স্রোতস্বিনী

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:১৪, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

স্রোতস্বিনী (Stream)  প্রাকৃতিক জলধারা যার মধ্য দিয়ে বছরের অন্তত কয়েকমাস পানি প্রবাহিত হয়। তবে স্রোতস্বিনী বলতে ক্ষুদ্র নদীপ্রবাহ থেকে শুরু করে বৃহৎ নদী পর্যন্ত সকল মাত্রার জলধারাকেই বোঝায়। নিষ্কাশন জালিকায় (drainage network) অবস্থান অনুসারে স্রোতস্বিনীর শ্রেণীবিন্যাসকে স্রোতস্বিনী পর্যায় (stream order) হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ক্ষুদ্রতম অশাখায়িত উপনদীকে প্রথম পর্যায়ের স্রোতস্বিনী বলা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের স্রোতস্বিনীর রয়েছে শুধুমাত্র প্রথম পর্যায়ের উপনদী বা উপনদীসমূহ। আবার প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের উপনদীর মিলিত স্রোতধারা তৃতীয় কোন জলধারার সঙ্গে মিলিত হয়ে গঠন করে তৃতীয় পর্যায়ের স্রোতস্বিনী এবং এভাবে আরও উচ্চ পর্যায়ের স্রোতস্বিনী গঠিত হতে পারে। প্রবাহকাল ভেদে স্রোতস্বিনীকে আবার ক্ষণস্থায়ী (যেমন: কুমার নদী), সাময়িক বা মৌসুমি (যেমন: পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ) এবং সাংবার্ষিক বা নিয়ত প্রবাহবিশিষ্ট (যেমন: যমুনা নদী) প্রভৃতি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।

বয়স অথবা গঠন পর্যায়ের ভিত্তিতে স্রোতস্বিনীর উৎপত্তি (genetic) সংক্রান্ত শ্রেণীবিন্যাস করা হয়ে থাকে, যেমন: যৌবন, পরিণত এবং বার্ধক্য পর্যায়ের স্রোতস্বিনী। একটি স্রোতস্বিনীর প্রাথমিক অবস্থাকে এর যৌবন পর্যায় বলা হয়। যৌবন অবস্থায় একটি নদীর উপত্যকা বা নদীখাত সাধারণত ‘ভি’ (V) আকৃতির হয়ে থাকে এবং এর অববাহিকাকে অসম্পূর্ণভাবে নিষ্কাশিত করে থাকে। পরিণত স্রোতস্বিনীর বেলায় নিষ্কাশন প্রক্রিয়া বেশি হয়, উপত্যকা প্রশস্ত আকার ধারণ করে, নদীঢাল প্রায় সমতল হয়ে আসে এবং তীর ভাঙন প্রক্রিয়া প্রবল হয়ে ওঠে। বার্ধক্য পর্যায়ে উপনীত নদীর উপত্যকা সর্বাধিক প্রশস্ত হয়, ভূ-প্রকৃতি হয় নিচু এবং নতিমাত্রা সমতলাকৃতি হয়। এই পর্যায়ে নদীর দুই তীরে প্রাকৃতিক পাড় বা কান্দা গঠিত হয়। পদ্মা, মেঘনাসহ বাংলাদেশের অধিকাংশ বড় নদীই বার্ধক্য পর্যায়ের। কর্ণফুলি এবং হালদা নদী পরিণত এবং বার্ধক্য পর্যায়সহ পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপর দিয়ে প্রবাহিত কতকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাহাড়ি নদীর পূর্ণাঙ্গ পর্যায়সমূহ যেমন- যৌবন, পরিণত ও বার্ধক্য এই দেশের অভ্যন্তরেই অবস্থিত।

নদীখাতের প্যাটার্ন বা ধরন অনুসারে নদী বা স্রোতস্বিনীসমূহ সরল-রৈখিক, সর্পিলাকার ও বিনুনিসদৃশ অথবা এই তিনের সমন্বিত ধরনের হতে পারে। বাস্তবে প্রকৃত সরল রৈখিক নদীখাত বিরল। পদ্মা নদীর গতিপথ তুলনামূলকভাবে রৈখিক। পর্যায়ক্রমিক বাঁক নিয়ে গঠিত এবং দেখতে এস-আকৃতির গতিপথবিশিষ্ট স্রোতস্বিনীকে সর্পিলাকার নদী বলা হয়। বাংলাদেশে প্রচুর সর্পিল গতিপথবিশিষ্ট নদী রয়েছে। কপোতাক্ষ, করতোয়া, ইছামতি, নাগর, গড়াই প্রভৃতি নদী সর্পিলাকার নদীর আদর্শ উদাহরণ। নদীখাতে একাধিক চর সৃষ্টির ফলে বহুধা বিভক্ত নদীখাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত স্রোতস্বিনীকে বিনুনিসদৃশ নদী বলা হয়। এই প্রকার নদী অগভীর গতিপথ, সাধারণত প্রশস্ত এবং অ-সুস্থিত তীর প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, গঙ্গা, পদ্মা প্রভৃতি বিনুনিসদৃশ নদী। তবে এদের মধ্যে যমুনা হলো আদর্শ বিনুনি নদী। বাংলাদেশের উপকূলীয় এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ নদ-নদীসমূহ সর্পিলাকার ও বিনুনি আকৃতির মিশ্র ধরনের নদীখাত প্রদর্শন করে।  [এইচ.এস মোজাদ্দাদ ফারুক]