কোচ

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৯:৪৯, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

কোচ বাংলাদেশে বসবাসকারী অন্যতম প্রাচীন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। কোচরা মাতৃভূমি কোচবিহার পরিত্যাগ করে ময়মনসিংহ জেলায় তাদের আবাস গড়ে তোলে। বর্তমানে শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী এবং শ্রীবর্দী উপজেলায় তাদের বসবাস। বর্তমানে তাদের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার।

কোচ সম্প্রদায় আটটি দলে বিভক্ত যথা: ওয়ানাং, হরিগাইয়া, সাতপাড়ি, দশগাইয়া, চাপ্রা, তিনথেকিয়া, শংকর ও মারগান। তারা এ দলগুলিকে ভাগ বলে অভিহিত করে। প্রত্যেক ভাগের রয়েছে অনেক গোত্র। কোচরা গোত্রকে নিকিনি বলে। কোচ সমাজ পিতৃপ্রধান। তবে পরিবারের সন্তানসন্তুতি মায়ের গোত্রনাম গ্রহণ করে। পুত্র সন্তানেরাই পারিবারিক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। নিজ গোত্র বা নিকিনির মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ। যৌথ এবং একক পরিবার প্রথা চালু থাকলেও বর্তমানে একক পরিবারের সংখ্যাই বেশি। কোন সমস্যার উদ্ভব হলে কোচরা সাধারণত সামাজিকভাবে তা নিরসন করে। কোচ মেয়েরা বিয়ের পর স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য স্বামীগৃহে চলে যায়। কোচ মহিলারা সিঁথিতে সিঁদুর পরে এবং হাতে চুড়ির সঙ্গে শাঁখা ব্যবহার করে। কোচ সমাজে একবিবাহ প্রথাই প্রচলিত। তবে কোনো কোনো পুরুষকে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করতেও দেখা যায়।

কোচদের প্রধান খাদ্য ভাত। তাদের অধিকাংশই আমিষভোজী। তারা শাকসবজি, ডাল, মাছ, ডিম ও মাংস আহার করে। গোমাংস তারা আহার করেনা। শূকরের মাংস তাদের অতি প্রিয়। খরগোশ, সজারু প্রভৃতির মাংস তারা পছন্দ করে। মাছ ছাড়াও কচ্ছপ, কুচিয়া প্রভৃতি তাদের নিকট প্রিয়। রান্নার কাজে তারা তৈল, ক্ষার বা সোডা এবং শুঁটকী মাছ ব্যবহার করে। চালের গুঁড়া এবং সোডা সহযোগে রান্না করা শূকরের মাংস তাদের কাছে উপাদেয়। বিভিন্ন পালাপার্বনে তারা চালের  পিঠা তৈরি করে। কোচরা মদপান করে। তবে যারা গুরুর কাছে দীক্ষামন্ত্র গ্রহণ করেছে তারা মদ, মাংস পরিহার করে চলে। দুধ এবং দুগ্ধজাত খাদ্যসামগ্রীর প্রতি তাদের আগ্রহ স্বাভাবিক। নানা উৎসব কিংবা বিয়ের অনুষ্ঠানে মাছ মাংসের পাশাপাশি তারা ক্ষীর, পায়েস, দই, মিষ্টি প্রভৃতি পরিবেশন করে। কোচ পুরুষেরা ধুতি, লুঙ্গি, জামা, গেঞ্জি প্রভৃতি ব্যবহার করে। কোচ মহিলাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পোশাক রয়েছে যা তারা ঘরোয়া পরিবেশে ব্যবহার করে। এ পোশাককে লেফেন বলা হয়। কোচ মহিলারা জামা অথবা গেঞ্জির সঙ্গে লেফেন ব্যবহার করে।

কোচরা একদিকে যেমন দুর্গাপূজা, কালীপূজা, স্বরস্বতীপূজা, লক্ষ্মীপূজা সম্পন্ন করেন তেমনি আদি ধর্মের দেবদেবীরও পূজা করে। তাদের আদি ধমের্র প্রধান দেবদেবী হলো ঋষি এবং তার পত্মী যোগমায়া। কোচেরা এই দুজনকেই বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকর্তা এবং পালনকর্তা হিসাবে বিশ্বাস করে। দেবী কামাখ্যাও কোচ সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান দেবী। আদি ধর্মের দেবদেবীর পূজা তাদের নিজস্ব পুরোহিতরাই সম্পন্ন করেন। এই পুরোহিতগণকে তারা দেউসী ও আজেং নামে অভিহিত করে। গোত্র পূজার সময় আজেং পৌরহিত্য করেন। ঋষিপূজা এবং গোত্রপূজা বাদেও আজেংদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে গোরভুক্ত যে কোনো ইচ্ছুক ব্যক্তিকে দীক্ষামন্ত্র প্রদান করা যার ফলে সে নিজ গোত্রের গুরু হয়।

কোচদের মধ্যে শিক্ষিতের সংখ্যা শতকরা প্রায় ২৫ জন। ছেলেমেয়েরা বাংলা ভাষার মাধ্যমে  শিক্ষাগ্রহণ করে। কোচদের নিজস্ব ভাষা রয়েছে, তবে এ ভাষার বর্ণমালা নেই। কৃষিকাজ কোচদের প্রধান জীবিকা। ভূ-সম্পত্তি না থাকার কারণে তাদের অধিকাংশ পরিবারই প্রান্তিক চাষীতে পরিণত হয়েছে। চাষাবাদের বাইরে তাদের অন্য কোনো পেশা নেই বললেই চলে। এসব কারণে তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়।  [সুভাষ জেংচাম]