গন্ধগোকুল

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২০:১৪, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)

গন্ধগোকুল (Civet)  Carnivora বর্গের Viverridae গোত্রের Viverra গণভুক্ত ছোট থেকে মাঝারি আকারের মাংসাশী স্তন্যপায়ী। নিঃসঙ্গ ও নিশাচর এ প্রাণীগুলি দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার বনাঞ্চলের বাসিন্দা। বিড়ালের তুলনায় এদের চোয়াল দীর্ঘতর, দাঁত সংখ্যাও অধিক। শরীরের রং হালকা-ধূসর, তাতে নানা ধরনের ফোঁটা ও কালো কালো দাগ, পিঠ বরাবর কালো লম্বা লোমের একটি খাড়া শিরা। লেজের নিচে একটি বড় থলের মধ্যে কয়েকটি যৌনগ্রন্থি উন্মুক্ত থাকায় তাতে কস্ত্তরিবৎ তৈলাক্ত সুগন্ধি সঞ্চিত থাকে। এটি তারা নিজেদের এলাকার সীমানা চিহ্নিতকরণে ব্যবহার করে এবং গাছের গুঁড়ি, পাথর ও অন্যান্য বস্ত্তর উপর ছড়িয়ে রাখে। প্রজননকালে স্ত্রী ও পুরুষ বিড়ালের মিলন ঘটানোর ক্ষেত্রেও এটির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। খাঁচাবন্দি আফ্রিকীয় গন্ধগোকুলের গ্রন্থিরস ‘সিভেট’ সুগন্ধি প্রস্ত্ততে ব্যবহূত হয়। গন্ধগোকুলজাতীয় প্রাণীর প্রজাতি সংখ্যা প্রায় ৬৬। বাংলাদেশে গন্ধগোকুলের ৬ প্রজাতির মধ্যে ৩টি বিপন্ন। তথ্যাভাবে অন্য দু প্রজাতির অবস্থা মূল্যায়ন সম্ভব হয় নি। বিপন্ন তিন প্রজাতি নিম্নরূপ।

নোঙর (Common Palm Civet) Paradoxurus hermaphroditus, লম্বা ও রুক্ষ লোমসহ কালচে বাদামি। ওপরের অংশগুলিতে কালো খাড়া ডোরা বা ফোঁটা। মুখের দাগ প্রাণীভেদে ভিন্ন ভিন্ন, তবে চোখের নিচে একটি সাদা ফালি বা ফোঁটা সহজদৃষ্ট, কখনও এটির ওপরে আরেকটি এবং নাকের দুপাশে দুটি। মাথাসহ দেহদৈর্ঘ্য ৬০ সেমি, লেজও ততটা লম্বা, ওজন প্রায় ৪.৫ কেজি। দিনের বেলায় গাছের ডাল বা খোঁড়লে কুন্ডলি পাকিয়ে ঘুমায়। রাতের বেলা গাছ বা মাটিতে পাখি ও স্তন্যপায়ী জীব শিকার করে, ফলমূলও খায়। প্রতি মরসুমে ৩-৪টি বাচ্চা প্রসব করে। দেশের সর্বত্র গাছাগাছালি ভরা অঞ্চলে, বিশেষত আম ও পাম গাছে দেখা যায়। আবাসভূমি ধ্বংসের জন্যই প্রধানত এরা বিপন্ন। ভারত, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, ভিয়েতনাম, লাওস, কাম্পুচিয়া এবং মালয়েশিয়ায়ও আছে।


গন্ধগোকুল


বাগডাস (Large Indian Civet) Viverra zibetha, মাথা ও শরীরের গড়ন লম্বাটে, পা খাটো ও মোটা। শরীরের রং গাঢ় ধূসর, তাতে হলুদ বা বাদামি অাঁচ, সারা শরীরে কালো পটি ও ডোরা। পিঠে কালো লোমের একটি খাড়া শিরা। মাথাসহ দেহদৈর্ঘ প্রায় ৮০ সেমি, লেজ প্রায় ৪৫ সেমি। নিঃসঙ্গ নিশাচর। ছোট স্তন্যপায়ী, পাখি, সাপ, ব্যাঙ, কাঁকড়া ও পোকামাকড় শিকার করে।

বাগডাস


এরা গৃহপালিত হাঁস-মুরগির প্রধান শত্রু। সম্পূরক খাদ্য হিসেবে ফলমূলও খায়। গন্ধগ্রন্থি আকারে বড়, তীব্র দুর্গন্ধ ছড়ায়। প্রসবকাল এপ্রিল-জুন, বাচ্চা প্রতি মরসুমে ৩-৪টি। বনবাদাড়ে ও ঝোপঝাড়ে বাস। সারা দেশে অল্পসংখ্যায় সর্বত্র ছড়ানো। আবাসস্থল ধ্বংস ও হাঁস-মুরগি রক্ষার জন্য ব্যাপক নিধনই বিপন্নতার কারণ। ভারত (উত্তরাঞ্চলে), নেপাল, ভুটান, মায়ানমার, চীন (দক্ষিণাঞ্চল), থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায়ও আছে।

খাটাশ (Small Indian Civet) Viverricula indica, শরীরের রং তামাটে ধূসর বা পাঁশুটে বাদামি, পিঠ ও গলায় রেখা ও ডোরা, বুকের পাশ ও পেছনের দিকে ফুটকি দাগ। ঘাড়ে কয়েকটি আড়াআড়ি দাগ। কালো লেজে সাদা সাদা বেড়। শরীরের গড়ন বাগডাসের মতো, তবে পিঠে খাড়া লোমের শিরা নেই। মাথাসহ দেহদৈর্ঘ্য ৯৫ সেমি, লেজ প্রায় ৩৫ সেমি আর ওজন ৪ কেজি। এরা নিশাচর। গাছে উঠতে পারলেও মাটিতেই শিকার ধরে এবং ইঁদুর, কাঠবিড়ালী, ছোট পাখি, টিকটিকি, কীটপতঙ্গ ও সেগুলির লার্ভা খেয়ে থাকে। গৃহস্থের হাঁস-মুরগি চুরি করে। পূর্ণবয়স্ক খাটাশ খোশমেজাজে থাকলে টিকটিক আওয়াজ করতে থাকে। ভয় পেলে সিভেট-গ্রন্থি থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়।

খাটাশ

নির্দিষ্ট প্রজনন ঋতু নেই, বছরে যে কোনো সময়ে বাচ্চা প্রসব করে। শুষ্ক ও আর্দ্র উভয় অঞ্চলেই বাস। অরণ্যের বদলে নিবিড় তৃণভূমি ও বনবাদাড়ই বেশি পছন্দ। গর্ত, পাথরের নিচে কিংবা উঁচু ঘাস ও ঝোপঝাড়ের তলায় থাকে। সুন্দরবন ও উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ অঞ্চল ছাড়া খাটাশ দেশের সর্বত্রই আছে। আবাসভূমি ধ্বংস ও হাঁস-মুরগি বাঁচানোর জন্য ব্যাপক নিধনের জন্যই এরা বিপন্ন। বাংলাদেশ ছাড়াও খাটাশ আছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মায়নমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওস, কাম্পুচিয়া, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায়।  [মোঃ আনোয়ারুল ইসলাম]