লালমাই
লালমাই কুমিল্লা শহরের পশ্চিমে অবস্থিত একটি বিচ্ছিন্ন পর্বতশ্রেণি। এই পর্বতশ্রেণি ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং সবচেয়ে চওড়া অংশে ৪.৮ কিলোমিটার প্রশস্ত। এই পাহাড়ি অঞ্চলের উঁচু ভূমির মাঝে মাঝে অবতল ভাগ রয়েছে। পর্বতশ্রেণির সর্বোচ্চ চূড়ার উচ্চতা ৪৬ মিটারেরও বেশি। এর উত্তর অংশকে বলা হয় ময়নামতী পাহাড়, আর দক্ষিণ অংশ লালমাই পাহাড় নামে পরিচিত। উত্তরাংশের চেয়ে পর্বতশ্রেণির দক্ষিণাংশে ফসিল-কাঠের খন্ডিতাংশ বেশি পরিমাণে পাওয়া গেছে।
১৯৮৯ সালের এপ্রিলে এবং ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে লালমাই পর্বতমালায় প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানো হয়। এই অনুসন্ধানে এখানে ১১টি প্রাগৈতিহাসিক প্রত্নক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলি হচ্ছে- লালমাই-১, লালমাই-২, লিলা মুড়া ও টক্কা মড়া, মহরম আলীর বাড়ি, টিপরা মুড়া, মাঁদার মুড়া, মাইধর মুড়া, মেম্বারের খিল, মেহের কুলের মুরা, টক্কা মুড়া-২ ও সরদারের পাহাড়। এই প্রত্নক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত প্রত্নবস্ত্তগুলি ফসিল কাঠের তৈরী। এগুলি হচ্ছে- কাটারি (৩টি), হাতকুঠার (৬টি), মাংস কাটার ভারি ছুরি (৪টি), কাঠ চাঁছার যন্ত্র (১২টি), বাটালি (১টি), ছুরি (২টি), ছুরির ফলা (৪৬টি), চাঁছনি (৯৮টি), সূচ্যগ্র যন্ত্র (৫০টি), ছিদ্র করার যন্ত্র (৯টি), খোদাই করার যন্ত্র (৪টি), ব্যবহূত পাতলা কাঠের টুকরা (১২৪টি), কাঠের পাতলা টুকরা (৩৩টি), পাতলা ফালি (৪৩টি)। উপরের প্রত্নবস্ত্তর তালিকা থেকে ধারণা করা যায় যে, এখানে নবোপলীয় যুগের একটি কারখানা ছিল। লালমাই-১ প্রত্নস্থলের ঢালে ১.৫১ মিটার জায়গা জুড়ে ১৯৯১ সালে একটি ছোট উৎখনন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। উৎখননের ফলে ফসিল-কাঠের প্রত্নবস্ত্তর পাশাপাশি কিছু মৃৎপাত্রের ভাঙা টুকরাও পাওয়া যায়। প্রত্নস্থলে নবোপলীয় সংস্কৃতির প্রমাণবাহী কিছু মৃৎপাত্র ধ্বংসপ্রায় অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং এগুলিতে কোন নকশা বা ডিজাইন নেই। [এম.এম হক]