী খান পন্নীর নামানুসারে এর নামকরণ করেন ‘সা’দত কলেজ’। তিনি অত্যন্ত দানশীল ছিলেন এবং প্রত্যহ সকালে স্বহস্তে দরিদ্রদের দান করতেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি সকলের খোঁজ-খবর নিতেন। ওয়াজেদ আলী খান জমিদারির বার্ষিক আয়ের শতকরা ২০ ভাগ শিক্ষাবিস্তার ও জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করতেন। তাঁর জমিদারিতে প্রজাপীড়ন ছিল না, বরং দুর্ভিক্ষ ও বন্যায় খাজনা মওকুফ করার ব্যবস্থা ছিল। অসাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন চাঁদ মিয়া হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সৌহার্দ্য স্থাপনের প্রচেষ্টায় অসামান্য অবদান রেখেছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য তিনি ওয়াক্ফ রাহেলিল্লাহ করে যান। তিনি তাঁর জমিদারি ’সেরেস্তায় শরিয়ত’ বিভাগ নামক একটি আলাদা বিভাগের মাধ্যমে প্রজাদের মধ্যে ইসলাম প্রচারের ব্যবস্থা করেন।
প্রায় ৭০০ আলেম এ প্রচার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি ব্যক্তিজীবনে পত্নী রোকেয়া এবং নওয়াব স্যার সলিমুল্লাহ কর্তৃক প্রভাবিত ছিলেন। ১৯৩৬ সালে ওয়াজেদ আলী খান পন্নীর মৃত্যু হয়। [মীর শামসুর রহমান]