খাতুন, খোদেজা
খাতুন, খোদেজা (১৯১৭-১৯৯০) শিক্ষাবিদ, সমাজকর্মী। ১৯১৭ সালের ১৫ আগস্ট বগুড়া জেলার মন্ডলধরন গ্রামে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে তাঁর জন্ম। বেগম ফজিলাতুন্নেসার পরে খোদেজা খাতুনই ছিলেন দ্বিতীয় মুসলিম মহিলা, যিনি ১৯৩৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ (বাংলা) ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৪১ সালে কলকাতার লেডি ব্রাবোর্ন কলেজে প্রভাষিকা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর তিনি কলকাতা থেকে ঢাকায় আসেন। ১৯৬০-৬৮ পর্যন্ত তিনি ইডেন কলেজে বাংলার অধ্যাপিকা এবং ১৯৬৮-৭২ পর্যন্ত রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
খোদেজা খাতুন শিক্ষকতাকে জীবনের ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। অবসরে তিনি সাহিত্য-ভাবনায় মগ্ন থাকতেন। তিনি অনেক কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ লিখেছেন। তাঁর রচিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ বেদনার এই বালুচরে ১৯৬৩ সালে প্রকাশিত হয়। কাব্য-সাধনায় তিনি রোমান্টিক ভাবকল্পের অধিকারিনী ছিলেন। গ্রন্থ রচনার পাশাপাশি তিনি বেশ কয়েকটি সাময়িকী সংকলন ও সম্পাদনাও করেন। সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তিন খন্ডে রচিত শতপুষ্পা (১৯৮৪, ১৯৮৯, ১৯৯০) কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধের সংকলন। এটি সাজানো হয়েছে ১৮৯৪-১৯৫০-এর মহিলা সাহিত্যিকদের রচনা-সম্ভার নিয়ে। তিনি ছোট ছোট কথা এবং বিচ্ছিন্ন ভাবনাকে নানাভাবে প্রকাশের ব্যাকুলতা নিয়ে রচনা করেন আরণ্য মঞ্জরী (১৯৭১)। এ গ্রন্থে রম্য কথার ভঙ্গিতে ব্যঙ্গ ও রঙ্গ-রসিকতা প্রকাশ পেয়েছে। তাঁর গবেষণা ও শ্রমের ফসল হলো বগুড়ার লোকসাহিত্য (১৯৭০)। এটি বৈচিত্র্যের ব্যাপকতা এবং জীবনের সঙ্গে একাত্মতার উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে সমাদৃত। মুক্তিযুদ্ধের নির্মম ঘটনাবলি উপজীব্য হয়েছে তাঁর ‘একটি সুর একটি গান’ (১৯৮২) এবং ‘ওরা দুজন’ গল্প দুটিতে। এ ছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাবলি হলো: প্রথম যুগের বাংলা উপন্যাস (১৯৬৩), রূপকথার রাজ্যে (১৯৬৩), শেষ প্রহরের আলো (১৯৬৯), সাগরিকা (১৯৬৯), সাহিত্য ভাবনা (১৯৭৭), ভিনদেশী সেরা গল্প, আমার দীর্ঘ ভ্রমণ (১৯৮৪-৮৫) ইত্যাদি। এ ছাড়া প্রকাশের জন্য যেসব পান্ডুলিপি তিনি রেখে গেছেন, সেগুলি হলো: নিবন্ধ বিচিত্রা, বর্ণালী (কিশোর কাব্যগ্রন্থ), গল্পলহরী এবং ডেভিড কপারফিল্ড (অনুবাদ)।
খোদেজা খাতুন সমাজসেবামূলক বহু কর্মকান্ডে জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য এবং ১৯৭৭-৮৫ পর্যন্ত বাংলাদেশ লেখিকা সংঘের সভানেত্রী ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা সংস্থা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল, বাংলা একাডেমী ও ইস্কাটন লেডিজ ক্লাবের সদস্য ছিলেন।
খোদেজা খাতুন ঢাকায় ইসলামিক মহিলা কলেজ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ কৃতিত্বের জন্য তিনি ‘রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক’ (১৯৬৭), সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ‘নুরুন্নেসা খাতুন বিদ্যাবিনোদিনী পদক’ (১৯৭৭), প্রবন্ধ সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ রাজশাহী শাখা কর্তৃক ‘আবদুর রাজ্জাক সাহিত্য স্মৃতি পদক’ (১৯৮৪) এবং ইস্কাটন লেডিজ ক্লাব থেকে ‘স্মারক পত্র’ (১৯৮৫) লাভ করেন। ১৯৯০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়। [মোঃ মাসুদ পারভেজ]