আঞ্জুমান-ই-উলামা-ই-বাঙ্গালা
আঞ্জুমান-ই-উলামা-ই-বাঙ্গালা কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত (১৯১৩) উলামাদের একটি সংগঠন। এর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ছিল ইসলাম প্রচার, ইসলামি শিক্ষার প্রসার; খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারক ও অন্যান্য ধর্মবাদীদের শত্রুতামূলক প্রচারের মোকাবেলা করে পুস্তক ও প্রচারপত্র লেখা; পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ্র আলোকে মুসলিম সমাজের সংস্কার সাধন। আঞ্জুমানের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন মওলানাআবুল কালাম আজাদ, মওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, মওলানা মোহাম্মদ আকরম খাঁ, মওলানা মুহম্মদ আবদুল্লাহিল বাকী ও ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। সংগঠনটির প্রচার মুখপত্র ছিল আল-এসলাম (১৯১৫-১৯২১)।
১৯২১ সাল পর্যন্ত আঞ্জুমান নিজ নামেই এর কর্মকান্ড পরিচালনা করে। ওই বছরই এটি জামিয়াত-উল-উলামা-ই-বাঙ্গালার সঙ্গে একীভূত হয়। এ সময়ের মধ্যে আঞ্জুমানের তিনটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমটি অনুষ্ঠিত হয় বগুড়ায় (১৯১৩) এবং অন্য দুটি কলকাতায় (১৯১৭) ও চট্টগ্রামে (১৯১৮)। আঞ্জুমানের কর্মীরা বাংলা ও আসামের অশিক্ষিত মুসলমানদের শিরক্ ও বেদাত সম্পর্কে শিক্ষা দানের চেষ্টা করে। এ সময়ে মুসলিম জনজীবন অন্য সংস্কৃতির প্রভাবে কলুষিত হয়ে পড়েছিল। কর্মীরা বহুসংখ্যক মক্তব, মাদ্রাসা নির্মাণ ও বায়তুল মাল তহবিল গঠন করে। এছাড়া মুসলমানদের নৈতিকতা ও সংহতি দৃঢ় করার লক্ষ্যে সামাজিক সালিশি বোর্ড স্থাপন করে। তাদের অন্যতম স্বপ্ন ছিল চট্টগ্রামে একটি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। কিন্তু প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করতে না পারায় এ স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় নি।
আঞ্জুমান খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। মূলত মুসলিম সংস্কারপন্থী সংগঠন হলেও আঞ্জুমান-ই-উলামা-ই-বাঙ্গালা অন্য ধর্মের প্রতি কখনও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষভাব প্রদর্শন করে নি; বরং এর সদস্যরা হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের বিষয়ে সোচ্চার ছিল। হিন্দু-মুসলিম সৌহার্দ্যের প্রতীক হিসেবে আঞ্জুমান সদস্যরা স্বদেশী পণ্য বাজারজাত করার জন্য কলকাতায় একটি স্বদেশী খিলাফত স্টোর প্রতিষ্ঠা করে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আঞ্জুমান ১৯২১ সালে এর কার্যক্রম বন্ধ করে জামিয়াত-উল-উলামা-ই-হিন্দের বঙ্গীয় শাখা জামিয়াত-উল-উলামা-ই-বাঙ্গালার সঙ্গে একীভূত হয়। [সুনীল কান্তি দে]