ধনেশ পাখি
ধনেশ পাখি (Hornbill) Bucerotiformes বর্গের Bucerotidae গোত্রের লম্বা লেজযুক্ত, নিম্নমুখী বাঁকা বৃহৎ ঠোঁটবিশিষ্ট লম্বাটে গড়নের পাখি। অধিকাংশই বৃক্ষবাসী এবং বৃহদাকার। পৃথিবীব্যাপী ৫৬ প্রজাতির ধনেশ রয়েছে। বাংলাদেশে ৪ প্রজাতির ধনেশ আছে।
ধনেশ ঠোঁটের সাহায্যে আহার (শক্ত কীটপতঙ্গ ও ফল গুঁড়ো করে), লড়াই, পালক পরিষ্কার ও বাসা গোছানোসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করে। পুরুষ পাখি আকারে স্ত্রী পাখি থেকে সামান্য বড়। প্রতি প্রজাতির ধনেশের স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর রয়েছে। অধিকাংশ ধনেশই স্থবির স্বভাবের এবং একটি নিজস্ব এলাকার সীমানার মধ্যেই জোড় হিসেবে বাস করে, যা ১০ হেক্টর থেকে ১০০ বর্গ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
ধনেশরা গাছ ও পাথরের প্রাকৃতিক খোড়লে বাসা বানায় এবং অধিকাংশ প্রজাতিতে স্ত্রী পাখি ঠোঁটের সাহায্যে কাদা, বিষ্ঠা ইত্যাদি দিয়ে বাসার মুখে একটি সরু ফাঁক রেখে বাকিটা আটকে দেয়। বাংলাদেশের বড় ধনেশের মতো কোনো কোনো প্রজাতির পুরুষ পাখি কাদা যোগায় ও বাইরের দিক থেকে বাসা আটকানোর কাজে সাহায্য করে এবং অন্য কতকগুলির পুরুষ পাখি কাদা গিলে অন্ননালিতে বড়ি বানিয়ে স্ত্রী-পাখির কাছে উগরে দেয়। যে সকল প্রজাতির স্ত্রী-পাখি বাসার যাবতীয় কাজকর্ম (nesting cycle) সমাপ্তির আগে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে আসে তাদের অপরিণত বাচ্চারা খোঁড়লের মুখ আবার বন্ধ করে দেয়। সব প্রজাতিতে পুরুষ পাখি স্ত্রী পাখিকে এবং পরে বাচ্চাদের আহার যোগায়, দলে থাকা প্রজাতিতে দলের অন্য সদস্যরা এক্ষেত্রে সাহায্য করে। ছোট ধনেশ ৬টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে, প্রায় ২৫ দিন তা দেয়, প্রথম বাচ্চাটির বয়স প্রায় ৪৫ দিন হলে স্ত্রী পাখি খোঁড়ল থেকে বের হয়। বড় পাখি ২টি ডিম পাড়ে, প্রায় ৪৫ দিন তা দেয় এবং বাচ্চাদের একমাস বয়সকালে বাসা ছাড়ে, যদিও প্রায় ৮০ দিন বাসায় যাতায়াত করে। অধিকাংশ বড় প্রজাতির স্ত্রী পাখি বাচ্চা না উড়া পর্যন্ত বাসায় থাকে এবং সর্বমোট ৪-৫ মাস বন্দি জীবন কাটায়। বেশিরভাগ প্রজাতির স্ত্রী পাখি বাসায় থাকাকালে পালক নির্মোচন করে; ডিম পাড়া শুরুর অল্প দিনের মধ্যেই সকল উড্ডয়ন পালক ঝরে যায় এবং বাসা থেকে বের হওয়ার আগে আবার পালক গজায়।
বাংলাদেশের ধনেশ পাখিরা হচ্ছে পাতাঠুঁটি ধনেশ (Wreathed Hornbill), উদয়ী পাকরাধনেশ (Oriental Pied Hornbill), রাজ ধনেশ (Great Hornbill) ও দেশি মেটেধনেশ (Indian Grey Hornbill)। এদেরকে উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মিশ্র চিরহরিৎ বনে দেখা যায়। [মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম]