ভূইয়া, খাজা নিজামউদ্দিন
ভূইয়া, খাজা নিজামউদ্দিন (১৯৪৯-১৯৭১) মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। ১৯৪৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা জেলার মালপাড়া গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা আব্দুল লতিফ ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। মাতা তাবেন্দা আক্তার খাতুন। কুমিল্লার গিরিধারী প্রাইমারি স্কুলে তাঁর শিক্ষা জীবনের শুরু। ১৯৬৪ সালে চট্টগ্রামের জি.এম সেন ইনস্টিটিউট থেকে এস.এস.সি এবং ১৯৬৬ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনায় বি.কম (সম্মান) এবং ১৯৭০ সালে এম.কম পাস করেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকালীন এম.বি.এ ক্লাসের ছাত্র ছিলেন। পাশাপাশি তিনি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (বর্তমান হোটেল শেরাটন) কন্ট্রোলার অব অ্যাকাউন্টস পদে কর্মরত ছিলেন।
ছাত্রজীবন থেকেই নিজাম ছিলেন রাজনীতি সচেতন। ষাটের দশকে তিনি ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে যুক্ত ছিলেন এবং ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলনে অংশ নেন। স্কুল জীবনেই তিনি সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চায় নিয়োজিত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে তিনি কালচক্র নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন এবং একই নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। তিনি একজন ভাল গিটার বাদক ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে খাজা নিজামউদ্দিন এপ্রিল মাসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ভারতের আগরতলার ইন্দ্রনগরে ট্রেনিং শেষে দু’মাস পর দেশে এসে চার নম্বর সেক্টরের জামালপুর সাব সেক্টরে যোগ দেন। গণবাহিনীর ক্যাপ্টেন হিসেবে তিনি মস্তাননগর ক্যাম্পের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। সিলেট জেলার কানাইঘাট, মস্তাননগর, ভরামাইদ, নক্তিপাড়া, মণিপুর অঞ্চলে পাকবাহিনী ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে গেরিলা ও সম্মুখ যুদ্ধে তিনি দক্ষতার পরিচয় দেন। ১৯৭১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর কানাইঘাট থানার আটগ্রাম সড়কের বাজারের কাছে ১০ ঘন্টাব্যাপী সম্মুখ যুদ্ধে তিনি শহীদ হন। সিলেট জেলার মুকিমটিলায় তাঁকে সমাহিত করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য বাংলাদেশ সরকার খাজা নিজামউদ্দিন ভূইয়াকে ‘বীরউত্তম’ উপাধিতে ভূষিত করে। এলাকাবাসীর কাছে তিনি ‘ক্যাপ্টেন নিজাম’ নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর নামে মোকিমটিলা সড়কের বাজারের নামকরণ করেছে ‘নিজামনগর’। এছাড়া কুমিল্লার কান্দিরপাড় থেকে পুলিশ লাইন পর্যন্ত বিস্তৃত রাস্তার নামকরণ হয়েছে ‘শহীদ খাজা নিজামউদ্দিন বীরউত্তম সড়ক’। [আবু মো. দেলোয়ার হোসেন]