নাচোল উপজেলা
নাচোল উপজেলা (নবাবগঞ্জ জেলা) আয়তন: ২৮৩.৬৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩৮´ থেকে ২৪°৫১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°১৫´ থেকে ৮৮°২১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তর-পশ্চিমে গোমস্তাপুর উপজেলা, দক্ষিণ নবাবগঞ্জ সদর উপজেলা, পূর্বে তানোর ও নিয়ামতপুর উপজেলা। এ অঞ্চলের মাটি ধান উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত সহায়ক।
জনসংখ্যা ১৩২৩০৮; পুরুষ ৬৭৪০৬, মহিলা ৬৪৯০২। মুসলিম ১১৭১৮৩, হিন্দু ১২০৪৬, বৌদ্ধ ১৯৩৫, খ্রিস্টান ২১ এবং অন্যান্য ১১২৩। এ উপজেলায় সাঁওতাল, মুন্ডা, ওরাওঁ, মাহালী প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
জলাশয় প্রধান নদী: মহানন্দা। লক্ষ্মীকোল বিল ও দামাস বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন নাচোল থানা গঠিত হয় ১৯১৮ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৪ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ৪ | ২০১ | ১৯৭ | ১০৪০৭ | ১২১৯০১ | ৪৬৬ | ৫৮.৬ | ৩৮.৭ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৫.১৫ | ২ | ১০৪০৭ | ২০২১ | ৫৮.৬ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
কসবা ৩৮ | ১৫১৮৩ | ১৫৬৯৫ | ১৫০০০ | ৩৯.৯৬ | ||||
নাচোল ৫৭ | ১৮২৫০ | ২৪১৪৮ | ২৩৪৭৬ | ৪৫.৯১ | ||||
নিজামপুর ৭৬ | ১৮৪৮৯ | ১২৮৫৫ | ১২৫৩২ | ৪১.৯৮ | ||||
ফতেহপুর ১৯ | ১৮১৭৬ | ১৪৭০৮ | ১৩৮৯৪ | ২৯.৮১ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ আলী শাহপুর মসজিদ (ফতেহপুর), কলিহার জমিদার বাড়ি ও মল্লিকপুর জমিদার বাড়ি উল্লেখযোগ্য।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ইলা মিত্রের নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালে তেভাগা আন্দোলন সংঘটিত হয়। নাচোলের কৃষকবৃন্দ ছিল এ আন্দোলনের প্রাণ। প্রধানত সাঁওতাল কৃষকরা ছিল অগ্রগামী। এ আন্দোলন ‘নাচোল বিদ্রোহ’, ‘তেভাগা আন্দোলন’, ‘নাচোলের কৃষক আন্দোলন’ প্রভৃতি নামে পরিচিত।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উজিরপুর দরগা, নাচোল বাজার মন্দির ও দেউপাড়া মঠ।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪০.৩%; পুুরুষ ৪২.৬%, মহিলা ৩৮.০%। কলেজ ৬, কারিগরি কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭৭, মাদ্রাসা ১৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নাচোল ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), নাচোল মহিলা কলেজ (১৯৯৩), নাচোল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৭), নাচোল প্রাথমিক বিদ্যালয়।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৩.২৭%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৯১%, শিল্প ০.২৯%, ব্যবসা ৯.৩৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.২৫%, চাকরি ৩.৫৪%, নির্মাণ ০.৬৭%, ধর্মীয় সেবা ০.০৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.০৮% এবং অন্যান্য ৬.৫২%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৩.৩৭%, ভূমিহীন ৫৬.৬৩%। শহরে ৪৫.৭৮% এবং গ্রামে ৪৩.১৭% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, ডাল, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি চিনা, কোদা, ম্যারা (ডাল জাতীয়)।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, তাল, নারিকেল, তরমুজ, কুল।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৩১ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৪.৪০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৬৯ কিমি; নৌপথ ৩.২৩ নটিক্যাল মাইল; রেলপথ ১৯ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, টমটম (ঘোড়ার গাড়ি)।
কুটিরশিল্প মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১২, মেলা ৬। নাচোল হাট, রাজবাড়ী হাট, সোনাইচন্ডী হাট, মল্লিকপুর হাট, নিজামপুর হাট, ভেরেন্ডী গোলাবাড়ী হাট এবং নাচোল বাজারের দুর্গাপূজার মেলা ও বৈশাখী মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৮.১৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৪.৩২%, ট্যাপ ২.৪১%, পুকুর ০.৪৫% এবং অন্যান্য ২.৮২%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৯.৭৭% (গ্রামে ৭.৬৫% এবং শহরে ৩৫.৮৪%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪২.১৯% (গ্রামে ৪২.১৬% এবং শহরে ৪২.৬২%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৪৮.০৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৪, হাসপাতাল ১, ক্লিনিক ২, হোমিওপ্যাথী ডিসপেনসারী ১২০।
এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা, কারিতাস, বার্ড। [মাযহারুল ইসলাম তরু]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; নাচোল উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।