অনুকূলচন্দ্র, ঠাকুর
অনুকূলচন্দ্র, ঠাকুর (১৮৮৮-১৯৬৯) হিন্দু সাধক, চিকিৎসক এবং সৎসঙ্গ আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা। ১৮৮৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পাবনা জেলার হেমায়েতপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা শিবচন্দ্র চক্রবর্তী পেশায় ছিলেন একজন ঠিকাদার এবং মাতা মনোমোহিনী দেবী ছিলেন ভগবদ্ভক্তিতে পূর্ণ একজন মহীয়সী নারী।
অনুকূলচন্দ্র পাবনা ইনস্টিটিউশনে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করার পর পশ্চিমবঙ্গের নৈহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল স্কুল থেকে হোমিওপ্যাথিতে ডিগ্রি অর্জন করে নিজ গ্রামে প্র্যাক্টিস শুরু করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন: মানুষ শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক এ তিন প্রকার ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। তাই তিনি মানসিক ব্যাধির চিকিৎসার প্রতিই বেশি জোর দিতেন, কারণ শারীরিক সুস্থতা অনেকটাই মানসিক সুস্থতার ওপর নির্ভর করে। তাই মায়ের নিকট দীক্ষা নেওয়ার পর অনুকূলচন্দ্র মানুষের আত্মিক উন্নয়নের জন্য কীর্তনদল গঠন করেন। কীর্তনের সময় তিনি মাঝে মাঝে দিব্যভাবে আবিষ্ট হয়ে পড়তেন। ওই সময় তাঁর মুখ থেকে উচ্চারিত বাণীসমূহ পরে সংগৃহীত হয়ে পুণ্যপুঁথি নামে প্রকাশিত হয়। তখন থেকেই লোকে তাঁকে ‘ঠাকুর’ বলে সম্বোধন করত।
সত্যনিষ্ঠা, সৎকর্মানুষ্ঠান এবং দীক্ষা গ্রহণের মধ্য দিয়ে মানুষের আত্মিক উন্নতি বিধানের উদ্দেশ্যে তিনি পাবনায় প্রতিষ্ঠা করেন সৎসঙ্গ আশ্রম। শিক্ষা, কৃষি, শিল্প এবং সুবিবাহ- এ চারটি বিষয় হলো সৎসঙ্গের আদর্শ। অনুকূলচন্দ্র লোকহিতার্থে তপোবন বিদ্যালয়, দাতব্য চিকিৎসালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, পাবলিশিং হাউজ, ছাপাখানা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৪৬ সালে তিনি বিহারের দেওঘরে যান এবং সেখানে সৎসঙ্গের আদর্শপুষ্ট একটি নতুন আশ্রম গড়ে তোলেন। ১৯৪৭ সালে বাংলা ভাগ হলে তিনি আর ফিরে আসেননি। অনুকূলচন্দ্র বিপুল সংখ্যক গ্রন্থ রচনা করেছেন। এক হিসাব মতে, তাঁর রচিত বাংলা গ্রন্থের সংখ্যা ৮২ এবং ইংরেজি গ্রন্থের সংখ্যা ১২। এসবের মধ্যে পুণ্যপুঁথি, অনুশ্রুতি (৬ খন্ড), চলার সাথী, শাশ্বতী (৩ খন্ড), প্রীতিবিনায়ক (২ খন্ড) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের শিষ্যসম্প্রদায় এবং সৎসঙ্গের সাংগঠনিক কর্মকান্ড উভয় বাংলার নানা অঞ্চলে আজও সক্রিয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহরে এর আশ্রম ও কার্যালয় আছে। ১৯৬৯ সালের ২৬ জানুয়ারি বিহারের দেওঘরে তিনি পরলোক গমন করেন। [পরেশচন্দ্র মন্ডল]