হাজীগঞ্জ উপজেলা
হাজীগঞ্জ উপজেলা (চাঁদপুর জেলা) আয়তন: ১৮৯.৯০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°১২´ থেকে ২৩°২০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৪৫´ থেকে ৯০°৫৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কচুয়া ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা, দক্ষিণে ফরিদগঞ্জ ও রামগঞ্জত উপজেলা, পূর্বে শাহরাস্তি উপজেলা, পশ্চিমে চাঁদপুর সদর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা।
জনসংখ্যা ২৯১৮২৩; পুরুষ ১৪২৯০০, মহিলা ১৪৮৯২৩। মুসলিম ২৭১৬৭৮, হিন্দু ২০০৩২, বৌদ্ধ ৩০, খ্রিস্টান ৩০ এবং অন্যান্য ৫৩।
জলাশয় ডাকাতিয়া ও কচুয়া নদী এবং খোদাই, বোয়ালঝুড়ি, সোনাপুর ও শৈলখালী খাল উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন হাজীগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৮৬৮ সালে। থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালের ১৫ এপ্রিল।
উপজেলা | ||||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১১ | ১৩১ | ১৫১ | ৪৭৬৫৮ | ২৪৪১৬৫ | ১৫৩৭ | ৫৩.৭২ | ৪৮.১৯ |
পৌরসভা | |||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
১৬.০৯ | ০৯ | ১৪ | ৪২৮০৬ | ২৬৬০ | ৫২.৪৫ |
উপজেলা শহর | ||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
৩.৯৪ | ২ | ৭৬৮৩ | ১৯৫০ | ৬৪.৪৩ |
ইউনিয়ন | ||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |
---|---|---|---|---|
পুরুষ | মহিলা | |||
উত্তর কালোচোঁ ৫০ | ৩৬৪২ | ৯৯৬৭ | ১০৭৩৪ | ৪৬.৭২ |
দক্ষিণ কালোচোঁ ৫৫ | ৩৮৯৬ | ১২৬৬৮ | ১৪২৯২ | ৪৪.৮৩ |
উত্তর গন্ধব্যপুর ২৫ | ৪১৯৩ | ৯০১২ | ৯২০৭ | ৪৬.৬৫ |
দক্ষিণ গন্ধব্যপুর ৩০ | ৩৭৩৪ | ৮২৩৬ | ৮৮০৯ | ৫২.৮৫ |
পশ্চিম বড়কুল ২০ | ৩১৪৩ | ১১৫৯০ | ১১৭৯৪ | ৪৪.০১ |
পূর্ববড়কুল ১৮ | ৩৮৯০ | ১১৭৪৩ | ১২০৯৫ | ৪৯.৪০ |
উত্তর রাজারগাঁও ৭০ | ৪৫৪২ | ১২৬৬২ | ১৪২৮১ | ৪৭.৬১ |
বাকিলা ৭৫ | ৩৭৬২ | ১১৫০১ | ১২২৬৩ | ৪৭.৩৯ |
হাজীগঞ্জ সদর ৩৫ | ৫৮৯৩ | ১৬৯৩৩ | ১৭৬৪৭ | ৫৪.৮৪ |
পশ্চিম হাটিলা ৬০ | ২২৪২ | ৬৫১০ | ৭০৪০ | ৪৩.৫২ |
পূর্ব হাটিলা ৬৫ | ৪২৩০ | ৯৮২২ | ১০২১১ | ৫২.৫৩ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ ফিরোজপুর মসজিদ (১৩৪৩ খ্রি.), সুহিলপুর গ্রামের এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ, শৈলখালী খালের ব্রিজ (ষোল শতক), অলিপুরে পাঁচ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ (১৬৯২ খ্রি.), হাজীগঞ্জের বড় মসজিদ, বাকিলার মঠ, বলাখাল হরি সাহার বাড়ি (আঠারো শতক), অলিপুরে বিষ্ণুমূর্তি খচিত পূজার বেদী, লক্ষ্মী নারায়ণ জিউর আখড়া, দরিয়ায়ে হায়াত (দিঘি), শ্রীপুর দিঘি, অলী একাববর (র.) শাহের মাযার, শাহ্ সূজা মসজিদ, আলীগঞ্জে শাহ মাদা খাঁর মাযার, অলিপুরের আলমগিরি মসজিদ।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ১২ মে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকবাহিনী উপজেলার কাশিমপুর গ্রামে ৫০ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। পাকবাহিনী ২৩ অক্টোবর লাউকরায় ৫০ জনকে হত্যা করে এবং বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। পরে মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ চালালে ১৭ জন পাকসেনা নিহত এবং ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন সমাধি ১, স্মৃতিস্তম্ভ ১।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪৯৮, মন্দির ৫৬, গির্জা ১, তীর্থস্থান ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ ও মাদা খাঁ মসজিদ (আলীগঞ্জ)।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৯.১২%; পুরুষ ৫০.২৩%, মহিলা ৪৮.০৯%। কলেজ ১২, পিটিআই ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৩৫, কমিউনিটি বিদ্যালয় ২০, মাদ্রাসা ৪৩। উলেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: হাজীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৯), হাজীগঞ্জ মডেল পাইলট হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ (১৯১৬), হাজীগঞ্জ মডেল কলেজ (১৯৮৬), বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩০), বাকিলা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩০), হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭২), বাকিলা ফাজিল মাদ্রাসা (১৯০৫)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: হাজীগঞ্জ (১৯৯৪), মানব সমাজ (২০০২)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, ক্লাব ১০, সিনেমা হল ২, থিয়েটার ১, মহিলা সংগঠন ২, খেলার মাঠ ২৩।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৭.৯৪%, অকৃষি শ্রমিক ৪.২৬%, শিল্প ০.৬৯%, ব্যবসা ১৭.৭৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৯%, চাকরি ১৪.৯৮%, নির্মাণ ২.৯৭%, ধর্মীয় সেবা ০.৫১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৬.৭৭% এবং অন্যান্য ১১.২৪%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬১.২১%, ভূমিহীন ৩৮.৭৯%। শহরে ৪৩.৬০% এবং গ্রামে ৬৪.৪৩% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, আলু, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি মিষ্টি আলু, তিল, তিসি, সরিষা, বাদাম, কাউন, ডাল, চীনা।
প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, নারিকেল।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৬৪, গবাদিপশু ২, হাঁস-মুরগি ৭১, হ্যাচারি ৫।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৩৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫৭৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৩ কিমি; নৌপথ ১৫ নটিক্যাল মাইল; রেলপথ ৮ কিমি; রেলস্টেশন ২।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা জুটমিল ১, রাইস মিল ১০৪, স’মিল ২৭, বেকারি ২১, বিড়ি ফ্যাক্টরি ২, প্রেস ৬, ইটভাটা ৫, ওয়েল্ডিং কারখানা ১৫।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প ৯৫, মৃৎশিল্প ৬৫, কাঠের কাজ ২০১, বাঁশের কাজ ১০৫, সেলাই কাজ ২৫০।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৮, মেলা ৫। উল্লেখযোগ্য হাটবাজার: হাজীগঞ্জ বাজার, রামপুর বাজার, রাজারগাঁও বাজার, রামচন্দ্রপুর বাজার, চেঙ্গাতলী বাজার ও বাকিলা বাজার এবং আলীগঞ্জ, বড়কুল, বেলঘর-রাজাপুর ও বলাখাল মেলা।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য পাট, পাটজাত দ্রব্য।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সব ক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪০.৫৭% (শহরে ৭১.৩% এবং গ্রামে ৩৪.৯৪%) পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৬.৯৩%, ট্যাপ ২.৩০%, পুকুর ৭.০৩% এবং অন্যান্য ৩.৭৪%। এ উপজেলার ৯৯% অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬২.৪৫% (শহরে ৭৮.৫১% এবং গ্রামে ৫৯.৭১%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৫.৫৩% (শহরে ১২.০৭% এবং গ্রামে ২৮%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ১২.০১% (শহরে ৯.৪২% এবং গ্রামে ১২.৪৯%) পরিবারের কোনো স্যানিটেশন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩, পরিবার ও স্বাস্থ্য কল্যাণ কেন্দ্র ১০, ক্লিনিক ৪, ডায়গনস্টিক সেন্টার ১৫।
এনজিও আশা, প্রশিকা, ব্র্যাক। [মো. তোফায়েল আহম্মেদ শেখ]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; হাজীগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।