র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) সরকার ২০০১ সাল পরবর্তী সময় থেকে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্র্মবর্ধমান অবনতি রোধকল্পে গুরুতর অপরাধীসহ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন কাঠামোগত সংস্কারের চিন্তাভাবনা করছিল। এ সংক্রা্ন্ত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ২০০৩ সালে চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। প্রাথমিকভাবে একটি পৃথক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গঠন এবং নাম নিয়ে কিছু বিতর্ক হয়। প্রথমে চিন্তা করা হয় যে, র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স নামে একটি বাহিনী গঠন করা হবে যেটি প্রয়োজন অনুসারে দ্রূত যেকোন স্থানে পৌঁছে যথাযথ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হবে। পরবর্তি সময়ে র্যাপিড অ্যাকশন টিম গঠন করার কথাও শোনা গেছে। এ টিম বিভিন্ন শৃঙ্খলা বাহিনীর যথা সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশের সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হবে। সবশেষে গঠিতব্য নতুন বাহিনীর নাম দেয়া হয় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, সংক্ষেপে র্যাব (RAB)।
২০০৩ সালের ১২ জুলাই বিদ্যমান আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন আইন সংশোধনের মাধ্যমে র্যাব গঠন করা হয়। সংশোধনী আইনটি আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (সংশোধনী) আইন ২০০৩ নামে পরিচিত। সংশোধনী আইনের ৩ ধারার উপধারা (৫) কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতাবলে অন্যান্য আইনে ভিন্নতর যা কিছুই থাকুকনা কেন প্রজাতন্ত্রে চাকরিরত কর্মকর্তাসহ অন্যান্য শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে সরকার এ বাহিনী গঠন করতে পারে। সংশ্লিষ্ট আইনে র্যাবকে যে সকল দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে তা হলো (ক) অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, (কক) অপরাধ ও অপরাধ সংক্রান্ত ঘটনার তথ্য গ্রহণ, (খ) বেআইনি অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বোমাসহ সরকার কর্তৃক নিদের্শিত হয়ে অন্য কোনো বস্ত্ত, (খখ) সরকারের আদেশে যেকোন অপরাধের তদন্ত, (গ) সশস্ত্র অপরাধীদের গ্রেপ্তার, (ঘ) পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা প্রদান এবং (ঙ) সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে প্রদত্ত অন্যান্য কার্যাবলি। আইনে বলা আছে যে, র্যাব অন্যান্য সদস্যদের সাথে উপর্যুক্ত সব কার্যাবলির জন্য দায়ী থাকবে তবে (কক) এবং (খখ) অংশে প্রদত্ত ক্ষমতা একমাত্র র্যাবই প্রয়োগ করবে, অর্থাৎ বাহিনীর অন্যান্য সদস্যদের এ ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
আর্মড পুলিশ বাহিনীর সংশোধনী আইনের (আইন ৩৭, ২০০৩) শৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে র্যাব গঠন করা হয়। এ আইনে শৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে ‘শৃঙ্খলা বাহিনী’ অর্থ (ক) সামরিক, নৌ অথবা বিমান বাহিনী, (খ) পুলিশ বাহিনী এবং (গ) আইন দ্বারা স্বীকৃত অথবা সরকার কর্তৃক গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা ঘোষিত অন্য কোনো বাহিনী। আইনের এ সংজ্ঞা বাংলাদেশ সংবিধানের সংজ্ঞার সাথে সংগতিপূর্ণ। র্যাব সংক্রা্ন্ত আইনে এক বা একাধিক ব্যাটালিয়ন গঠন করার বিধান রয়েছে। প্রজাতন্ত্রের চাকরিরত কোনো কর্মকর্তা অথবা অন্যকোন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের র্যাব-এ প্রেষণে নিয়োগ করার বিধানও এ আইনে রয়েছে।
পুলিশের উপমহাপরিদর্শকের নিম্নে নয় অথবা অন্য কোনো শৃঙ্খলা বাহিনীর সমপদমর্যাদার কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রন ও তত্ত্বাবধানে প্রতি ব্যাটালিয়ন কাজ করে। ব্যাটালিয়নে কমান্ডিং অফিসার স্বয়ং অথবা তাঁর নির্দেশে অধস্তন যেকোন কর্মকর্তা কোনো অপরাধের তদন্ত করতে পারেন।
ফৌজদারি কার্যবিধিমালায় (আইন ৫, ১৮৯৮) নির্ধারিত পদ্ধতিতে বা অন্য কোনো আইনে প্রদত্ত বিধিবিধান অনুসারে এ ধরনের তদন্ত সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে র্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা এ সংক্র্&ান্ত প্রতিবেদন কোনো উপযুক্ত আদালত বা ট্রাইব্যুনালে সরাসরি পেশ করতে ক্ষমতাবান নন। আইনের বিধান অনুযায়ী এ ধরনের তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রেরণ করবেন। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট আদালত বা ট্রাইব্যুনালে তা পেশ করবেন। তদন্ত সম্পাদনের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধিমালায় (১৮৯৮) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে যে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে একই ক্ষমতা র্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তাকেও দেয়া হয়েছে।
জন্মলগ্ন থেকেই র্যাবের বিরুদ্ধে বিচার বর্হিভূত হত্যার অনেক বিতর্কিত তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। ২০০৯ সালের দ্বিতীয়ার্ধে এ প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জবাব ছিল, এ পর্যন্ত ৩৭৩ টি বিচার বর্হিভূত হত্যা র্যাবের মাধ্যমে ঘটেছে। এ প্রক্রি্য়ায় একজন র্যাব সদস্যের মৃত্যুসহ আরও অনেক সদস্য আহত হয়েছে। এ প্রসংগে র্যাবের আত্মপক্ষ সমর্থনমূলক বক্তব্য হলো, বিচার বর্হিভূত পাল্টাপাল্টি গুলি বিনিময় বা এনকাউন্টারের মাধ্যমেই এ ঘটনা ঘটেছে।
অন্যদিকে গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত অনেক পলাতক আসামীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব সুনাম অর্জন করেছে। বিশেষ করে জামায়াতুল মুজাহেদীন বাংলাদেশ ও হরকাতুল জিহাদ নামধারী এ ধরনের দলের শীর্ষ সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে র্যাব সক্ষম হয়েছিল। ২০০৯ সালের মার্চের শেষার্ধে র্যাব ভোলা জেলার একটি কওমী মাদ্রাসায় ইসলামী সন্ত্রাসীদের একটি আখড়ায় অভিযান চালিয়ে বিপুল গোলাবারুদ ও কয়েকটি অস্ত্র উদ্ধারসহ কয়েক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সফল অভিযানের ফলে র্যাব অধিকতর সুনাম অর্জন করেছে। [এ.এম.এম শওকত আলী]
গ্রন্থপঞ্জি Bangladesh Gazette, 12 July 2003, Armed Police Battalion (Amendment) Act, No.37, 2003; RAB, Eradication of Terrorism or state-backed Terrorism, Ain O Shalish Kendra, May 2005; AMM Shawkat Ali: Faces of Terrorism in Bangladesh, The University Press Ltd, 2006.