চকোরিয়া উপজেলা

চকোরিয়া উপজেলা (কক্সবাজার জেলা)  আয়তন: ৯৭০.৩২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২১°৩৪´ থেকে ২১°৫৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৫৪´ থেকে ৯২°৫৪´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে লোহাগাড়া, বাঁশখালী এবং লামা উপজেলা, দক্ষিণে কক্সবাজার সদর এবং রামু উপজেলা, পূর্বে লামা এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা, পশ্চিমে মহেশখালী ও পেকুয়া উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩১৯১৪২; পুরুষ ১৬৪৭৭৫, মহিলা ১৫৪৩৬৭। মুসলিম ৪৭৪৯৭৭, হিন্দু ২২৩৭৫, বৌদ্ধ ১২৯৯, খ্রিস্টান ৪১৩৩ এবং অন্যান্য ৬০৬। এ উপজেলায় মগ, মারমা, মুরং ও চাকমা প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: মাতামুহুরী ও বড় মাতামুহুরী এবং মহেশখালী চ্যানেল ও কাইয়ার বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন চকোরিয়া থানা গঠিত হয় ১৭৯৩ সালে এবং উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৮ ৫৫ ২২১ ৫০৯৯৩ ৪৫২৩৯৭ ৩২৯ ৩৯.৯৬ ৩১.১১
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৫.৭৭ ২৩ ৫০৯৯৩ ৩২৩৪ ৩৯.৯৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কাইয়ার বিল ৬১ ১৯৭০ ৮৩৯৪ ৮১৬৬ ৩০.৯২
কাখারা ৫৫ ১৪০৮৭ ১৪৫৩৮ ১৩৪৯৭ ৩৪.১১
কোনাখালী ২২ ২৪৯৫ ৩৯৩৪ ৩৯১২ ২৮.৪৪
খুন্তাখালী ৬৭ ১৯২৪৯ ১৪০৬৫ ১২৩৬১ ৩৫.০৭
চিরিঙ্গা ২৭ ৫৩৫৫ ৬৬১২ ৫৯৩৬ ২৩.৩৫
ডুলাহাজরা ৩৩ ১৬৪৯৯ ১৭০০৪ ১৫৬৫৭ ৩৪.৭৬
ঢেমুশিয়া ৯৪ ১৯৯৩ ৫২০০ ৪৮৯৪ ২২.২০
পশ্চিম বড় ভেওলা ৯৪ ৬৪১৫ ৯৩০২ ৮৫৬৭ ২৯.৭২
পূর্ব বড় ভেওলা ৩৯ ১১১৭৬ ১১৩৭৩ ১০৮৮৯ ৩৩.৯৪
ফাইসাখালী ৪৪ ৪৪০০ ৯৬৮২ ৯২৬৩ ৩৬.৫৩
বড়ইতলী ১৬ ৬৫০০০ ১৩১৮৫ ১৩০০৫ ৩২.২৬
বদরখালী ১০ ৪৩৭৫ ১৩১১৩ ১২২৬৩ ৩২.৫৫
বমোবিলছড়ি ১২ ২৯৩৭ ৫৭২২ ৪৪৬৪ ৩৫.২৭
ভেওলা মানিক চর ২২ ৬৩২০০ ১৫৪৭৩ ১৫১১০ ৩২.০০
লাক্ষ্যার চর ৭২ ১৪৭৮ ৬৪৫১ ৬০০৭ ৪০.৮১
সুরাজপুর মানিকপুর ৫৫ ২২৮৪ ২৫৬১ ২৩৭৩ ১৯.৪৫
সাহার বিল ৮০ ২৫৭৭ ৮২৭৮ ৭৫৬৫ ৩৮.৭৬
হারবাং ৫০ ১৭০৯২ ১১৫৮৩ ১১৬১৭ ৩২.০৯

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ শাহ উমরের মাযার, মানিকপুরে ফজল কিউকের সাত গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ (১৮৭৩)।

মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকবাহিনী ১৩ জন গ্রামবাসিকে গুলি করে হত্যা করে এবং বিভিন্ন স্থানে শতাধিক ঘরবাড়ি ও দোকানপাট জ্বালিয়ে দেয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন স্মৃতিস্তম্ভ ১ (শহীদ আবদুল হামিদ)।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪৫৫, মন্দির ৫২, গির্জা ৩, প্যাগোডা ১৬।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৩.৪৮%; পুরুষ ৩৯.১৮%, মহিলা ৩০.৫৪%। কলেজ ৪, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৪, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৫৩, স্যাটেলাইট স্কুল ১৯, মাদ্রাসা ৯৮৩। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: চকোরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), চকোরিয়া বহুমুখী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, মানিকপুর বার্মিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮২৮), হারবাং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮৪), পেকুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১৮), সাহারবিল আনওয়ারুল উলুম সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯১৮)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক চকোরী, পাক্ষিক মেহেদী।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৫২, সাহিত্য পরিষদ ৩, মহিলা সংগঠন ২২, নাট্যদল ২, খেলার মাঠ ৫০।

দর্শনীয় স্থান বা পর্যটন কেন্দ্র  ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক, চকোরিয়া সুন্দরবন, ডুলাহাজরা হরিণ প্রজনন কেন্দ্র, বীর কমলার দিঘি।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৩.০৯%, অকৃষি শ্রমিক ৭.৮০%, শিল্প ০.৭৫%, ব্যবসা ১৫.০১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৯৪%, চাকরি ৬.৭০%, নির্মাণ ১.১০%, ধর্মীয় সেবা ০.২৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.১৩% এবং অন্যান্য ১১.২৪%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৩৪.৩০% এবং ভূমিহীন ৬৫.৭০%। শহরে ২৫.৯৫% এবং গ্রামে ৩৫.১৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, সরিষা, মিষ্টি আলু, মরিচ, ভুট্টা, আখ, গম, চীনাবাদাম, পান, তামাক, ফুলকপি, টমেটো, বাঁধাকপি, বেগুন, ঢেড়শ, বরবটি, ফেলন।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি মসুর, ছোলা, কাউন, তিসি।

প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে, আনারস, পেয়ারা, লেবু, তরমুজ।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা আটাকল, ধানকল, করাতকল, বরফকল, লবণ কারখানা, ছাপাখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, ওয়েল্ডিং কারখানা, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৯, মেলা ১। রাজাখালী আলেক শাহ বাজার, পেকুয়া হাট, বদরখালী হাট, খুন্তাখালী হাট, মগবাজার এবং চকোরিয়ার ঘোড়দৌড় মেলা।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য চিংড়ি, লবণ, তামাক, চীনাবাদাম, সরিষা, ময়দা, তরমুজ, কাঠ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার ১২.৩৭%  পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৪.৩২%, ট্যাপ ০.৫১%, পুকুর ১.০৭% এবং অন্যান্য ৪.১০%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩১.৭০% (শহরে ৬৬.৯৪% এবং গ্রামে ২৭.৯৫%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১১.৪১% (শহরে ৭.৬৫% এবং গ্রামে ১১.৮২%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৫৬.৮২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র  উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৬, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭, হাসপাতাল ২।

প্রাকৃতিক দূর্যোগ  ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে এ উপজেলার প্রায় ১৬৭০৫ জন লোক মারা যায়।

এনজিও ব্র্র্যাক, কেয়ার, কারিতাস, প্রশিকা,আশা, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট।  [জাকের উল্লাহ চকোরী]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; চকোরিয়া উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।