ধুনট উপজেলা
ধুনট উপজেলা (বগুড়া জেলা) আয়তন: ২৪৭.৭৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩২´ থেকে ২৪°৪৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২৮´ থেকে ৮৯°৪০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে গাবতলী ও সারিয়াকান্দি উপজেলা, দক্ষিণে রায়গঞ্জ উপজেলা, পূর্বে কাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা, পশ্চিমে শাহজাহানপুর ও শেরপুর উপজেলা।
জনসংখ্যা ২৭০৮১০; পুরুষ ১৩৬৫০১, মহিলা ১৩৪৩০৯। মুসলিম ২৫৮৬২২, হিন্দু ১২১৪৯, বৌদ্ধ ১০, খ্রিস্টান ১৬ এবং অন্যান্য ১৩।
জলাশয় প্রধান নদী: যমুনা, বাঙ্গালী ও ইছামতী।
প্রশাসন ধুনট থানা গঠিত হয় ১৯৬২ সালে এবং থানা উপজেলায় রূপান্তরিত হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ১০ | ৯১ | ২১০ | ১৮০৫৮ | ২৫২৭৫২ | ১০৯৩ | ৩৮.৮ | ৩০.৬ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
১০.৮৭ | ১ | ১৮০৫৮ | ১৬৬১ | ৩৮.৮ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার(%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
এলাঙ্গী ৪৭ | ৫০৯৫ | ১০৬২৭ | ১০৩৪১ | ৩০.৩৯ | ||||
কালেরপাড়া ৭৬ | ৫৬২৮ | ১২৫২৭ | ১২৭১১ | ২৫.৮৪ | ||||
গোপালনগর ৫৭ | ৬১২৪ | ১৩৫৫৬ | ১২৭৯৫ | ২৮.৬৮ | ||||
গোসাইবাড়ী ৬৬ | ৫১৯১ | ১৩৯৭২ | ১৪৩০৬ | ২৭.৮৩ | ||||
চিকাশী ২৮ | ৬৩৪৩ | ১৩৬১৩ | ১৩৩৫৭ | ৩৩.৫২ | ||||
চৌকিবাড়ী ১৯ | ৭২৯৩ | ১৪৩৩৪ | ১৪১৯৬ | ৩০.৪৭ | ||||
ধুনট ৩৮ | ৬৬৪১ | ১৮৭১০ | ১৭৯০৫ | ৩৩.৭২ | ||||
নিমগাছী ৯৫ | ৬৪৩৮ | ১৪৭৫৬ | ১৪৫১৩ | ৩৩.১০ | ||||
ভান্ডারবাড়ী ৯ | ৫৬৭১ | ৮৫৪৮ | ৯২০৩ | ৩১.৮৬ | ||||
মথুরাপুর ৮৫ | ৬৭৯২ | ১৫৮৫৮ | ১৪৯৮২ | ৩৪.২২ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ এলাঙ্গী বন্দরের দর্গাভবন, নীলকুঠি, জোড়খালি মাদ্রাসা, বাদশাহ সেকেন্দারের বাড়ি (বেরের বাড়ি গ্রাম)।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ১৯ এপ্রিল পাকবাহিনী ধুনট থানা আক্রমণ করলে গুলিতে ১ জন সিপাহী নিহত হয়। ২৬ এপ্রিল পাকবাহিনী এলাঙ্গী বন্দরে ৩৩ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। এছাড়াও বন্দরের সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ২৭ এপ্রিল পাকবাহিনী পুনরায় উক্ত থানা আক্রমণ করে এবং ৫ জন সিপাহীকে হত্যা করে। ৪ মে পাকবাহিনী কালের পাড়া ইউনিয়নে হামলা করে ৩ জন লোককে হত্যা করে। ৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধে ৩ জন পাকসেনা ও ২ জন রাজাকার নিহত হয়। ৭ সেপ্টেম্বর পাকবাহিনী ১৭ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে থানার পাশে গণকবর দেয়। ১১ ডিসেম্বর ধুনট উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ১ (ধুনট), শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ ১।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩০৫, মন্দির ১৫, তীর্থস্থান ৩।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩১.১%; পুরুষ ৩৫.৫%, মহিলা ২৬.৮%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ধুনট ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), ধুনট মহিলা কলেজ (১৯৯৬), গোসাইবাড়ী এ এ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), ধুনট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪১), ধুনট পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭৭), জোড়খালি সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯১১)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: নতুনবার্তা; সাহিত্য পত্রিকা: পিদিম।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, ক্লাব ৪৮, সিনেমা হল ৩, খেলার মাঠ ১০।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭২.২০%, অকৃষি শ্রমিক ২.৫৫%, শিল্প ০.৮৭%, ব্যবসা ৯.৫২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.১০%, চাকরি ৩.৫৬%, নির্মাণ ০.৮৬%, ধর্মীয় সেবা ০.১২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৭৯% এবং অন্যান্য ৭.৪৩%।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, সরিষা, পিঁয়াজ, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আউশ ধান, কাউন, চিনা, তামাক, অড়হর, খেসারি, ছোলা, তিসি, শনপাট।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, লিচু, জাম, কলা।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৭৮.৭৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৮৩.১৫ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা বরফকল, চালকল, আটাকল, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, সূচিশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৩, মেলা ২৩। ধুনট বাজার, মথুরাপুর বাজার, গোসাইবাড়ী বাজার, অজয়পুর বাজার, এলাঙ্গী বাজার, সোনাহাটা হাট এবং চৈতালী মেলা, বৈশাখী মেলা, খাটিয়ামারি মেলা, ধুনট বৈশাখী মেলা, চরক মেলা ও বেলকুচি মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য ধান, পাট, শাকসবজি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫.৭৭% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯২.৬৮%, ট্যাপ ০.২২%, পুকুর ০.২৯% এবং অন্যান্য ৬.৮২%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৩.৮৯% (গ্রামে ৩২.৪২% ও শহরে ৫৫.৬৮%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৯.৬৭% (গ্রামে ৪০.৩২% ও শহরে ২৯.৯১%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২৬.৪৫% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১০, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৪, ক্লিনিক ২৮।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৬২ সালের ২২ মার্চ ঘূর্ণিঝড়ে ২৮ জন লোক মারা যায় এবং ২ শতাধিক আহত হয়। ১৯৮৪, ১৯৮৮ ও ২০০১ সালের বন্যায় এ উপজেলার ঘরবাড়ি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ২০০৩ সালের ২১ মে ঘূর্ণিঝড়ে এ উপজেলার ৮ গ্রামের ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয় এবং দেড়শতাধিক লোক আহত হয়।
এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, আশা, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ। [মো. সিরাজুল ইসলাম]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ধুনট উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।