কমলগঞ্জ উপজেলা
কমলগঞ্জ উপজেলা (মৌলভীবাজার জেলা) আয়তন: ৪৮৫.২৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°০৮´ থেকে ২৪°২৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৪৬´ থেকে ৯১°৫০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে রাজনগর উপজেলা, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পূর্বে কুলাউড়া উপজেলা ও ভারতের আসাম রাজ্য, পশ্চিমে শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলা।
জনসংখ্যা ২২৯৬৪৮; পুরুষ ১১৭১১৬, মহিলা ১১২৫৩২। মুসলিম ১৫০১৮২, হিন্দু ৭৬৮৩৬, বৌদ্ধ ২২৭৬, খ্রিস্টান ২৩ এবং অন্যান্য ৩৩১। মনিপুরী, খাসিয়া, ত্রিপুরা (তিপরা), হালাম প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।
জলাশয় প্রধান নদী: ধলাই।
প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯২২ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ৯ | ১১১ | ২৫১ | ২৪৭৯৮ | ২০৪৮৫০ | ৪৭৩ | ৪৭.০ | ৩৯.৯ |
পৌরসভা | |||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ডা | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
২০.৮১ | ৯ | ২৯ | ২৪৭৯৮ | ১১৯২ | ৪৭.০ |
উপজেলা শহর | ||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) |
১০.৯৮ | ৩ | ১০৭৩২ | ৯৭৭ | ৪৪.১০ |
ইউনিয়ন | ||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |
পুরুষ | মহিলা | |||
আদমপুর ১৭ | ৮২৬০ | ১২৬৩৪ | ১২১৫৭ | ৪১.৫৬ |
আলীনগর ১৯ | ৮৯৫৬ | ১৩৫৫৭ | ১২৯৬৩ | ৩৭.০৬ |
ইসলামপুর ২৮ | ২৯২১১ | ১৩০৬৫ | ১২৩৯০ | ৩৪.৮৫ |
কমলগঞ্জ ৩৮ | ১৩১৯৯ | ৯১৮৫ | ৮৮২০ | ৩৮.৪১ |
পতনউষার ৬৬ | ৭৮৪৯ | ১০১৫৩ | ১০০৯৫ | ৪৫.০৮ |
মাধবপুর ৪৭ | ১৫৩৩৭ | ১৩৪৯৯ | ১৩০৩২ | ৩৭.৩৫ |
মুন্সীবাজার ৫৭ | ৩৮৪৪ | ৭২৮০ | ৭১১১ | ৪৩.৭৩ |
রহিমপুর ৭৬ | ১১৫৬০ | ১৫৯৬৬ | ১৪৯৪৮ | ৩৮.৩২ |
শমসেরনগর ৮৫ | ৭১১৬ | ১৪৫৪৫ | ১৪১৮২ | ৪৬.২৬ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি কমলগঞ্জের ভানুবিল এলাকায় বাংলা ১৩০৭ সালে পঞ্চানন সিংহ, কাসেম আলী, বৈকুণ্ঠ শর্ম্মা এবং থেম্বা সিংহ প্রমুখের নেতৃত্বে প্রজা বিদ্রোহ হয়। মোগল ও আফগানদের মধ্যে কমলগঞ্জের পতনঊষার এলাকায় এক লড়াইয়ে আফগান দলপতি খাজা উসমান নিহত হন। তাই এই এলাকা খাজা ওসমানগড় নামে খ্যাত। ১৯৬৮-৬৯ এ সংঘটিত করাইয়ার হাওর কৃষক-আন্দোলন সমগ্র দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে এই উপজেলার শমসেরনগর এলাকায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংগঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ ইপিআর জওয়ান ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মিলিত প্রতিরোধে বহু পাকসেনা নিহত হয়। বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান কমলগঞ্জের সীমান্ত এলাকার আমবাসা গ্রামে শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমি ১ (শমসেরনগর বিমান ঘাঁটি); গণকবর ১ (দেওড়াছড়া চা বাগান ২৫ নং সেকশন); বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান সরণী (আমবাসা)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ২৯৩, মন্দির ১০২, গির্জা ৮।
শিক্ষার হার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়হার ৪০.৭%; পুরুষ ৪৫.৩%, মহিলা ৩৫.৯%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কালী প্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৫), শমসেরনগর এএটিএম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯), এমএ ওহাব উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৩), কমলগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩৪), আব্দুল গফুর চৌধুরী মহিলা কলেজ (২০০০), তেঁতইগাঁও রশিদউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৪), দয়াময়সিংহ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭৩), হাজী উস্তওয়ার উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯৮৩), আবুল ফজল চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৮৫), সুজা মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৯৪), বাসুদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩০), শমসেরনগর সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৪৬), রানীরবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৫৩), রাজদিঘীরপার প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৭২), তেঁতইগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৭৮)।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী অনিয়মিত: জয়বার্তা, ধলাই; অবলুপ্ত: ফরখা, লোকায়ত বাংলা; সাহিত্য পত্রিকা: অর্পণ (১৯৯৮), দাবানল (২০০১)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, সিনেমা হল ২, ক্লাব ৩৫। মনিপুরী ললিত কলা একাডেমী উল্লেখযোগ্য।
দর্শনীয় স্থান কমলগঞ্জের ফুলবাড়িতে দেশের প্রথম ভেষজ বাগান আরোগ্যকুঞ্জ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৬ সালে ১২৫০ হেক্টর এলাকা নিয়ে গঠিত লাউয়াছড়া উদ্যানকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, মাধবপুর লেক, পরীকুন্ড, মনু ব্যারেজ, হাকালুকি হাওর।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৯.৭৭%, অকৃষি শ্রমিক ১৪.৮১%, শিল্প ৫.৩০%, ব্যবসা ৮.৯৬%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৪৬%, চাকরি ৫.০৯%, নির্মাণ ১.৪৩%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৯%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.০৭% এবং অন্যান্য ১৯.৬২%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৩.৬২%, ভূমিহীন ৫৬.৩৮ %। গ্রামে ৪৩.১৭% এবং শহরে ৪৭.৪২% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষিফসল রোপা আমন, রোপা আউশ, গম, আখ, চা, সুপারি, পান, সরিষা,আলু, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি স্থানীয় জাতের ধান (বালাম, নী, নাজিম উদ্দিন), তিল, তিসি।
প্রধান ফল-ফলাদিব আম, কাঁঠাল, আনারস, জাম, লিচু, জাম্বুরা (বাতাবি লেবু), তরমুজ।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৫০ কিমি; রেলপথ ১৯.২৬ কিমি; রেলস্টেশন ২।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা বরফকল, মাঝারি শিল্প, চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা।
কুটিরশিল্প এই উপজেলায় মনিপুরী তাঁতবস্ত্রের অনেক কারখানা রয়েছে।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২০। ভানুগাছ, শমসেরনগর, মুন্সীবাজার ও আদমপুর বাজার এবং চড়কপূজা মেলা (পালিত কোনা ও ছয়চিরি দিঘীরপার), মুন্সীবাজার ঠাকুর বাড়ির মেলা, বারুণী স্নান ও অষ্টমীর মেলা, মনিপুরী রাস পূর্ণিমা মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য চা, আখের গুড়, শাকসবজি, পান।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৬.৩৮% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
প্রাকৃতিক সম্পদ মাগুরছড়া তেল, গ্যাস ও চিরকা বালু উল্লেখযোগ্য।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৭৩.৩১%, ট্যাপ ২.২৩%, পুকুর ৭.৭৭% এবং অন্যান্য ১৬.৬৯%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা উপজেলার ২৫.৮৭% (গ্রামে ২৩.৬৬% এবং শহরে ৪৪.৬১%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৬.৬২ % (গ্রামে ৫৭.৯৭% এবং শহরে ৪৫.২০%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৭.৫১% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৬, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩, দাতব্য চিকিৎসালয় ১।
এনজিও আশা, ব্র্যাক, হীড বাংলাদেশ, বাওপা, কেয়ার, স্বনির্ভর বাংলাদেশ, ভার্ড।
[শাহ আবদুল ওদুদ]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; কমলগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।