চুক্তি আইন
চুক্তি আইন একাধিক পক্ষের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি সম্পর্কিত আইন। এর উদ্দেশ্য হলো একটি আইনগত বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা। প্রধানত দুটি উপাদানের সমন্বয়ে একটি চুক্তির জন্ম হয়, প্রথমত একটি ঐকমত্য, দ্বিতীয়ত একটি আইনগত দায়িত্ব যা আইন দ্বারা বলবৎযোগ্য।
এদেশে ব্রিটিশ শাসনের পূর্বে মুসলিম আইনে চুক্তির নীতিগুলো জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমাজের সব সদস্যের উপর প্রযোজ্য ছিল। তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির বিশেষ বিধিবিধান বিঘ্নিত করা হতো না। সyুপ্রম কোর্ট কর্তৃক প্রেসিডেন্সি টাউন কোলকাতায় ইংলিশ আইনের যত্রতত্র ব্যবহারের কারণে দেশীয় লোকের অসুবিধার সৃষ্টি হয় এবং তাদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। এ সমস্যা নিরসনকল্পে ১৭৮১ সালে ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা এক আইন পাশ করে যা মুসলমানদের নিজেদের মধ্যে চুক্তি করার জন্য মুসলিম চুক্তি আইন এবং হিন্দুদের নিজেদের মধ্যে চুক্তি করার ব্যাপারে হিন্দু চুক্তি আইন প্রয়োগের সুযোগ করে দেয়। কিন্তু ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী প্রসিডেন্সি শহরে বসবাসরত ইংরেজ নরনারীসহ সকল বিদেশী এবং যারা প্রেসিডেন্সি শহরের বাইরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিভিন্ন কারখানায় কর্মরত ছিলেন তাদের সবার ক্ষেত্রে সাধারণ ইংলিশ আইনের নীতি প্রয়োগ অব্যাহত রাখে। ব্রিটিশরা ক্রমান্বয়ে তাদের নীতি পরিবর্তন করা শুরু করে এবং বিধিমালা জারীর মাধ্যমে ইংলিশ কমন ল’য়ের কিছু কিছু নীতি চালু করে। বিধিগুলো প্রণয়ন করেন গভর্নর-জেনারেল-ইন-কাউন্সিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত তারা দেশের আইনকে বিধিবদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এভাবেই ১৮৭২ সালে ইন্ডিয়ান কন্ট্রাক্ট অ্যাক্টের প্রবর্তন হয় যা অল্পবিস্তর পরিবর্তন সহ এখনও বাংলাদেশে কার্যকর। এ আইনে চুক্তির সাধারণ নীতিগুলো বিধৃত আছে। গোড়াতে এ আইনে ৭২-১২৩ নং ধারায় পণ্য বিক্রি সংক্রান্ত বিধান সন্নিবেশিত ছিল যা পণ্য বিক্রি আইন, ১৯৩০ বিধিবদ্ধ হওয়ার পর বাতিল হয়ে যায়। এছাড়া ২৩৯-২৬৬ নং ধারায় ছিল অংশীদারিত্ব সম্পর্কিত বিধান যা অংশীদারিত্ব আইন, ১৯৩২ বিধিবদ্ধ হওয়ার পর বাতিল হয়ে যায়। উপরোক্ত তিনটি আইন বিধিবদ্ধ হওয়া ছাড়াও পণ্য পরিবহন আইন, ১৮৬৫, রেলওয়েজ আইন, ১৮৯০, সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন আইন, ১৯২৫, বিমান পরিবহন আইন, ১৯৩৪ চুক্তির বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। উপরিউক্ত ধারাগুলোর পরিবর্তনের পর চুক্তি আইনে চুক্তির সাধারণ নীতিমালা সন্নিবেশিত আছে (ধারা ১-৭৫) এবং সুনির্দিষ্ট ধরনের চুক্তির বিধান আছে। যেমন, ক্ষতিপূরণ ও জামানত চুক্তি (ধারা ১২৪-১৪৭), জিম্মা ও অস্থাবর বন্ধক চুক্তি (ধারা ১৪৮-১৮১) এবং প্রতিনিধিত্ব চুক্তি (ধারা ১৮২-২৩৮) [কাজী এবাদুল হক]