খাঁ, ওস্তাদ আলী আকবর
খাঁ, ওস্তাদ আলী আকবর (১৯২২-২০০৯) ১৯২২ সালের ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নবীনগর থানার শিবপুর গ্রামে। পিতা সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ছিলেন মাইহার রাজ্যের সভাসঙ্গীতজ্ঞ। মাইহারেই বেড়ে ওঠেন আলী আকবর খান।
কণ্ঠ সঙ্গীতের মাধ্যমে আলী আকবরের সঙ্গীত শিক্ষা শুরু হয় মাত্র তিন বছর বয়স থেকে। পিতা দু’শটির মত বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারতেন। কাজেই বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রে তিনি তালিম নিতে শুরু করনে। নয় বছর বয়সে তাঁর বাবা তাঁর হাতে তুলে দেন সরোদ। ১৯৩৩ সালে চাচা ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ নিজ হাতে তৈরি একটি সরোদ তাঁকে উপহার দেন। পরবর্তীতে তিনি সরোদ যন্ত্রটি নিয়েই একনিষ্ঠভাবে সঙ্গীতচর্চা করে গেছেন। তিনি দৈনিক আঠারো ঘন্টা রেওয়াজ করতেন।
১৩ বছর বয়সে এলাহাবাদে প্রথম তিনি মঞ্চে সরোদ পরিবেশন করেন। চল্লিললশের দশক থেকে তিনি বিভিন্ন সঙ্গীত সম্মেলনে সঙ্গীত পরিবেশন শুরু করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি প্রথমে অল ইন্ডিয়া রেডিও, লক্ষৌতে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যোগ দেন, ১৯৪৩ সালে যোধপুর রাজ্যের সভা সঙ্গীতজ্ঞ নিযুক্ত হন এবং সেখানে ছয় বছর অবস্থান করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি মুম্বাই চলে আসেন এবং চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেন। তিনি ক্ষুধিত পাষাণ, ঝিন্দের বন্দী প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ছবির সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন।
১৯৫৫ সালে প্রথমে ইংল্যান্ড এবং পরে আমেরিকা সফরে যান। পাশ্চাত্যের টেলিভিশন পর্দায় তিনিই প্রথম প্রাচ্যের সঙ্গীত নিয়ে উপস্থিত হন। ১৯৫৫ সালে নিউইয়র্ক থেকে তাঁর লংপ্লেল বের হয়। সেটিও আমেরিকা থেকে প্রকাশিত প্রাচ্যের সঙ্গীতের প্রথম লংপ্লে রেকর্ড। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে জনমত গড়ে তোলার জন্য জর্জ হ্যারিসনের আহবানে সাড়া দিয়ে তিনি নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ এ অংশগ্রহণ করেন। সেই অনুষ্ঠানে পন্ডিত রবি শঙ্কর এবং ওস্তাদ আল্লা রাখার সঙ্গে বাজানো ‘বাংলাদেশ ধুন’ এক অসাধারণ সৃষ্টি।
ভারত সরকার তাঁকে দুইবার প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া এওয়ার্ড প্রদান করেছে, এছাড়া পদ্মভূষণ এবং পদ্মবিভূষণ (১৯৮৯) খেতাবে ভূষিত করেছে। প্রেসিডেন্ট কেনেডির অভিষেক অনুষ্ঠানে তিনি আমন্ত্রিত শিল্পী হিসেবে যোগদান করেছেন। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট অব লিটারেচার উপাধি প্রদান করে। এছাড়া ১৯৯১ সালে হিন্দুস্তানী উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রসারে অবদান রাখার জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশন জিনিয়াস ফেলোশিপ (১৯৯১) অর্জন করেন। ১৯৭০ থেকে ১৯৯৮ সময়ের মধ্যে পাঁচবার (১৯৭০ সালে-শ্রীরাগ, ১৯৮৩সালে-রাগ মিশ্র পিলু, ১৯৯৬ সালে- Then and now, ১৯৯৭-সালে Legacy ও ১৯৯৮ সালে- Passing on the tradition) তিনি গ্র্যামি এওয়ার্ড-এর নমিনেশন পেয়েছেন। তবে কৌশলগত অসামঞ্জস্যের কারণে প্রতিবারই তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯ জুন ২০০৯, যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রানসিসকোতে তাঁর মৃত্যু হয়। [রীনাত ফওজিয়া]