কোকিল

Nasirkhan (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১৪:০২, ১৩ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

কোকিল (Cuckoo)  Cuculiformes বর্গের বৈশিষ্ট্যময় এক দল পাখি। পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র ১৩০ প্রজাতির কোকিল আছে। বাংলাদেশের ২০ প্রজাতির কোকিলের মধ্যে ১৪টি স্থায়ী বাসিন্দা এবং ৬টি পরিযায়ী (সারণি)।

সারণি  বাংলাদেশের কোকিল (Aves, Cuculiformes:  Cuculidae, Centropodidae)

বর্গ  বৈজ্ঞানিক নাম  ইংরেজি নাম স্থানীয় নাম বিস্তৃতি
স্থায়ী বাসিন্দা কোকিল
Cuculidae    Cacomantis merulinus Plaintive Cuckoo (Rufous-bellied Plaintive Cuckoo)  চাতক/সরগম সর্বত্র
Cacomantis sonneratii  Banded Bay Cuckoo দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল, উপকূলীয় দ্বীপসমূহ
Centropodidae (Cuculidae) Centropus bengalensis (Centropus toulou) Lesser  Coucal কুকাল  পার্বত্য বনাঞ্চল
Centropus sinensis  Greater Coucal (Crow-pheasant/Coucal) কানাকুকা/কাউকুকল সর্বত্র
Chrysococcyx maculatus (Chalcites maculatus) Asian Emerald Cuckoo  (Emerald Cuckoo) দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল
Chrysococcyx xanthorhynchus (Chalcites xanthorhynchus) Violet Cuckoo Pied Cuckoo দক্ষিণ-পূর্বের বনাঞ্চল
Clamator jacobinus  (Pied-crested Cuckoo)   পাপিয়া  সর্বত্র
Cuculus micropterus  Indian Cuckoo  বউ-কথা-কও সর্বত্র
Eudynamys scolopacea Asian Cuckoo (Koel) কোকিল/কুলি সর্বত্র
Hierococcyx figax (Cuculus figax)  Hodgson’s Hawk Cuckoo সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল
Hierococcyx varius  (Cuculus varius) Common Hawk Cuckoo  চোখ-গেল  সর্বত্র
Phaenicophaeus leschennaultii (Taccocua leschenaultii) Sirkeer Malkoha [Sirkeer Cuckoo]   চট্টগ্রামের উত্তর-পশ্চিম
Phaenicophaeus tristis (Rhopodytes tristis) Green-billed Malkoha (Large Green-billed Malkoha)  সবুজ কোকিল  দেশের সকল বনাঞ্চল
Surniculus lugubris Drongo Cuckoo  সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল
পরিযায়ী কোকিল
Cuculidae  Clamator coromandus Chestnut-winged Cuckoo (Red-winged Crested Cuckoo)   লালডানা কোকিল  
Cuculus canorus Eurasian Cuckoo (Cuckoo)     - -
Cuculus poliocephalus  Lesser Cuckoo (Small Cuckoo)   - -
Cuculus saturatus Oriental Cuckoo - দেশের উত্তর-পূর্বের বনাঞ্চল
Hierococcyx sparverioides Large Hawk Cuckoo(Cuculus sparverioides) - দেশের উত্তর-পূর্বের বনাঞ্চল
Centropodidae(Cuculidae)  Cuculus saturatus  Oriental Cuckoo(Himalayan Cuckoo) - সর্বত্র

বি.দ্র. সাবেক নাম বন্ধনীতে।

কোকিলের ঠোঁট সামান্য বাঁকানো, পুচ্ছ দীর্ঘ, ডানা চওড়া ও সুচালো, গড়ন লম্বাটে। এদের প্রতি পায়ে দুটি করে আঙুল অগ্রমুখী ও পশ্চাদমুখী। পূর্ব গোলার্ধের কোকিলেরা বৃক্ষবাসী এবং এদের অন্যূন ৫০ প্রজাতি অন্য প্রজাতির পাখির বাসায় ডিম পাড়ে, কখনও এসব ডিম অবিকল পোষক পাখির ডিমের মতো। কোকিল সরাসরি অন্য যেসব পাখির বাসায় ডিম পাড়ে (brood parasitism), সেসব বাসা ছোট ও আবদ্ধ হতে পারে। পোষক পাখি বাসা ছেড়ে দূরে গেলে কোকিল পোষকের একটি ডিম ফেলে দিয়ে সেখানে নিজের একটি ডিম পেড়ে রাখে। প্রায় ১২ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়, বাচ্চার শরীর তখন পুরো খালি থাকে। বাচ্চাটি শীঘ্রই পালক পিতামাতার ডিম বা নবজাত বাচ্চাদের পিঠে তুলে বাসার কিনারায় ঠেলে দেয় এবং পালক পিতামাতার আনা সকল খাবার ও যত্ন ভোগ করে। কোকিল সম্ভবত নিঃসঙ্গচারী, পুরুষরা প্রায়শ অতিশয় আকর্ষণীয় এবং ডাকে উচ্চস্বরে, সুরেলা কণ্ঠে, এমনকি রাতেও; অথচ স্ত্রীরা থাকে আড়ালে, ডাকে ভিন্নভাবে, এমনকি ডাকেও না। এজন্য বাংলাদেশের বহুদৃষ্ট কোকিলকে (Common Hawk Cuckoo) অনেক সময় প্রলাপী পাখি (brainfever bird) বলা হয়। অনেক প্রজাতির কোকিল পরিযায়ী। শুঁয়োপোকা এদের প্রধান খাদ্য।

এশীয় কোকিল (পুরুষ)
এশীয় কোকিল (স্ত্রী)

বাংলাদেশে Pied Cuckoo (পাপিয়া),  Indian Cuckoo (বউ কথা কও), Asian Cuckoo (কোকিল) ও Common Hawk Cuckoo (চোখগেলো) নানা রূপকথা ও বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। ‘বউ কথা কও’ বিরহী স্বামীর প্রিয়তম স্ত্রীর প্রতি কাতর আহবানকে স্মরণ করিয়ে দেয়। মানুষের বিশ্বাস পাখিটি বিষণ্ণ স্বামীর প্রতিমূর্তি। অনেকের কাছে ‘কোকিল’ বসন্তের প্রতীক।

কালো কোকিল  ভারতীয় উপমহাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার কালো রঙের লম্বা লেজবিশিষ্ট বৈশিষ্ট্যময় দুই প্রজাতির কোকিল। কালো কোকিল বা এশীয় কোকিল Eudynamys scolopacea বাংলাদেশেরও বাসিন্দা। কুহু কুহু সুরেলা ডাকের জন্য বিখ্যাত। ভোরে অন্যান্য পাখির আগেই কোকিল ডাকে। স্ত্রী পাখির ডাক ভিন্নতর, তীব্র কিক্-কিক্-কিক্-কিক্ স্বরে এক গাছ থেকে অন্য গাছে যেতে যেতে ডাকে।

লম্বাটে গড়নের এ পাখি আকারে ছোটখাটো পাতিকাকের মতো। পুরুষ পাখি উজ্জ্বল কালো, ঠোঁট হালকা হলুদ, চোখ গাঢ় লাল। স্ত্রী পাখি গাঢ় বাদামি এবং শরীরে সাদা ফোঁটা ও দাগ রয়েছে। পাতাভরা গাছেই এরা খাবার খোঁজে। সাধারণত শীতকালে নীরব থাকে, অতঃপর ক্রমে সরব হয়ে বসন্তে অবিরাম ডাকে। এজন্যই অনেকে কোকিলকে বসন্তের পাখি বলে। এরা বাসা বাঁধে না, কাকসহ কয়েক প্রজাতির পাখির বাসায় ডিম পাড়ে। কালো কোকিল, দাঁড়কাক ও পাতিকাকের ডিম পাড়ার সময় এপ্রিল-আগস্ট এবং ডিম দৃশ্যত অভিন্ন। একই বাসায় পালকপাখি ও কোকিলের ডিম বা ছানা দেখা যায়। মা-কোকিলও কখনও কখনও বাচ্চাদের খাদ্য খাওয়ায়। কোকিল মুখ্যত ফলভুক, তবে নানা ধরনের  কীটপতঙ্গ ও শুঁয়াপোকাও খেয়ে থাকে।

[মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম]