রাষ্ট্রীয় জলসীমা
রাষ্ট্রীয় জলসীমা (Territorial Waters) ১৯৭৪ সালের রাষ্ট্রীয় জলসীমা ও সামুদ্রিক এলাকা বিধি অনুসারে বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের LT-1/3/74 নং বিজ্ঞপ্তি দ্বারা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সমুদ্র জলসীমা ১২ ন্যটিকাল মাইল ও একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল (EEZ) ২০০ ন্যটিকাল মাইল চিহ্নিত করা হয়েছে। আঞ্চলিক জলসীমা ও সামুদ্রিক এলাকা আইনে (ধারা ৭) মহীসোপান হলো মহাসাগরের পর্যঙ্ক বা পাতালিক তলের সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত সমুদ্রগর্ভ ও আন্তঃসাগরীয় অন্তমৃত্তিকা নিয়ে গঠিত। এভাবে বর্ণিত সামুদ্রিক এলাকাগুলি ১৯৮২ সালের সমুদ্র আইন বিষয়ক জাতিসংঘ কনভেনশন অনুসারে প্রণীত হয়েছে। বাংলাদেশ এ কনভেনশনে স্বাক্ষর করলেও এখনো তা আনুষ্ঠানিভাবে অনুমোদন করেনি।
বাংলাদেশের উপকূলীয় রেখা বাঁকা, খাজকাটা ও অস্থিতিশীল। উপকূলীয় সমুদ্র এলাকায় বাংলাদেশের প্রমত্তা নদী পদ্মা, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও সেগুলোর শাখানদী বাহিত বিপুল পরিমাণ পলি, কাদা ও নুড়ি জমা হওয়ায় মগ্ন চড়া দেখা দিচ্ছে। ফলত গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপ এমন যে সেখানে স্থলভাগ বা সাগরের দিকে কোন স্থায়ী জলরেখা নেই এবং উপকূলীয় সমুদ্র এতটা অগভীর যে তা বড় বড় জাহাজ চলাচলের অনুপযুক্ত। অধিকন্তু কাদাভরা তীরের মধ্য দিয়ে বহতা নাব্য জলপথগুলো অবিরত পরিবর্তিত হওয়ায় তটাঞ্চলের পরিস্থিতির ভৌত জরিপ, বিশেষত যৌথ-জরিপ দ্বারা পানির গভীরতা পরিমাপ প্রয়োজন।
এমতাবস্থায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় সমুদ্রের মতো সামুদ্রিক এলাকা পরিমাপে সমুদ্রপৃষ্ঠের ১০ ফ্যাদম গভীরতার প্রস্তাব দিয়েছে। উপকূলীয় সমুদ্র অবিরত পরিবর্তিত হওয়ার দরুন গভীরতার মাপকাঠিতেও সমুদ্রপৃষ্ঠ চিহ্নিতকরণ স্থায়ী হতে পারে না। এজন্য মাঝে মাঝে জরিপ আবশ্যক। বিশেষত হাড়িভাঙ্গা (এটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী) এবং রাইমঙ্গল নদীর (বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নদী) মোহনায় দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ দেখা দেওয়ায় যৌথ-জরিপ বাঞ্ছনীয় হয়ে পড়েছে। দ্বীপটি বাংলাদেশে দক্ষিণ তালপট্টি এবং ভারতে নিউ মুর হিসেবে পরিচিত। ট আকৃতির এই দ্বীপের পূর্ব বাহু উত্তর দিকে ছড়ান। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী হাড়িভাঙ্গা নদীর মধ্যস্রোত দ্বীপের পশ্চিম দিকে প্রবাহিত বলে বাংলাদেশ দ্বীপটির মালিকানা দাবি করে। [এম হাবিবুর রহমান]