মিউরিয়েট অব পটাশ
মিউরিয়েট অব পটাশ এক ধরণের রাসায়নিক সার। কৃষিকাজে ব্যবহারে পটাশিয়াম ক্লোরাইডকে প্রায়ই মিউরিয়েট অব পটাশ বলা হয়। পটাশিয়াম ক্লোরাইড (KCl) একটি শোধিত লাল বা ধূসর লাল ঘনক কেলাসিত যৌগ, যা দেখতে খাবার লবণের মতো। ‘মিউরিয়েট’ শব্দটির উৎপত্তি মিউরিয়েটিক এসিড থেকে, যা হাইড্রোক্লোরিক এসিডের একটি সাধারণ নাম। প্রক্রিয়াজাত পটাশিয়ামের ৯০ শতাংশেরও অধিক পরিমাণ সার হিসেবে ব্যবহূত হয় এবং বিশ্বব্যাপী পটাশিয়াম লবণের অন্তত ৭৮ শতাংশ মিউরিয়েট অব পটাশ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ যৌগটিতে K2O (পটাশিয়াম অক্সাইড)-এর পরিমাণ ৪৮ থেকে ৭৮ শতাংশ (অর্থাৎ ৩৯ থেকে ৬১ শতাংশ পটাশ) এবং ক্লোরিনের পরিমাণ প্রায় ৪৭ শতাংশ।
প্রধানত মিউরিয়েট অব পটাশ হিসেবে পটাশিয়াম সারের বাণিজ্যিক উৎপাদন ১৮৬১ সালে জার্মানিতে প্রথম শুরু হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে লিবিগ পটাশিয়ামকে গাছের বৃদ্ধির জন্য একটি অপরিহার্য মৌল হিসেবে আবিষ্কার করেন। ভূগর্ভস্থ পটাশিয়াম লবণের অবক্ষেপ পটাশিয়াম সারের প্রধান উৎস। অধিকাংশ পটাশিয়াম অবক্ষেপের পটাশিয়াম লবণ হলো পটাশিয়াম ক্লোরাইড।
ক্লোরাইড লবণ সংবলিত আকরিক উত্তোলনের জন্য সাধারণত চক্রাকার খনন যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। উত্তোলিত লবণকে পরে শোধন কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে মিউরিয়েট অব পটাশ তৈরি করা হয়। পটাশের আকরিক থেকে শোধন করতে ভাসন ও কেলাসন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। উভয় প্রক্রিয়াতে সোডিয়াম ক্লোরাইড থেকে পটাশিয়াম ক্লোরাইডের পৃথকীকরণ বিজড়িত। এ দুটি রাসায়নিক যৌগের কেলাসগুলো সিলভিনাইট নামক মণিক মিশ্রণে পরস্পর গ্রথিত অবস্থায় থাকে। ভাসন পদ্ধতিটি সবচেয়ে প্রচলিত এবং এ পদ্ধতি দ্বারাই কৃষিতে ব্যবহূত মিউরিয়েট অব পটাশের বৃহদংশ উৎপাদিত হয়।
মিউরিয়েট অব পটাশ আকারে প্রয়োগকৃত পটাশিয়াম সার ১০০ ভাগ পানিতে দ্রবণীয়। আখ, বিট, আলু ও তামাক ছাড়া অধিকাংশ ফসলের ক্ষেত্রেই এ সার উপযোগী। বাংলাদেশে মিউরিয়েট অব পটাশের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১৫০ হাজার টন, যার সবটাই বিদেশ থেকে আমদানী করতে হয়।
[মোঃ আখতার হোসেন খান]