পঞ্জিকা
পঞ্জিকা বছরের প্রতিদিনের তারিখ, তিথি, শুভাশুভ ক্ষণ, লগ্ন, যোগ, রাশিফল, বিভিন্ন পর্বদিন ইত্যাদি সংবলিত গ্রন্থ। একে পঞ্জী বা পাঁজিও বলা হয়। প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যে একে বলা হয়েছে ‘পঞ্চাঙ্গ’। ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও এটি এই নামে পরিচিত। এর কারণ এতে বার, তিথি, নক্ষত্র, যোগ ও করণ প্রধানত এই পাঁচটি অঙ্গ থাকে। বাংলায় অবশ্য এটি পঞ্জিকা নামেই সুপরিচিত।
সভ্যতা বিকাশের শুরু থেকেই সমাজসচেতন ব্যক্তিদের চিন্তা-চেতনায় কালবিভাগের ধারণাটি আসে। প্রয়োজনের তাগিদে তখন বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন উপায়ে বছর, মাস, দিন ও তারিখ গণনার কৌশল আবিষ্কৃত হয়। কালক্রমে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনের পাশাপাশি পূজা-পার্বণের সময়-নিরূপণও পঞ্জিকা প্রণয়নের অন্যতম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।
কালনিরূপণে বিভিন্ন দেশে ভিন্নরকম পদ্ধতি ব্যবহূত হয়েছে। বৈদিক যুগের ঋষিরা বিভিন্ন ঋতুতে নানারকম পূজা-পার্বণ করতেন। সে কারণে তাঁরা বিশেষ ঋতুবিভাগের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভব করেন। এসব উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তাঁরা ঋতুভিত্তিক বছর হিসেব করে বছরকে উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়ন এই দুভাগে ভাগ করতেন। সূর্য উত্তরদিকে আগমন করা থেকে উত্তরায়ণ এবং দক্ষিণদিকে যাত্রা করা থেকে দক্ষিণায়ন গণনীয় হতো। প্রাচীন মনীষিগণ বছরকে বারো ভাগে বিভক্ত করেন, যেমন: তপঃ, তপস্যা, মধু, মাধব, শুক্র, শুচি, নভস্, নভস্য, ইষ, ঊর্জ, সহস্ ও সহস্য। তপঃ থেকে শুচি পর্যন্ত উত্তরায়ণ এবং নভস্ থেকে সহস্য পর্যন্ত দক্ষিণায়ন। অনুমান করা হয় যে, এরূপ সময়বিভাগ যর্জুবেদের কালে (১৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে) প্রচলিত ছিল। তিথির প্রচলন হয় অনেক পরে। শুধু সেই সময়কালে পূর্ণিমা, অমাবস্যা ও অষ্টকা ব্যবহূত হতো। কৃত্তিকা নক্ষত্র থেকে গণনা করে ২৭টি বা ২৮টি নক্ষত্রে ভ-চক্রকে বিভক্ত করা হতো। এটাই এতদঞ্চলের পঞ্জিকা গণনার আদিরূপ। বৈদিক সাহিত্যে ফাল্গুনী পূর্ণিমার উল্লেখ পাওয়া যায়। এতে অনুমিত হয় যে, তখন চান্দ্রমাস গণনার প্রচলন ছিল, যা পূর্ণিমান্ত মাস নামে পরিচিত।
সময়ের বিবর্তনে এবং মানুষের প্রয়োজনে অধিকতর বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে পঞ্জিকা প্রবর্তিত হয়। ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের কাছাকাছি এ জাতীয় পঞ্জিকায় বছর আরম্ভ হতো উত্তরায়ণ দিবস থেকে এবং তাতে ১২টি চান্দ্রমাস ব্যবহূত হতো। এই পঞ্জিকায় ৩০টি তিথি এবং ২৭টি নক্ষত্র গণনার নিয়ম ছিল। তখন প্রতি পাঁচ বছরে একটি যুগ গণনা করা হতো এবং এক যুগ পরপর এই পঞ্জিকা গণনার পদ্ধতি আবর্তিত হতো। ওই সময় সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম তিথ্যন্ত প্রভৃতি কাল গণনার পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়নি। মাত্র মধ্যমমানে প্রতিদিন এক তিথি এক নক্ষত্র এই হিসেবে তিথ্যাদি নির্ণয় করা হতো এবং মাঝে মাঝে এক-একটি তিথি হিসাব থেকে বাদ দেওয়া হতো। পঞ্চবর্ষাত্মক যুগ ব্যতীত কোন অব্দ গণনার প্রথা তখনও প্রবর্তিত হয়নি। দেড় হাজার বছর ধরে কাল গণনা ও পূজা-পার্বণের সময় নিরূপণের কাজে এরূপ বেদাঙ্গজ্যোতিষ পঞ্জিকা খুবই সমাদৃত ছিল।
পঞ্জিকার উন্নতি সাধনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা গবেষণা চালাতে থাকেন এবং খ্রিস্টীয় ৪র্থ বা ৫ম শতকে তাঁরা সূক্ষ্ম গণনার কৌশল আয়ত্ত করেন। এসব বিষয়ে যাঁরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তাঁরা হলেন আর্যভট্ট, বরাহমিহির, ব্রহ্মগুপ্ত প্রমুখ। তাঁরা পঞ্জিকার গণনাকে জ্যোতির্বিদ্যার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং তিথ্যাদির সূক্ষ্ম কাল গণনার সূত্রাদি দ্বারা দৈনিক গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান, লগ্ন, ক্ষণ, তিথি প্রভৃতির পূর্তিকাল পঞ্জিকার মধ্যে পরিবেশনের ব্যবস্থা করেন। এতে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সহজেই পঞ্জিকা থেকে পাওয়া যেত। এক্ষেত্রে সূর্যসিদ্ধান্ত জ্যোতির্বিদ্যার একখানি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও মূল্যবান গ্রন্থ। এটিকে আধুনিক পঞ্জিকার জনক বলা যায়। পরে সূর্যসিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই পঞ্জিকার সবকিছু গণনা করা হতো। পঞ্জিকার মধ্যে তখন স্থান পেত বার, তিথি, নক্ষত্র, যোগ ও করণযুক্ত প্রতিদিনের পঞ্চাঙ্গ এবং তা তালপাতায় লিপিবদ্ধ করে গণকঠাকুর বা ব্রাহ্মণরা বছরের প্রারম্ভে গ্রামে-গঞ্জে গিয়ে মানুষদেরকে অবহিত করতেন বা জনগণের সুবিধার্থে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এর অনুলিপি সংরক্ষণ করতেন। এসবের ভিত্তিতে পূজা-পার্বণাদি বা ধর্মকৃত্য সাধনের কালও নির্ণয় করা হতো। ১৪০৬ বঙ্গাব্দের ৪ শ্রাবণ (১৯ জুলাই, ১৯৯৯) তারিখের লোকনাথ ডাইরেক্টরী পঞ্জিকা থেকে পঞ্চাঙ্গের লিখনপদ্ধতি উদ্ধৃত করা হলো:
এখানে প্রথম স্তম্ভে ওপর থেকে নিচের দিকের সংখ্যাগুলি যথাক্রমে বার, তিথি, দং (দন্ড), পল ও বিপল নির্দেশ করে। এ হিসেবে ২ অর্থ সোমবার, ৭ অর্থ সপ্তমী তিথি, ৫৬ দং, ৩৩ পল ও ৩৭ বিপল। পঞ্জিকার ভাষায় একে প্রকাশ করা হয় দং ৫৬/৩৩/৩৭ রা এভাবে। ঘণ্টার হিসাবে এটি লেখা হয় ঘ ৪/১১/৩৭ এভাবে। অর্থাৎ এর দ্বারা বোঝায় যে, সন্ধ্যা থেকে ৪ ঘণ্টা ১১ মিনিট ৩৭ সেকেন্ড পর্যন্ত সপ্তমী তিথির স্থায়িত্ব, পরে অষ্টমী তিথির আরম্ভ। উল্লেখ্য, ৬০ দন্ডে হয় ২৪ ঘণ্টা।
দ্বিতীয় স্তম্ভের প্রথম সংখ্যাটি নক্ষত্রনির্দেশক। নক্ষত্র হচ্ছে অশ্বিনী, ভরণী, কৃত্তিকা ইত্যাদি ২৭টি। প্রত্যেকটির নির্দিষ্ট নম্বর আছে। ১৩ সংখ্যাটি এখানে হস্তা নক্ষত্রের নির্দেশক। এর সময়কাল দং ৪১/২৩/৪ রা ঘ ১০/৭/২৪। তৃতীয় স্তম্ভের প্রথম সংখ্যাটি বিভিন্ন যোগ নির্দেশ করে। যোগ হচ্ছে মাহেন্দ্র, বিষ্কুম্ভ ইত্যাদি ২৭টি এবং প্রত্যেকটিরই নিজস্ব নম্বর আছে। এখানে ২০ নম্বরে বোঝাচ্ছে শিবযোগ এবং এর সময়কাল হচ্ছে দং ৪৬/১৫/১২ রা ঘ ১২/৪/১৫। এ সময়ের করণ হচ্ছে গর (পঞ্চম করণ), এর পরে বণিজ করণ এবং দং ৫৬/৩৩/৩৭ রা ঘ ৪/১১/৩৭ গতে বৃষ্টিকরণ।
এছাড়া বাংলাদেশের পঞ্জিকায় প্রত্যেক পৃষ্ঠার বাম পাশে চন্দ্র কোনো রাশিতে রয়েছে তা কথায় লেখা থাকে। যেমন উপর্যুক্ত পৃষ্ঠায় লেখা রয়েছে ‘চন্দ্রো কন্যায়াং’ অর্থাৎ চন্দ্র কন্যা রাশিতে আছে। এছাড়াও কয়েকটি স্তম্ভ থাকে, যেমন: র ৩/১/৪১/১২, চং ৫/১৪/৩৮/০, মং ৬/১১/২০/৫৬, বু ৩/৩/১৮/৪৯, বৃ ০/১০/২৫/৪৬, শু ৪/৫/৫৭/১৫, শ ০/২১/৫/৩৩, রা ৩/২২/১১/৪১ এবং কে ৯/২২/১১/৪১। প্রথম স্তম্ভটি ব্যাখ্যা করলে পাওয়া যায়: র মানে রবি, ৩ মানে কর্কট রাশি এবং সময় হচ্ছে ১ ডিগ্রি ৪১ মিনিট ১২ সেকেন্ড। অর্থাৎ রবিগ্রহটি ওই তারিখে এক ডিগ্রি একচল্লিশ মিনিট বারো সেকেন্ডে কর্কট রাশিতে ছিল। অনুরূপভাবে চন্দ্র, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি, রাহু ও কেতু কোন রাশির কত ডিগ্রি, মিনিট ও সেকেন্ডে রয়েছে তা অঙ্কের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে।
পঞ্জিকায় গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান সংকেতের মাধ্যমে দেখানো হয়, যেমন: র(৭), চং(১৩), মং(১৫), বু(৭), বৃ(১), শু(১০), শ(২), রা(৯) ও কে(২২)। এখানে র মানে রবি এবং ৭ মানে ৭ নম্বর নক্ষত্র পুনর্বসু, অতএব র(৭) দ্বারা বোঝায় রবিগ্রহটি রয়েছে পুনর্বসু নক্ষত্রে; অনুরূপভাবে চন্দ্র রয়েছে হস্তা নক্ষত্রে ইত্যাদি।
প্রকাশ থাকে যে, সিদ্ধান্ত জ্যোতিষশাস্ত্রের উদ্ভবের আগে পঞ্জিকায় দৈনন্দিন গ্রহাবস্থান লেখা হতো না। জ্ঞান বিকাশের ফলে পঞ্চাঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে গ্রহসঞ্চারকালও পঞ্জিকায় লিপিবদ্ধ হতে থাকে। বিগত ১০০ বছরের অধিককাল যাবৎ বাংলা পঞ্জিকা মুদ্রিত হচ্ছে। পঞ্জিকায় এখন ফলিত জ্যোতিষের অনেক কিছু অর্থাৎ গ্রহ-নক্ষত্রের দৈনিক অবস্থানসমূহও পাওয়া যাচ্ছে। আধুনিক পঞ্জিকায় ফলিত জ্যোতিষ বিশেষ স্থান দখল করেছে। জনগণের চাহিদার দিকে দৃষ্টি রেখে এখন পঞ্জিকায় বর্ষফল, মাসফল, রাষ্ট্রফল, দৈনিক রাশিফল প্রভৃতি মুদ্রিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের পঞ্জিকার ইতিহাস অনেক প্রাচীন। প্রাচীনের মধ্যে স্মার্ত রঘুনন্দন সম্পাদিত নবদ্বীপ পঞ্জিকার নাম পাওয়া যায়। রঘুনন্দনের পরে এর গণনার দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে রামরুদ্র বিদ্যানিধি (রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সময়ে) এবং বিশ্বম্ভর জ্যোতিষার্ণব। কিছুদিন পরে এর গণনাকার্য বন্ধ হয়ে যায়। ইংরেজ আমলে কৃষ্ণনগরের জনৈক সমাহর্তার প্রচেষ্টায় বিশ্বম্ভর পুনরায় পঞ্জিকা প্রকাশের কার্যক্রম আরম্ভ করেন। এটি তখন পুথির আকারে লিখিত হতো। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে পঞ্জিকাটি মুদ্রিতাকারে প্রকাশিত হতে থাকে। তখন এটিই ছিল প্রথম মুদ্রিত পঞ্জিকা। পরবর্তীকালে ১২৯৭ বঙ্গাব্দ (১৮৯০) থেকে বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা প্রকাশিত হতে থাকে। অনুরূপ পঞ্জিকা বোম্বাই ও পুনা থেকেও প্রকাশিত হয়। পঞ্জিকার সর্বশেষ সংস্কার করা হয় ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের তত্ত্বাবধানে। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহার সভাপতিত্বে একটি পঞ্চাঙ্গ শোধন সমিতি (ক্যালেন্ডার রিফর্ম কমিটি) গঠন করে প্রচলিত পঞ্জিকাগুলির গণনাপদ্ধতির নিরীক্ষা ও প্রয়োজনবোধে সংস্কারের জন্য সুপারিশ করা হয়। এই সমিতির পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে পঞ্জিকা প্রকাশনার দায়িত্ব গ্রহণ করা হয়। সে মতে ভারতে ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে পঞ্জিকা প্রকাশিত হতে থাকে। বর্তমানে তা ১২টি ভাষায় প্রকাশিত হচ্ছে। বাংলা পঞ্জিকায় বাংলা, ইংরেজি ও হিজরি সনের তারিখ, মাস ও বছরের উল্লেখ থাকে।
বাংলা বর্ষপঞ্জি গণনার সনাতন নিয়মে কোন বছরের কোন মাস কত দিনে হবে তা আগে থেকে নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তাছাড়া উক্ত গণনাপদ্ধতিতে কোন মাস ২৯ দিনে আবার কোন মাস ৩২ দিনে হয়ে থাকে। এ বিষয়টিকে জীবনের সর্বত্র বাংলা সন ব্যবহারের প্রধান অন্তরায় হিসেবে বিবেচনা করে ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমীর উদ্যোগে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র সভাপতিত্বে একটি সংস্কার কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত সংস্কার কমিটির প্রস্তাব অনুসারে বছরের প্রথম ৫ মাস ৩১ দিনের এবং পরবর্তী ৭ মাস ৩০ দিনের করা হয়।
১৯৮৮ সাল থেকে সরকারিভাবে খ্রিস্টীয় সনের পাশাপাশি বাংলা সন লেখার রীতি চালু হয় এবং তখন থেকে শহীদুল্লাহ্ কমিটির প্রস্তাবিত গণনাপদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক জীবনের সঙ্গে বাংলা বর্ষপঞ্জির সম্পৃক্তির বিষয়টি মনে রেখে এবং প্রস্তাবিত গণনাপদ্ধতিকে সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত ও গ্রেগরীয় বর্ষগণনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে একই বছর বাংলা একাডেমীতে একটি শক্তিশালী বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। পঞ্জিকাকে আরও উন্নত ও ত্রুটিমুক্ত করার জন্য ১৯৯৫ সালে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রেরণায় একটি ‘টাস্ক ফোর্স’ গঠন করা হয়। পঞ্জিকা সংস্কারের জন্য তাদের সুপারিশ নিম্নরূপ: ১. সাধারণভাবে বাংলা বর্ষপঞ্জি বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত প্রতিমাস ৩১ দিনে এবং আশ্বিন থেকে চৈত্র পর্যন্ত প্রতিমাস ৩০ দিনে গণনা করা হবে; ২. গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির অধিবর্ষে যে বাংলা বছরের ফাল্গুন মাস পড়বে, সেই বাংলা বছরকে অধিবর্ষরূপে গণ্য করা হবে এবং সেই বছরের ফাল্গুন মাস ৩১ দিনে গণনা করা হবে; ৩. ১৪০২ সালের ১ বৈশাখ থেকে এটি কার্যকর হবে এবং তারিখ পরিবর্তনের সময় হবে আন্তর্জাতিক রীতি অনুসারে রাত ১২টায়। জনকল্যাণে গৃহীত এ পদক্ষেপ সর্বত্র প্রশংসিত হয়।
পঞ্জিকার ক্ষেত্রে চাঁদের তিথি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পূর্ণ চান্দ্রমাসের স্থায়িত্ব ২৯ দিন ১২ ঘণ্টা, ৪৩ মিনিট ১২ সেকেন্ড বা ২৯.৫ দিন। চাঁদ ৩৬০ ডিগ্রি অতিক্রম করে ২৯.৫ দিনে, তা হলে এক দিনে অতিক্রম করে ৩৬০ ÷ ২৯.৫ = ১২.২০ ডিগ্রি, অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টায় অতিক্রম করে ১২.২০ ডিগ্রি। তার মানে এক দিনের চাঁদ পশ্চিম দিগন্তের ১২.২০ ডিগ্রি ওপরে ওঠে। আবার চাঁদ যখন অস্ত যায় তখন ১ ডিগ্রি অতিক্রম করতে সময় লাগে ৪ মিনিট, তা হলে ১২.২০ ডিগ্রি অতিক্রম করতে লাগে ১২.২০ x ৪ = ৪৮.৮০ মিনিট এবং সর্বোচ্চ ৫০.৫২ মিনিট বা ৫১ মিনিট। অর্থাৎ প্রথম দিনের চাঁদ ৫১ মিনিটের বেশি পশ্চিম আকাশে থাকতে পারে না। চান্দ্রমাসনির্ভর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনে ওপরের বিজ্ঞানসম্মত গণনাপদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব পঞ্জিকা ব্যবহূত হচ্ছে সেগুলির মধ্যে লোকনাথ ডাইরেক্টরী পঞ্জিকা সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ও উল্লেখযোগ্য। ১৯৫৩ সাল থেকে এটি ঢাকার লোকনাথ বুক এজেন্সী সরবরাহ করে আসছে। এর একটি পকেট সংস্করণও আছে। প্রতি বছর বৈশাখ মাসে এটি প্রকাশিত হয়। এছাড়া রয়েছে মোহাম্মদী পকেট পঞ্জিকা। এর প্রকাশক ঢাকার হামিদিয়া লাইব্রেরী লিমিটেড। [এ.আর হাওলাদার]