গাবতলী উপজেলা
গাবতলী উপজেলা (বগুড়া জেলা) আয়তন: ২৩৯.৬০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৪৬´ থেকে ২৫°০১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°২২´ থেকে ৮৯°৩৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে শিবগঞ্জ (বগুড়া) ও সোনাতলা উপজেলা, দক্ষিণে ধুনট উপজেলা, পূর্বে সারিয়াকান্দি উপজেলা, পশ্চিমে বগুড়া সদর ও শাহজাহানপুর উপজেলা।
জনসংখ্যা ২৯০১৯০; পুরুষ ১৪৮৭২৭, মহিলা ১৪১৪৬৩। মুসলিম ২৭১৬৩৩, হিন্দু ১৮৫০৮, বৌদ্ধ ১৬ এবং অন্যান্য ৩১।
জলাশয় প্রধান নদী: ইছামতি, বাঙ্গালী ও সুখদহ। কাটলাহার বিল, ডুমার বিল, চরার বিল ও উনচুকি বিল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন থানা গাঠিত হয় ১৯১৪ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ১১ | ১০৬ | ২১৪ | ৩১৪৩ | ২৮৭০৪৭ | ১২১১ | ৬৭.৭ | ৩৯.৪ |
উপজেলা শহর | ||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
১.২১ | ১ | ৩১৪৩ | ২৫৯৮ | ৬৭.১৭ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
কাগইল ৪৭ | ৮০১৭ | ১০৩১৭ | ৯৫৬৬ | ৪২.৪৪ | ||||
গাবতলী ৩৩ | ৫১০০ | ১৪২৮৮ | ১৩৬৬১ | ৪৯.৪৭ | ||||
দক্ষিণপাড়া ১৭ | ৪২৬৩ | ৮১৬৫ | ৭৯৭২ | ৩৬.৬১ | ||||
দুর্গাহাটা ২৭ | ৬৬৬১ | ১৫৯৭১ | ১৫৫৯০ | ৩৫.৮৩ | ||||
নসিপুর ৬৭ | ৪৩৪৯ | ৯৮৪৫ | ৯৫১৭ | ৩৭.৬৭ | ||||
নরুয়ামালা ৬১ | ৪৯৮৩ | ১৩৪৬২ | ১২৮১৮ | ৪১.১২ | ||||
নেপালতলী ৭৪ | ৭৫৫২ | ২০০৩৭ | ১৮৮৮০ | ৪২.০৯ | ||||
বালিয়াদীঘি ৬ | ৫৪০২ | ১১৪০২ | ১০৯৮৪ | ৩২.৬০ | ||||
মহিষাবন ৫৪ | ৫৭৮৪ | ১৫২৩৭ | ১৪১৪৫ | ৩৭.৬৯ | ||||
রামেশ্বরপুর ৮১ | ৪৩২৪ | ১৩১৬৩ | ১২৪৫৫ | ৩৬.৯৪ | ||||
সোনারাই ৮৮ | ৭০৩৬ | ১৬৮৪০ | ১৫৮৭৫ | ৪০.৫৮ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কালীমন্দির ও মহাশ্মশান (১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দ, আমতলী গ্রাম), মাদার শাহ গাজীর মসজিদ ও মাযার (বাগবাড়ি গ্রাম)।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি ওহাবী-আন্দোলন ও খেলাফত-আন্দোলনে এ উপজেলার জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল পাকবাহিনী স্থানীয় বিহারি ও রাজাকারদের সহযোগিতায় নিরীহ লোকদের নির্মমভাবে হত্যা করে। সেসময় তারা গাবতলীতে একটি মিলিটারি ক্যাম্প স্থাপন করে। ১৫ নভেম্বর বালিয়াদীঘি ইউনিয়নের দাড়িপাড়া গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর লড়াইয়ে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ কমান্ডার শহীদ হন। ২৫ নভেম্বর জয়ভোগা গ্রামের রেলব্রীজের দখল নিয়ে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে কিছুসংখ্যক নিরীহ লোক মারা যায়। ১৩ ডিসেম্বর পাকসেনারা পালিয়ে যাওয়ার সময় ২ জন নিরীহ লোককে হত্যা করলে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে তাদের সম্মুখ লড়াইয়ে ১ জন পাকসেনা নিহত হয়। ১৬ ডিসেম্বর ক্ষুদ্রপেরী গ্রামের জঙ্গলে ৪ জন পাকসেনা আত্মগোপন করলে তাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বন্দুকযুদ্ধে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং পাকসেনারা নিহত হয়।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪৫৫, মন্দির ২১।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৯.৭%; পুরুষ ৪৩.৪%, মহিলা ৩৫.৮%। কলেজ ৯, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৭৯, কমিউনিটি স্কুল ২, মাদ্রাসা ৩০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কাগইল করুণাকান্ত উচ্চবিদ্যালয়, সোন্দাবাড়ি দারুল হাদীস রহমানীয়া মাদ্রাসা (১৭০০)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী শিল্প-সাহিত্য পত্রিকা ‘বৃত্ত‘ ও সাহিত্য পত্রিকা ‘দোঅাঁশ’।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ১৬, থিয়েটার ১, সিনেমা হল ২, মহিলা সংগঠন ২, খেলার মাঠ ৩৮।
বিনোদনকেন্দ্র তরফমেরু গ্রামের দৃষ্টিনন্দন পার্ক।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৩.২৭%, অকৃষি শ্রমিক ২.৪০%, শিল্প ০.৯৯%, ব্যবসা ১৩.৬৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৫.৪০%, চাকরি ৫.০৭%, নির্মাণ ১.৬৫%, ধর্মীয় সেবা ০.১৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৭১% এবং অন্যান্য ৬.৭০%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৮.১৫%, ভূমিহীন ৪১.৮৫%। শহরে ৫৭.৪৭% এবং গ্রামে ৫৮.১৬% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, আলু, ইক্ষু, সরিষা, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি বোনা আমন ও আউশ ধান, মিষ্টি আলু, তিল, কাউন।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে, পেয়ারা।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১২৫ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৫৮ কিমি; রেলপথ ১২ কিমি, রেলস্টেশন ২।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা খাদ্য ও পানীয় শিল্প, বরফকল।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, সূচিশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ, রেশমগুটি উৎপাদন কেন্দ্র।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৫। নরুয়ামালা হাট, তরণী হাট, সুখানপুকুর হাট, পীরগাছা হাট, বাইগুনী হাট, পেরীর হাট, ডাকুমারা হাট এবং গোলাবাড়ি বাজার ও পোড়াদহ মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য কলা, পাট, আলু, শাকসবজি।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ১৫.৩২% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ এ উপজেলার তল্লাতলায় তেল খনির সন্ধান পাওয়া গেছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.৬৪%, ট্যাপ ০.৩৩%, পুকুর ০.১৮% এবং অন্যান্য ৫.৮৫%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২৪.৬৮% (গ্রামে ২৪.৩৬% ও শহরে ৫৫.৮৮%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৭.২৬% (গ্রামে ৩৭.২৭% ও শহরে ৩৬.৫৭%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৩৮.০৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮, স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র ৬।
এনজিও ব্র্যাক, আশা, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ। [সরকার আব্দুল হাই]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; গাবতলী উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।