ছাতক উপজেলা
ছাতক উপজেলা (সুনামগঞ্জ জেলা) আয়তন: ৪৩৪.৭৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৪৯´ থেকে ২৫°০৬´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°২৭´ থেকে ৯১°৪৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে জগন্নাথপুর উপজেলা, পূর্বে কোম্পানীগঞ্জ (সিলেট), সিলেট সদর এবং বিশ্বনাথ উপজেলা, পশ্চিমে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও দোয়ারাবাজার উপজেলা।
জনসংখ্যা ৩৩৪৫৪৬; পুরুষ ১৭১৭৬১, মহিলা ১৬২৭৮৫। মুসলিম ৩১৩৯৭১, হিন্দু ২০২৩৮, বৌদ্ধ ৭৪, খ্রিস্টান ১৭ এবং অন্যান্য ২৪৬।
জলাশয় প্রধান নদী: সুরমা। হেলু বিল, হলুদা বিল, কুরী বিল, বারুকা বিল, সাতবিলা বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯০৮ সালে (পূর্ণাঙ্গরূপ লাভ করে ১৯২২ সালে) এবং উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮২ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১৩ | ৩১১ | ৫২৪ | ৩৮৬৭০ | ২৯৫৮৭৬ | ৭৬৬ | ৫৪.২ | ৩৩.৮ |
পৌরসভা | |||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
১১.৮০ | ৯ | ২২ | ৩৪১৭২ | ২৮৯৬ | ৫৫.৯০ |
উপজেলা শহর | ||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
৫.৫৮ | ৪ | ৪৪৯৮ | ৮০৬ | ৩৯.৬০ |
ইউনিয়ন | ||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |
পুরুষ | মহিলা | |||
উত্তর খুরমা ৯৪ | ৬৫৯৪ | ৭৪৬৫ | ৭৬০৮ | ৩২.১৭ |
কলারুকা ৫৭ | ৮৮৭৩ | ১৪৮০০ | ১৪২০৩ | ৩০.২৪ |
চরমহল্লা ১৪ | ৮০৫৭ | ৯৭৪০ | ৯৪৬৪ | ২৭.৯৬ |
ছাতক ১৩ | ৪৯৬৩ | ৪৯৩১ | ৪৮৩৩ | ২৫.৫৭ |
জাওয়ারবাজার ৫২ | ৯০৯১ | ১৪৩৯৫ | ১৩০৮৩ | ৩১.৮৭ |
দক্ষিণ ইসলামপুর ৪৭ | ৯৫৩৬ | ১৩১১৬ | ১২১৭৫ | ৩১.০০ |
দক্ষিণ খুরমা ৪২ | ৮১১৭ | ৯৪৫০ | ৯১৬৩ | ৩৯.৫৫ |
দুলারবাজার ৩৮ | ৯৯৩২ | ১৬৫৯৭ | ১৫৫৫৩ | ৪২.২৬ |
নোয়ারাই ৭৬ | ৮০১৪ | ১৫০২৩ | ১৪৫৮০ | ২০.০৬ |
ভাটগা ১১ | ১১৭৪৫ | ১৩০১৫ | ১২৫৫৫ | ৩৮.৭৭ |
সিংচাপইড় ৯২ | ৭৬৫৫ | ১০০৮৬ | ৯৯৩৮ | ৩৪.৩০ |
সৈলা আফজলাবাদ ৯০ | ৮১৯৮ | ১২৯৭৫ | ১২২৮১ | ৪১.৬৪ |
সৈয়দেরগাঁও ৮৫ | ৪৩৯২ | ১১৯৩৯ | ১১৪০৬ | ৩৯.৬৫ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ বাগবাড়ি টিলা।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ১৭৮৮ সালে এ উপজেলার গঙ্গা সিংহ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। কোম্পানির সৈন্যদের সঙ্গে লড়াইয়ে তিনি বন্দী হন এবং পরে নদীতে ঝ^ঁাপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। ১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং ১১ জন আহত হন। এছাড়া হাদার টিলা ও দুরবিন টিলায়ও পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াই হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন শিখা সতের (মাধবপুর)। সবচেয়ে পরিচিত স্মারকটি হলো ছাতকের কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধ।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৬.৩%; পুরুষ ৪০.০%, মহিলা ৩২.৪%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ছাতক ডিগ্রি কলেজ (১৯৭২), গোবিন্দগঞ্জ আঃ হক স্মৃতি ডিগ্রি কলেজ (১৯৭৪), জাউয়াবাজার কলেজ (১৯৯৫), ছাতক টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (১৯৮১), চন্দ্রনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৫৭), ছাতক বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪১), গোবিন্দগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৭), জালালিয়া আলিম মাদ্রাসা (১৯৮০)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাময়িকী: সুচয়ন, প্রত্যায়ন, মঙ্গলা (১৯০৬) (অবলুপ্ত)। সাপ্তাহিক: ছাতক কণ্ঠ, ছাতক বার্তা (অবলুপ্ত)। মাসিক: ঝংকার (১৯২৯), প্রদীপ (১৯২৯) (অবলুপ্ত)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, সিনেমা হল ১, নাট্য সংগঠন ৩, অন্যান্য ২।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫২.১৫%, অকৃষি শ্রমিক ১০.৩৩%, শিল্প ০.৬০%, ব্যবসা ১০.১৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.১৯%, চাকরি ৭.১৬%, নির্মাণ ০.৮৯%, ধর্মীয় সেবা ০.৪২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৩.২৩% এবং অন্যান্য ১৩.৮৪%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৬.৮৭%, ভূমিহীন ৫৩.১৩%। শহরে ৩৩.৪৮% এবং গ্রামে ৪৮.৮৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, তিল, তিসি, শাকসবজি।
প্রধান ফল-ফলাদিব কমলালেবু, আনারস, লিচু।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস ৩০, গবাদিপশু খামার ৩৭, হাঁস-মুরগির খামার ১৩০, নার্সারি ৭।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৭৩.৯২ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩০৫.৯০ কিমি; রেলপথ ৩৪; রজ্জুপথ (রোপওয়ে) ১৯ কিমি; নদীপথ ১.৭০ নটিক্যাল মাইল।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি।
শিল্প ও কলকারখানা ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, ছাতক মন্ড ও কাগজকল, কংক্রিট ও স্লিপার প্ল্যান্ট এবং চুন শিল্প। ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি (১৯৪১), লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট কোম্পানি (২০০০), নিটল পাম্প অ্যান্ড পেপার মিল ও প্রি স্টেস্ড কনক্রিট স্লিপার কোং উল্লেখযোগ্য।
কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, বেত ও বাঁশশিল্প, নলখাগড়া ও শনের তৈরি শিল্পকর্ম প্রভৃতি।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৮। ছাতক বাজার, গোবিন্দগঞ্জ বাজার, জাউয়া বাজার ও দোলারবাজার এবং মণিপুরীদের রাস পূর্ণিমার মেলা ও দূরবীন শাহের মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য কমলালেবু, প্রাকৃতিক গ্যাস, সিমেন্ট, চুনাপাথর, কাগজ ও কাগজের মন্ড।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৮.৮২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ চুন, চুনাপাথর, বালি, গ্যাস, বাঁশ ও বেত।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৫৬.৮৮%, পুকুর ২৩.৯৫%, ট্যাপ ৩.৯৮% এবং অন্যান্য ১৫.১৯%। উপজেলার পৌরসভায় ২৩.৫% এবং ইউনিয়নে ১২.২৬% অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৬.০৫% (গ্রামে ৩২.৪০% ও শহরে ৬০.৬৫%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৮.৭১% (গ্রামে ৫১.০২% ও শহরে ৩৩.১৩%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৫.২৪% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১০, কমিউনিটি ক্লিনিক ১২।
এনজিও ব্র্যাক, কেয়ার উল্লেখযোগ্য। [আশফাক হোসেন]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ছাতক উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।