স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা

NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ২৩:১৪, ৪ মে ২০১৪ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ (Added Ennglish article link)
(পরিবর্তন) ← পূর্বের সংস্করণ | সর্বশেষ সংস্করণ (পরিবর্তন) | পরবর্তী সংস্করণ → (পরিবর্তন)

স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা (Local Level Planning)  তৃণমূল পর্যায়ে পরিকল্পনা। এ প্রক্রিয়াকে ‘নিম্নতম পর্যায় থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বমুখী’ উন্নয়ন উদ্যোগ বলা যেতে পারে। আরও স্পষ্টভাবে বলতে গেলে, এ পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্য হলো তৃণমূল পর্যায়ে প্রতিটি এলাকার প্রাকৃতিক সম্পদ, জনশক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে ওই এলাকার  জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন। এর উপর ভিত্তি করে গৃহীত উন্নয়ন কর্মকান্ডকে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে জনগণের সার্বিক কল্যাণের লক্ষ্যে ব্যক্তি, সামাজিক গ্রুপ এবং ভৌগোলিকভাবে সংগঠিত সম্প্রদায়গুলোর জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি মাত্রায় সুযোগ সম্প্রসারণ এবং এদের সামর্থ্য ও সম্পদের পরিপূর্ণ ব্যবহারের  অবিচ্ছেদ্য প্রক্রিয়া হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা প্রণয়নের মূলে এ উপলব্ধি কাজ করেছে যে গতানুগতিক ধারার ‘উর্ধ্ব থেকে নিম্নমুখী’ উন্নয়নপদ্ধতি জনগণের প্রত্যাশা ও অর্জনের মধ্যকার ব্যবধান বৃদ্ধি করেছে। স্থানীয় জনগণের নিজস্ব সমস্যাগুলো চিহ্নিতকরণ এবং তাদের কার্যধারা নির্ধারণের মাধ্যমে এ ধরনের উদ্যোগে তাদের অংশগ্রহণ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। গত দু’দশকে পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব সীমিত পরিমাণে স্থানীয় সরকারের উপর অর্পণের মাধ্যমে বাংলাদেশে ‘উর্ধ্ব থেকে নিম্ন পর্যায়ের’ পরিকল্পনাপ্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে অনুশীলিত হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনার তাৎপর্যপূর্ণ দিক এই যে, কর্তৃত্ব বিকেন্দ্রীকরণের প্রক্রিয়ায় স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো স্বনির্ভর সংগঠন হিসেবে মানবিক এবং প্রাকৃতিক উভয় প্রকার অব্যবহূত স্থানীয় সম্পদ কাজে লাগাতে সক্ষম। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ছাড়াও এনজিও প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন সম্প্রসারণ সংস্থার কর্মকর্তাগণ পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে জনগণের জীবনযাত্রা, মৌলিক সুবিধাদির অভাব, প্রযুক্তিগত বিষয়াদি বিশ্লেষণে সক্ষম হয়। স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনার আরেকটি সুবিধা এই যে এতে করে এলাকার জনগণের মনোভাব, চাহিদা, বাস্তব পরিস্থিতি এবং স্থানীয় সম্পদ সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ সমীক্ষার পর পরিকল্পনা প্রণয়ন করা সম্ভব হয়।

স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনার জন্য প্রয়োজন ‘সক্রিয় সামাজিক সংগঠন’ যা  পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। স্থানীয় পর্যায়ে  পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরো সমাজকে বিভিন্ন ব্যবহারিক গ্রুপে সংগঠিত করা হয়, যেমন মহিলা, যুবক, ক্ষুদ্র বা ভূমিহীন কৃষক, ধর্মীয় গোষ্ঠী, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং জেলে, তাঁতী, ছোট ব্যবসায়ী, নাপিত, রিকশাওয়ালা প্রভৃতি পেশাজীবী গ্রুপ। প্রকৃতপক্ষে তিন ধাপবিশিষ্ট স্থানীয় সরকার যথা, ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলার মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে সক্রিয় সামাজিক সংগঠনগুলো গ্রাম এবং কেন্দ্রীয়  প্রশাসনের মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করে।

বর্তমানে গণতান্ত্রিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে সরকারি নীতির অগ্রভাগে রয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে অংশীদারিত্বমূলক পরিকল্পনার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ। প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচিত স্থানীয় প্রতিনিধিগণ স্থানীয় নির্বাচকমন্ডলীর স্বার্থ সমুন্নত রাখার কাজে ক্ষমতাবান। এ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ ও নির্দেশনার মাধ্যমে তারা সম্ভাবনাময় প্রভাবশালীরূপে আবির্ভূত হন। যে জনগণ উন্নয়নের ফল ভোগ করবে তাদের উন্নয়ন পরিকল্পনার কর্মসূচি বাঞ্ছনীয় ও বাস্তবায়নযোগ্য কিনা সেসম্পর্কে তাদের অবহিত করার কাজে তারা তৎপর থাকবেন বলে ধরে নেওয়া হয়।

স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনার বিষয়ে কুমিল্লায় অবস্থিত বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির অভিজ্ঞতা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। পল্লী উন্নয়নে নিয়োজিত একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই একাডেমি সমবায়, বিকেন্দ্রীভূত স্থানীয় প্রশাসন, আধুনিক প্রযুক্তি, ঋণব্যবস্থা এবং স্বনির্ভর প্রকল্প গ্রহণের উপর জোর দিয়ে অংশীদারিত্বমূলক পল্লী উন্নয়নে যথোপযুক্ত কর্মসূচিভিত্তিক পদ্ধতি গড়ে তোলার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। পল্লী উন্নয়ন একাডেমি পল্লী উন্নয়ন মডেলের ধারাবাহিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যাপক অভিজ্ঞতা নিয়ে কৃষক সমাজে ইপ্সিত পরিবর্তন সাধনে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমান উন্নয়ন কর্মকান্ডকে গ্রামমুখী করার কাজে পল্লী উন্নয়ন একাডেমির অবদান একটি নতুন মাত্রা ও তাৎপর্য যুক্ত করেছে। সাম্প্রতিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ে একাডেমির কর্মকান্ড অংশীদারিত্বমূলক স্থানীয় পর্যায়ের পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যাপকভিত্তিক গ্রাম-উন্নয়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছে।

অংশীদারিত্বমূলক কাঠামোর আওতায় পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে স্থানীয়ভাবে গঠিত সকল ইউনিটকে সংগঠিত করা হয়েছে। এই কাঠামোতে স্থানীয় পর্যায়ে সংগঠনের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম ইউনিট হচ্ছে গ্রাম এবং তা হচ্ছে তৃণমূল পর্যায়ে পরিকল্পনার প্রধান চাবিকাঠি। এক্ষেত্রে স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা গ্রামীণ মেধাকে কাজে লাগিয়ে পরিকল্পনা কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এটা এক ধরনের ব্যষ্টিক পরিকল্পনা যা গ্রামের জনগণকে স্থানীয় বিশেষ সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে, সেগুলোর সমাধান সম্পর্কে চিন্তা করতে এবং স্থানীয় সম্পদ, অর্থ, উপকরণাদি ও জনশক্তিকে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজে ব্যবহার করতে সক্ষম করার উদ্দেশ্যে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে পরিকল্পনার সঙ্গে সম্পৃক্ত করবে।

থানা/উপজেলা এ ধরনের কর্মতৎপরতায় মাধ্যম হিসেবে কাজ করে এবং ফলত পরিকল্পনার কর্মকান্ডে যোগসূত্র হিসেবেও কাজ করে। ইউনিয়ন পরিষদ এক্ষেত্রে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নীলনকশা প্রস্ত্তত করে যার অন্তর্ভুক্ত থাকে থানা উন্নয়ন পরিকল্পনার অধিকতর ফলপ্রসূ ও কার্যকর কর্মসূচি। কার্যত থানা উন্নয়ন পরিকল্পনাকে বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ ও পেশাদার ব্যক্তিদের নিয়ে একটি পরিকল্পনা ইউনিট হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে এবং এজন্য অর্থ বরাদ্দ এবং অন্যান্য সেবা প্রদানের ব্যাপারে তরিৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে আশা করা হয়। উন্নয়ন প্রশাসনে কেন্দ্রীয় স্থান দখল করে আছে জেলা। এটি স্থানীয় মাঠ পর্যায়ের ইউনিটগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের যোগসূত্র হিসেবে কাজ করে।  [মোঃ শাইরুল মাশরেক]