তাম্রশাসন

Mukbil (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ০৯:৫৯, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

তাম্রশাসন  তামার পাতে প্রাচীনতম লিখিত দলিল। সাধারণত রাষ্ট্র কর্তৃক কোনো ধর্মীয় সংগঠন বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ধর্মাচরণের ক্ষেত্র তৈরির জন্য ভূমিদান-এর চুক্তি তামার পাতের ওপর দলিল আকারে বিস্তারিত লেখা হতো। তামার পাতের উপর লেখাই ইতিহাসে তাম্রলিপি নামে পরিচিত। তাম্রশাসনে লিপি উৎকীর্ণ হলে তাতে রাজকীয় সীল দেয়া হতো। এ ধরণের তাম্রশাসন বা লিপি রাজকীয় গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিনামা আকারে তামার পাতে খোদাই করে লিপিবদ্ধ করার পর তা কোনো গোপন স্থানে লুকিয়ে রাখা হতো নিরাপদ রাখার জন্য। সাধারনত কোনো মন্দিরের ভিত্তির অভ্যন্তরে বা দেয়ালের কোঠরে বা কোনো মাটিতে গর্ত করে তার ভেতরে তাম্রশাসনটি সংরক্ষণ করা হতো। কখনো কখনো ভূমিদান এর রাজকীয় নির্দেশ বা এ ধরণের কোনো চুক্তি বাতিল করা হলে, সেই একই তামার পাত্রে নতুন করে লিপি খোদাই করা হতো। প্রাচীনকাল থেকে বহু বছর ধরে টিকে থাকা (একমাত্র প্রাথমিক সূত্র হিসেবে) আইনী দলিল-এর প্রাথমিক সূত্র হিসেবে একমাত্র এই তাম্রলিপি সমূহকেই চিহ্নিত করা হয়। ভূমিদানের দলিল বা চুক্তিনামাসমূহ তাম্রশাসন আকারে প্রকাশ করা হয়েছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কর্তৃক ব্রাহ্মণদের উদ্দেশ্যে দানকৃত দলিল হিসেবে। এই দলিল কখনো পৃথক প্রতিষ্ঠান বা সংঘের জন্য, কখনো বা  সমষ্টির নামেও করা হতো।

তাম্রশাসন

দশ শতকের দ্বিতীয়ভাগের ‘ইর্দা’ তাম্রশাসনটি (বা তাম্রপত্র) বাংলা ভাষায় লিখিত প্রচীন দলিল বলে ধারনা করা হয়। এই তাম্রশাসন বা তাম্রলিপিটি ১৯৩১ সালে উড়িষ্যার বালাশোর জেলায় আবিষ্কৃত হয়। দীর্ঘ ৪৯ লাইনে লিখিত লিপির বক্তব্যে একটি রাজবংশের বা একটি আঞ্চলিক গোষ্ঠীর পরিচিতমূলক বর্ণনা প্রকাশ পায়। ‘কাম্বোজ বংশ-তিলক’ বা কম্বোজ গোষ্ঠীর যশ-এর পরিচয় লিপির মূল বিষয়বস্ত্ত। এ ছাড়া এটি রাজ্যপালের পরিবারের অন্তর্ভূক্ত নয়পাল নামে একজন রাজা কর্তৃক বর্ধমানভুক্তির অন্তর্গত দন্ডভুক্তিমন্ডলে ভূমি দান করার উদ্দেশ্যে জারি করা হয়েছিল। ইর্দা তাম্রলিপিতে রাজবংশের প্রধানের উপাধি উল্লেখ করা হয়েছে-‘কম্বোজ বংশ তিলক পরমসুগতা মহারাজাধিরাজ পরমেশ্বর পরমভট্টারক রাজ্যপাল’ হিসেবে। লিপিটি নিঃসন্দেহে কম্বোজপাল রাজবংশীয়দের সময়ে উৎকীর্ণ। এই রাজবংশ দশ-এগার শতকে উত্তর-পশ্চিম বাংলায় শাসন করতো। কম্বোজ-পাল রাজ্যের সীমা সম্পর্কে কোনো সূত্র মেলে না। তবে ইর্দা তাম্রশাসনের তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায় যে, কম্বোজদের রাজ্যটির অবস্থান ছিল বর্ধমানভূক্তি মন্ডলের (বর্তমানের বর্ধমান বিভাগ) অন্তর্গত দন্ডভূক্তি মন্ডলে (দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম মেদনীপুর জেলার অংশ এবং বালাসোর জেলার সুবর্ণরেখা নদীর নিম্নভাগে)। গৌড় এবং রাঢ়ও কম্বোজপাল রাজ্যের অন্তভূক্ত হয়েছিল। কম্বোজদের শেষ শাসক ছিলেন ধর্মপাল (বাংলার পাল বংশীয় শাসক ধর্মপাল এর সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই) এবং তিনি এগার শতকের প্রথমভাগ পর্যন্ত দন্ডভূক্তিতে তাঁর শাসন বজায়  রেখেছিলেন।

ইর্দা তাম্রশাসনের তথ্য থেকে আমরা নিশ্চিত করে কম্বোজ রাজবংশীয় তিনজন রাজার নামের সঙ্গে পরিচিত হই। বংশের প্রতিষ্ঠাতা রাজ্যপাল ও তাঁর দুই পুত্র নারায়ণপাল এবং নয়পাল। ইর্দা তামশাসনটি নয়পাল এর সময়ে উৎকীর্ণ এবং এতে নয়পাল এবং তাঁর পিতার উভয়ের উপাধি দেয়া হয়েছে পরমেশ্বর, পরমভট্টাচার্য এবং মহারাজাধিরাজ।

উল্লেখযোগ্য যে, কম্বোজ-পাল রাজবংশ এবং বাংলার পাল রাজবংশীয় কয়েকজন শাসকের নাম ও তাঁদের শাসনকাল প্রায় এক ও অভিন্ন দেখা যায়। যেমন, ইর্দা তাম্রশাসনে উল্লেখিত রাজ্যপাল এবং পালবংশীয় রাজা দ্বিতীয় রাজ্যপাল ছিলেন সমসাময়িক। উভয়েই প্রায় একই ‘পরমেশ্বর, পরমভট্টাচার্য এবং মহারাজাধিরাজ’ রাজ পদবী ধারণ করেছিলেন এবং উভয়েই নামের শেষে ‘পাল’ শব্দটি সংযুক্ত করেছিলেন। ধর্মীয় বিশ্বাসও অভিন্ন ছিল। তবে লক্ষণীয় যে, কম্বোজ পাল বংশীয় শাসকগণ ছিলেন বাংলার সীমানার বাইরের উত্তরের পার্বত্য অঞ্চল থেকে আগত এবং তারা উত্তর ও পশ্চিম বাংলার অঞ্চলসমূহ পাল শাসকদের কাছ থেকে অধিকার করেছিলেন। এ অঞ্চল পরবর্তীকালে দ্বিতীয় মহীপাল অধিকার করে পাল সাম্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

ইর্দা তাম্রশাসনে উল্লিখিত সূত্রের উল্লেখযোগ্য তথ্য হলো, বাংলায় অবস্থানরত কম্বোজ রাজা স্বয়ং ছিলেন প্রধান সেনাপতি এবং রাজার অধীনে ছিল একাধিক সেনাপতি। অন্যান্য সেনাপতিগণ রাজা কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হতেন এবং তাঁরা সৈনিক সংঘ (সেনা দলের প্রধানদের সংঘ) এর সহযোগিতা নিয়ে রাজ্যের প্রয়োজনে সাহায্যে এগিয়ে আসতেন। ইরদা তাম্রলিপিতে উল্লিখিত এই সৈনিক সংঘ সংক্রান্ত তথ্য কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রের বর্ণনায় পাওয়া যায়। অর্থশাস্ত্রের বর্ণনায়ও ক্ষত্রিয় সংঘ বা যোদ্ধাদের সংঘের কথার উল্লেখ রয়েছে। উড়িষ্যার বালাসোরে বাংলার কম্বোজদের ‘কলন্দ তাম্রশাসন’ নামক আরেকটি লিপির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এটি উড়িষ্যার কলন্দ গ্রামে প্রাপ্ত বলেই এরূপ নামকরণ হয়েছে। কম্বোজ রাজ নয়পাল কর্তৃক রাজধানী প্রিয়ঙ্গু শহর থেকে তার রাজত্বের ১৪তম বছরে আশ্বিন মাসে তাম্রশাসনটি উৎকীর্ণ করেন। তাঁদের রাজধানী প্রিয়ঙ্গু থেকেই ইর্দা তাম্রশাসনটি প্রকাশিত হয়েছিল যার অবস্থান এখনো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি।

রাজ্যপাল এর ভাতুরিয়া তাম্রশাসনটির লিপির তথ্যে জানা যায় যে, অঙ্গ, কলিঙ্গ, উড়িষ্যা বা ওঁড়া, কর্ণাট, সুহ্মা, গুরজারা, কিরাত এবং চীনা বা সীনাগণ রাজ্যপাল-এর আদেশ মেনে চলত। তবে গৌড় এই কর্তৃত্বের আওতাভুক্ত ছিল না। ভাতুরিয়া তাম্রশাসনটি কম্বোজদের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ তাম্রপত্র হিসেবে চিহ্নিত। পাল রাজা প্রথম মহীপাল এর বংগদ বা বংগার তাম্রশাসনটি বাংলার ইতিহাসে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। মহীপাল কর্তৃক বাংলার পাল সাম্রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার দলিল ছিলো এটি। তিনি বাংলার উত্তর ও পশ্চিম অংশে পাল রাজ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু পশ্চিম বঙ্গের দক্ষিণাঞ্চল তিনি দখল করতে সক্ষম হন নাই। সেখানে রাজেন্দ্র চোলার আক্রমনের সময়ে ধর্মপাল ও রাণাসুর এর শাসন বজায় ছিলো। মহীপালের রাজত্বের শেষ পর্যায়ে উত্তর বঙ্গের উপর তাঁর ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হয়োছলো। সারানাথ তাম্রশাসন (উৎকীর্ণের তারিখ, ১০৮৩ সম্বত=১০২৬ খ্রিস্টাব্দ) সূত্রে ধারণা করা হয় যে, প্রথম মহীপাল বেনারস পর্যন্ত তাঁর কর্তৃত্বের প্রসার ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে বেনারস তাম্রশাসনটি ছিলো সম্পূর্ণ ধর্মীয় উদ্দেশ্যে উৎকীর্ণ এবং এতে মহীপাল বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী হিসেবে বেনারসের বেশ কিছু ধর্মীয় মন্দির সংস্কারের ও নির্মাণের কাজ করেছিলেন। ফলে পন্ডিতগণ মনে করেন যে, সারানাথ তাম্রশাসনটির সঙ্গে মহীপাল কর্তৃক সারানাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার কোন সম্পর্ক ছিলো না।

রাজা শ্রীচন্দ্রের পশ্চিমবঙ্গ তাম্রশাসন বা সিলেট তাম্রশাসনটিও (৯২৫-৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ) বাংলায় কম্বোজ শাসকদের শাসনকালে জারিকৃত একটি লিখিত দলিল। চন্দ্রবংশীয় রাজা শ্রী চন্দ্র (৯২৫-৯৭৫ খ্রি.) এই তাম্রশাসনটি জারি করেন। এতে সমতট দেশের খিরোদা নদীর তীরবর্তী অঞ্চল দেবপর্বত-এর নাম উৎকীর্ণ এবং রাজা শ্রীচন্দ্রের পিতা রাজা তৈলক্যচন্দ্র কর্তৃক (৯০৫-৯২৫ খ্রি.) কম্বোজদের পরাজিত করার তথ্য বিধৃত। তাম্রলিপিটি পাঠোদ্ধার করে তাকে ইংরেজিতে ভাষান্তর করেছেন আহমেদ হাসান দানী সম্পূর্ণ লিপিটি থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, লালমাই বনাঞ্চল হতে কম্বোজদের সৈন্য সমতট অঞ্চলে আক্রমণ করেছিল এবং চন্দ্র বংশীয় রাজা তৈলক্যচন্দ্র তাদের পরাজিত করে লালাম্বী রক্ষা করেছিলেন।

কুমিল্লার চারপত্র মুড়া এবং অন্যান্য অঞ্চল থেকে এ পর্যন্ত মোট বারোটি তাম্রশাসন আবিষ্কৃত হয়েছে। শালবন বিহার থেকে প্রাপ্ত তাম্রশাসনসমূহ দেব রাজবংশীয় স্বাধীন শাসকদের সময়ে উৎকীর্ণ। তাম্রশাসন সূত্রে আমরা দেব বংশের চারজন শাসকের নামের সঙ্গে পরিচিত হতে পারি। যেমন, শ্রী শান্তিদেব, তাঁর পুত্র শ্রী বীরদেব, তাঁর দুই পুত্র শ্রী আনন্দদেব এবং শ্রী ভবদের-এর নাম পাওয়া যায়। দেব রাজাদের তাম্রশাসন সমূহেও প্রয়োজনীয় তথ্য লিপি আকারে খোদাই করার পর তাতে রাজকীয় সীল দেয়ার প্রচলন ছিল এবং সীলে রাজার উপাধি পাওয়া যায় ‘শ্রী বংলা মৃগঙ্কশ্ব্য’। তাম্রলিপির ভাষা নাগরী লিপির পরবর্তী স্টাইল যার সঙ্গে পরবর্তী গুপ্ত লিখন ধারার সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। চারপত্রমুড়া থেকে আবিষ্কৃত চারটি তাম্রশাসনের মধ্যে তিনটি তাম্রশাসন দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার চন্দ্র বংশীয় রাজাদের। তাঁরা তাঁদের রাজধানী বিক্রমপুর থেকে এই তাম্রশাসনসমূহ জারি করেছিলেন। তিনটি তাম্রশাসনের মধ্যে দু’টি তাম্রশাসন চন্দ্র রাজবংশের ষষ্ঠ রাজা লড়হচন্দ্র কর্তৃক এবং তৃতীয় তাম্রশাসনটি তাঁর পুত্র গোবিন্দচন্দ্র কর্তৃক জারি হয়েছিল। চন্দ্র রাজাদের উত্তোরাধিকারদের ক্রমবিন্যাস, রাজনৈতিক মর্যাদা এবং তাদের উত্তরাঞ্চলীয় প্রতিবেশী দেশ সমূহের সঙ্গে সম্পর্ক, বিশেষ করে পাল রাজাদের সঙ্গে সম্পর্ক এবং তাদের বিভিন্ন সেনা অভিযান, প্রভৃতির বিস্তারিত তথ্য তাম্রশাসনসমূহ থেকে পাওয়া যায়।

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার-এর কেন্দ্রীয় মন্দির-এর ভিত্তি খননে অন্যান্য প্রত্নতাত্ত্বিক উপকরণের সঙ্গে প্রাপ্ত পাঁচ শতকের গুপ্ত যুগের তাম্রশাসনটি উল্লেখযোগ্য। এটি এক ব্রাহ্মণ দম্পতি কর্তৃক বিহারের রক্ষণাবেক্ষণের উদ্দেশ্যে ভূমিদানের রেকর্ড বা দলিল। এই লিপিতে বটগোহলী স্থানের নামের উল্লেখ আছে যা দিনাজপুরে প্রাপ্ত বৈগ্রাম লিপিতেও উল্লেখ করা হয়েছে। তাম্রশাসনের সূত্র থেকে জানা যায় যে, গুহানন্দী  নামক একজন জৈন শিক্ষক ছিলেন উক্ত বিহারের প্রধান।

গুপ্তবর্ষ ১২৮ বা ৪৪৮ অব্দে জারিকৃত বৈগ্রাম লিপিটি পাহাড়পুর লিপি জারির প্রায় ৩১ বছর পূর্বের। বৈগ্রাম পাহাড়পুর থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। দু’টি স্থানের নামই এই তাম্রশাসনে উল্লেখ করা হয়েছে। সম্ভবত বৈগ্রাম এবং বটগোহলী গ্রাম দু’টির মধ্যের সম্পর্ক ভালো ছিল। ধারনা করা হয় যে, সাত শতকে বাংলার অরাজক পরিস্থিতিতে বাংলা থেকে জৈনধর্ম ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে গিয়েছিল এবং সে সঙ্গে বটগোহলী গ্রামের গুহানন্দী বিহারটিও একই ভাগ্য বরণ করেছিল। আট শতকে পাল শাসক কর্তৃক বাংলার পাল শাসনের সূচনা হলে সোমপুর মহাবিহারটি একই স্থানে নির্মিত হয় এবং বিহারের বৌদ্ধ ভিক্ষুরা জৈন বিহারের জন্য ভূমিদানের রাজকীয় নির্দেশ সম্বলিত তাম্রশাসন বা ভূমিদানের দলিলটিকে গ্রহণ করেছিল। পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে এ কারণেই উক্ত তাম্রশাসনটি সংরক্ষিত ছিল।

গুপ্তবর্ষ ১৫৬/৪৭৬ অব্দ এবং গুপ্তবর্ষ ১৬৩/৪৮২ অব্দে বুধগুপ্তদের মহারাজা দু’টি তাম্রশাসন জারি করেন। তাম্রশাসন দু’টি কোহ (আধুনিক নাগর রাষ্ট্র) গ্রামে পাওয়া গেছে। দুটি তাম্রশাসনই গুপ্ত রাজাদের সার্বভৌমত্বের তথ্য প্রদান করে। এই তাম্রশাসনটি একাধারে গুপ্তদের রাজনৈতিক ইতিহাস এবং তাদের রাজত্বকাল সম্পর্কে আলোকপাত করে। তাম্রশাসনুসারেই জানা যায় যে, পুন্ড্রবর্ধন বা বাংলার উত্তরাঞ্চলে গুপ্ত শাসকদের সংঘবদ্ধ ও স্থিতিশীল শাসন ব্যবস্থা বজায় ছিল। পূর্ব বঙ্গের কুমিল্লা জেলায় বৈন্যগুপ্তের গুণাইগড় তাম্রশাসনটি তথ্য দেয় যে, মহারাজা বৈন্যগুপ্ত বিজিত অঞ্চল ত্রিপুরা থেকে তাঁর সামন্ত মহারাজা রুদ্র দত্তকে উত্তর মন্ডলের একটি বৌদ্ধ বিহার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছু ভূমিদান করেছিলেন। এতে আরো উল্লেখ হয়েছে যে, সমতট অঞ্চলের উত্তর মন্ডলের ভূক্তির শাসক ছিলেন বিজয় গুপ্ত। তাঁর সময় ছিল গুপ্তবর্ষ ১৮৮/৫০৭ অব্দ। রাজকীয় সীলেও মহারাজা বিজয়গুপ্ত-এর নাম সুস্পষ্ট।  [নাসরীন আক্তার]