পঞ্চগড় জেলা
পঞ্চগড় জেলা (রংপুর বিভাগ) আয়তন: ১৪০৪.৬৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৬°০০´ থেকে ২৬°৩৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°১৯´ থেকে ৮৮°৪৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, দক্ষিণে দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলা, পূর্বে নীলফামারী জেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। ছিটমহল ১১। এ জেলায় ভারতীয় ছিটমহলগুলি হচ্ছে বোদা উপজেলার পুঠিমারী, দৈখাত, শালবাড়ি, কাজলদিঘি, নাটক টোকা, নাজিরগঞ্জ; দেবীগঞ্জ উপজেলার বেহুলাডাংগা, বালাপাড়া কোটভাজানী, দহলা খাগড়াবাড়ি; সদর উপজেলার গারাতি ও সিংগীমারী। এটি বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা।
জনসংখ্যা ৮৩৬১৯৬; পুরুষ ৪২৯৪৯০, মহিলা ৪০৬৭০৬। মুসলিম ৬৯০৮৯৩, হিন্দু ১৪২৩৫০, বৌদ্ধ ২১৯৪, খ্রিস্টান ৪২ এবং অন্যান্য ৭১৭।
জলাশয় করতোয়া, আত্রাই, মহানন্দা, টাংগন, ডাহুক, পাথরাজ, তালমা, নাগর ও চাওয়াই নদী উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন পঞ্চগড় ছিল ব্রিটিশ শাসনামলে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার অন্তর্ভুক্ত একটি থানা। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশভাগের সময় এটি দিনাজপুর জেলাভুক্ত হয়। ১৯৮০ সালে পঞ্চগড়, বোদা, দেবীগঞ্জ, আটোয়ারী ও তেঁতুলিয়া থানা সমন্বয়ে পঞ্চগড় মহকুমা গঠিত হয়। ১৯৮৪ সালে জেলায় রূপান্তরিত হয়।
জেলা | |||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | উপজেলা | পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |
শহর | গ্রাম | ||||||||
১৪০৪.৬৩ | ৫ | ১ | ৪৩ | ৪৬৩ | ৮৪৩ | ৭২০১৫ | ৭৬৪১৮১ | ৫৯৫ | ৪৩.৯ |
জেলার অন্যান্য তথ্য | |||||||||
উপজেলা নাম | আয়তন (বর্গ কিমি) | পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | |
আটোয়ারী | ২০৯.৯২ | - | ৬ | ৬২ | ৬৪ | ১১৪৯৩৮ | ৫৪৮ | ৫০.৭ | |
তেঁতুলিয়া | ১৮৯.১২ | - | ৭ | ৩৬ | ২৪৪ | ১০৫৩৬৮ | ৫৫৭ | ৩৯.০ | |
দেবীগঞ্জ | ৩০৯.০৪ | - | ১০ | ১০৮ | ১০০ | ১৮৫৯৬০ | ৬০২ | ৪১.১ | |
পঞ্চগড় সদর | ৩৪৭.০৮ | ১ | ১০ | ৮৩ | ১৯৬ | ২২৯২৩৭ | ৬৬০ | ৪৫.৭ | |
বোদা | ৩৪৯.৪৭ | - | ১০ | ১৭৪ | ২৩৯ | ২০০৬৯৩ | ৫৭৪ | ৪৩.১ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি স্বাধীনতাযুদ্ধের শুরুতে পাকসেনাদের গুলিতে পঞ্চগড় সদর উপজেলার ২ জন ইপিআর শহীদ হন এবং ১৮ জন পাকসেনা নিহত হয়। পাকবাহিনীর উত্তরদিকের গতিরোধ করার লক্ষ্যে গেরিলারা সদরের অমরখানা ক্যাম্পের নিকট চাওয়াই নদীর সেতু বিধ্বস্ত করে দেয়। ১৯ থেকে ৩০ এপ্রিল পাকবাহিনী উপজেলা শহরে এবং মীরগড়ে অর্ধশতাধিক নিরীহ লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে পাকসেনারা আটোয়ারী উপজেলার ফকিরগঞ্জ হাটে ১১ জন লোককে হত্যা করে। ২৭ মে তারা একই উপজেলার রাধানগর গ্রামে হামলা করে ৭ জনকে এবং ৩ জুন সুখাতী গ্রামের ৫ জন লোককে হত্যা করে। জুলাই মাসে পাকবাহিনী সদরের অমরখানায় ১৬ জনকে হত্যা করে। আটোয়ারী উপজেলার ধামোর গ্রামের ১১ জন নিরীহ লোক নয়াদিঘি পুকুরপাড়ে পাকসেনাদের গুলিতে নিহত হয়। অক্টোবরের শেষদিকে পাকবাহিনী তোড়িয়ার ডুহাপাড়া গ্রামের ২৭ জনকে এবং নভেম্বরে দেবীগঞ্জ উপজেলার দিয়াগাড়িতে ১৮ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ২ (সদর উপজেলার করতোয়া নদীর তীরে ও আটোয়ারী থানার মির্জাপুরের পুন্নাদীঘির পাড়ে); বধ্যভূমি ১ (পঞ্চগড় শহরের করতোয়া নদীর পূর্বতীরের চর এলাকা); স্মৃতিস্তম্ভ ১ (পঞ্চগড় শহরের ধাক্কামারায়)।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৩.৯%; পুরুষ ৫০.১%, মহিলা ৩৭.৩%। কলেজ ২৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৪০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৯৯, মাদ্রাসা ৬০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ (১৯৬৫), বোদা ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৮), মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৪, আটোয়ারী), নৃপেন নারায়ণ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৬), বিষ্ণু প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৪, পঞ্চগড়), পঞ্চগড় সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯৫৬), তেঁতুলিয়া পাইলট উচ্চ নয়াদিঘি বিদ্যালয় (১৯৫৯), প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮২৮, বোদা), গোয়ালপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৩০, বোদা), বোদা আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৭৩), মীরগড় প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১৮, পঞ্চগড়), ময়নাগুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯২৮, পঞ্চগড়)।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭০.৯৬%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৪২%, শিল্প ০.৪৭%, ব্যবসা ৯.৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৭২%, চাকরি ৪.৮৩%, নির্মাণ ০.৭৩%, ধর্মীয় সেবা ০.১৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৩% এবং অন্যান্য ৩.৯৯%।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী এই সময়, করতোয়া, পঞ্চরূপা, উত্তর আশা, আলোড়ন, বার্তা, উন্মেষ, দুর্জয়, পিলসুজ (পঞ্চগড়), এখানে সূর্য ওঠে, গণপত্র, চেতনা (বোদা), ছায়াপথ, পূর্ণভা (দেবীগঞ্জ), পঞ্চগড় বার্তা (অবলুপ্ত)।
লোকসংস্কৃতি ভাওয়াইয়া গান, সত্যপীরের গান, জঙ্গের গান, বৈষ্ণব গান, বাউল গান, মর্সিয়া, নটুয়া, গুরুসঙ্গীত, কীর্তন, কবি গান, লোকগাঁথা, লোকনাট্য, প্রবাদ-প্রবচন, ছড়া, ধাঁধাঁ উল্লেখযোগ্য।
বিশেষ আকর্ষণ তেঁতুলিয়া ডাক বাংলা ও বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, তেঁতুলিয়ার পিকনিক কর্ণার, ডাহুক বনভোজন কেন্দ্র, রৌশনপুর আনন্দধারা ও চা-বাগান, ভদ্রেশ্বর মন্দির (তেঁতুলিয়া), মির্জাপুরের শাহী মসজিদ ও ইমামবাড়া এবং বার আউলিয়া মাযার (আটোয়ারী), বোদেশ্বরী মন্দির, গোলকধাম মন্দির (বোদা), চীন বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু, চন্দ্রিমা উদ্যান (দেবীগঞ্জ), ভিতরগড়, কাজলাদীঘি, পঞ্চগড় ফরেস্ট (শহরের উপকণ্ঠ)। [মো. শেরোজ্জামান]
আরও দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা।
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; পঞ্চগড় জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; পঞ্চগড় জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।