নিকলী উপজেলা
নিকলী উপজেলা (কিশোরগঞ্জ জেলা) আয়তন: ২১৪.৪০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°১৫´ থেকে ২৪°২৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫২´ থেকে ৯১°০৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে করিমগঞ্জ ও মিঠামইন উপজেলা, দক্ষিণে বাজিতপুর উপজেলা, পূর্বে মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা, পশ্চিমে কটিয়াদি ও করিমগঞ্জ উপজেলা।
জনসংখ্যা ১২০১০৫; পুরুষ ৬১৪০৮, মহিলা ৫৮৬৯৭। মুসলিম ১১৩১৯৮, হিন্দু ৬৭৩৭, বৌদ্ধ ১৭ এবং অন্যান্য ১৫৩।
জলাশয় প্রধান নদী: বাউলাই, ধনু, সিঙ্গুয়া ও ঘোড়াউতরা; তেগুলিয়া বিল, বড়বিল, বড়লিয়ারকন্দ বিল, নেওরা বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন নিকলী থানা গঠিত হয় ১৯৮১ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ২৪ মার্চ ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ৭ | ৪৩ | ১২৫ | ১৭৯৫৭ | ১০২১৪৮ | ৫৬০ | ৩০.৯ | ২২.৬ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৭.৬২ | ২ | ১৭৯৫৭ | ২৩৫৭ | ৩০.৯ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
কারপাশা ৫৭ | ৪৪৯৮ | ৬৯৭৪ | ৬৭০৯ | ১৩.৪৩ | ||||
গুরাই ৩৮ | ১০৭১০ | ১০৮৩০ | ১০২৪৪ | ১৮.২৭ | ||||
জারইতলা ৪৭ | ৬০৯৯ | ৯৫৮১ | ৯৩২৬ | ১৭.৬০ | ||||
ছাতিরচর ৩৮ | ১৪৮৭ | ৩৮২০ | ৩৪৭২ | ১৯.০৬ | ||||
দামপাড়া ০৯ | ৭০৬৫ | ৯৪৫৮ | ৮৮৪২ | ৩২.১৬ | ||||
নিকলী ৭৬ | ৭৫৬৮ | ১৫০৪৭ | ১৪৫৬৯ | ২৮.০৯ | ||||
সিংপুর ৮৫ | ১২১৩৮ | ৯৫১৮ | ৮৭০৭ | ২১.৮০ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ গুরাই জামে মসজিদ (১৬৮০ খ্রি), সাপুর মসজিদ (১৭০০ খ্রি), কুর্শা শাহী মসজিদ (১৭০৭)।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে পাকসেনারা এ উপজেলার শ্বশানঘাটে প্রায় অর্ধশত নিরীহ লোককে হত্যা করে। ৬ সেপ্টেম্বর গুরাই গ্রামে পাকসেনারা ২৫ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। ১৯ অক্টোবর পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ২০ অক্টোবর নিকলী শত্রুমুক্ত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি ১: শ্মশানখোলার পেছনে নিকলী বাজার সংলগ্ন ভিটা।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৮৮, মন্দির ১৭, মাযার ১২, আখড়া ৫।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ২১.৯%; পুরুষ ২৮.০%, মহিলা ১৯.৬%। কলেজ ১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৭, কিন্ডার গার্টেন ৪, মাদ্রাসা ৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মুক্তিযোদ্ধা আদর্শ কলেজ (১৯৯৫), নিকলী গোরাচাঁদ পাইলট বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৮)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৭, ক্লাব ২৪, নাট্যদল ২, খেলার মাঠ ৭।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭২.০৬%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৮৩%, শিল্প ০.৩৯%, ব্যবসা ১০.৭৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.১০%, চাকরি ২.৭৪%, নির্মাণ ০.৭৫%, ধর্মীয় সেবা ০.১৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২১% এবং অন্যান্য ৭.৯৭%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫০.২২%, ভূমিহীন ৪৯.৭৮%। শহরে ৪২.২৭% এবং গ্রামে ৫১.৬৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, ভূট্টা, আলু, সরিষা, চীনাবাদাম, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিসি, ছোলা, পাট।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, জাম, কলা, নারিকেল, কুল।
মৎস্য, হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৪৩১, মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র ১, হাঁস-মুরগি ৭৪।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২২ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ২০০ কিমি; নৌপথ ১৭ নটিক্যাল মাইল।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি।
শিল্প ও কলকারখানা রাইসমিল, স’মিল, আইস ফ্যাক্টরি, বিস্কুট ও রুটি ফ্যাক্টরি।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশল্প, মৃৎশিল্প, বুননশিল্প, বাঁশ, বেত ও কাঠের কাজ, সেলাই কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৫, মেলা ১৫। নিকলী পুরাতন বাজার, নিকলী নতুন বাজার, দাসপাড়া বাজার ও মজলিশপুর বাজার এবং গুরাই মসজিদ সংলগ্ন মেলা ও ষাইটধার পৌষ সংক্রান্তির মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, সরিষা, চীনাবাদাম, শাকসবজি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১২.৯৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৮০%, পুকুর ০.৬২%, ট্যাপ ০.৩২% এবং অন্যান্য ৩.২৬%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ১০.৪৯% (গ্রামে ৮.৯০% ও শহরে ১৯.৩৫%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৭৮.৩৭% (গ্রামে ৭৯.৬৬% ও শহরে ৭১.২০%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১১.১৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, হাসপাতাল ১, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৩, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ২, কমিউনিটি ক্লিনিক ১৫, প্যাথলজি সেন্টার ১৮।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৮৮ সালের বন্যায় এ উপজেলার ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, ফসল ও অন্যান্য সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, স্বনির্ভর বাংলাদেশ। [মো. আবদুস সালাম]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; নিকলী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।