সতেররত্ন মন্দির
সতেররত্ন মন্দির কুমিল্লা শহর থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে কৃষ্ণপুর গ্রামের জগন্নাথবাড়ী নামক স্থানে অবস্থিত। অষ্টকোণাকৃতির স্থাপত্য পরিকল্পনার এই মন্দিরটি সতের রত্ন বিশিষ্ট হলেও বর্তমানে অধিকাংশ রত্ন কালের পথ পরিক্রমায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। মন্দিরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় আটটি করে ষোলটি সহ কেন্দ্রীয় রত্ন নিয়ে রত্নের সংখ্যা সতেরটি ছিল। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সপ্তদশরত্ন মন্দিরের সাথে এই মন্দিরের পার্থক্য রয়েছে। মন্দিরের চূড়াগুলি রথবিন্যাসযুক্ত কিংবা খাঁজকাটা দেউল রীতির নয়। চূড়াগুলি আটকোণা বিশিষ্ট ছাতা আকৃতির। মন্দিরটি কয়েকধাপে ক্রমহ্রাসয়মানভাবে উপরে উঠে গেছে। কেন্দ্রীয় চূড়াটির উপর রয়েছে কলস শীর্ষ। মোচাকৃতির এই চূড়ার স্থাপত্য নকশা ইউরোপিয়ান গির্জা স্থাপত্য নকশা দ্বারা প্রভাবিত। মন্দিরটির ব্যাস প্রায় ৫২.৫০ মিটার। বাইরের দিক থেকে তিন তলা মনে হলেও মন্দিরটি ভিতরের দিক থেকে পাঁচ তলা পর্যন্ত উঠা যায়। প্রথম তলার উচ্চতা প্রায় ৪.০৫ মিটার। ২.১০ মিটার উঁচু চারটি খিলানাকৃতির প্রবেশপথ দিয়ে মন্দিরে প্রবেশ করা যায়। প্রবেশপথের দু’পাশে রয়েছে খিলান নকশা। দোতলায় ছয়টি খিলানাকৃতির জানালা রয়েছে। মন্দিরের প্রতিটি ধাপেই রয়েছে খিলান নকশা। এছাড়াও মন্দিরটিতে ফুল, লতা-পাতা, ঘন্টা ও জ্যামিতিক নকশায় অলংকৃত করা হয়েছে। মন্দিরটির অষ্টকোণাকৃতির ভূমি পরিকল্পনার ধারণাটি বিহারের সাসারামে শেরশাহ সুরের সমাধিসৌধের অষ্টকোণাকৃতির ভূমি নকশার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মন্দিরটির নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন তৎকালীন ত্রিপুরার মহারাজা দ্বিতীয় রত্নমাণিক্য (১৬৮৫-১৭১২ খ্রি.) কিন্তু তিনি তা সম্পন্ন করতে পারেননি, পরবর্তীতে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছিলেন মহারাজা কৃষ্ণকিশোর মাণিক্য ১৭৬১ খ্রিস্টাব্দে। [মোকাম্মেল এইচ ভূঁইয়া]