সরযূবালা দেবী
সরযূবালা দেবী (১৯১২-১৯৯৪) অভিনেত্রী। পশ্চিমবঙ্গের চবিবশ পরগনা জেলায় তাঁর জন্ম। শৈশবে পিতৃবিয়োগ হলে সংসারের প্রয়োজনে মাত্র নয় বছর বয়সে তিনি মঞ্চাভিনয়ে যোগ দেন। তাঁর প্রথম অভিনয় এমিনেন্ট থিয়েটারে কুমারসিংহ নাটকে বালকের ভূমিকায়; অভিনয়ে কৃতিত্বস্বরূপ তিনি পাঁচ টাকা পুরস্কার ও রৌপ্য মেডেল পান।
সরযূবালা প্রথম পেশাদার রঙ্গমঞ্চে অভিনয় করেন নির্মলেন্দু লাহিড়ীর ভ্রাম্যমাণ দল ‘নিউ মনোমোহন থিয়েটারে’। এখানে মীরাবাঈ নাটকে কৃষ্ণচরিত্রে অভিনয়ে তিনি যে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন তাতে সমকালীন প্রখ্যাত শিল্পী তারাসুন্দরী ও কুসুমকুমারীর অনুরূপ খ্যাতি অর্জন করেন। পরে তিনি যোগ দেন সেকালের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা দানীবাবুর দলে। চৌদ্দ বছর বয়সে দানীবাবুর বিপরীতে তিনি দক্ষযজ্ঞ নাটকে সতীর ভূমিকায় অভিনয় করেন। এখানেই বিষবৃক্ষ নাটকে কুন্দনন্দিনীর ভূমিকায় অসামান্য অভিনয় করে তিনি প্রথম সারির অভিনেত্রীর মর্যাদা লাভ করেন। পরে একে একে তিনি চন্দ্রশেখর, মহুয়া, মৃগয়া, গৈরিক পতাকা, শ্যামলী, কারাগার প্রভৃতি নাটকে দুর্গাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিশিরকুমার ভাদুড়ীর মতো প্রখ্যাত অভিনেতাদের বিপরীতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সাজাহান নাটকে জাহানারা এবং শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের সিরাজুদৌল্লা নাটকে লুৎফা চরিত্রে তাঁর অভিনয় ছিল কিংবদন্তিতুল্য। পৌরাণিক, ঐতিহাসিক, সাময়িক, অপেরাধর্মী প্রহসন ইত্যাদি সব ধরনের নাটকে অভিনয় করে তিনি ‘নাট্যসম্রাজ্ঞী’ উপাধি লাভ করেন।
মঞ্চাভিনয়ের পাশাপাশি এক সময় সরযূবালা চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেন। ঋষির প্রেম, কৃষ্ণকান্তের উইল-সহ বেশ কয়েকটি সবাক চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেন। তিনি সুকণ্ঠের অধিকারিণী ছিলেন। নজরুল ইসলাম, কৃষ্ণচন্দ্র দে প্রমুখের নিকট তিনি গান শেখেন। সরযূবালা সঙ্গীত ও নাটক একাডেমি পুরস্কার (১৯৭০) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণপদকসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন। [দুলাল ভৌমিক]