জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ঢাকা শহর থেকে উত্তরে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে গাজীপুর জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ক্যাম্পাস অবস্থিত। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ১৭০০ অধিভুক্ত কলেজের মাধ্যমে এর শিক্ষা কর্মসূচি পরিচালনা করে। ১৯৯২ সালের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইনের মাধ্যমে কৃষি, প্রকৌশল ও চিকিৎসা শিক্ষা প্রদানকারী কলেজ ছাড়া স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষা কর্মসূচি চালিয়ে নেওয়ার জন্য সক্ষম কলেজগুলি অধিভূক্ত করার ক্ষমতা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর অর্পণ করা হয়েছে।
১৯৯২ সালে বাংলাদেশ পার্লামেন্ট ৩৭ নং আইন পাশ করে। এই আইনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের কলেজ অধিভুক্তকরণ, পাঠ্যক্রম প্রণয়ন, জ্ঞান উন্নয়ন ও বিতরণের কাজে বিশেষ দৃষ্টি প্রদান, শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি, পরীক্ষার আয়োজন ও ডিগ্রি প্রদানের ক্ষমতা দেওয়া হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর। তাঁর পরেই সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হলেন ভাইস-চ্যান্সেলর।
ভাইস-চ্যান্সেলরদের তালিকা
নাম | সময়কাল |
প্রফেসর মুহাম্মদ আবদুল বারী | ২১.১০.১৯৯২ - ২০.১০.১৯৯৬ |
প্রফেসর আমিনুল ইসলাম | ২১.১০.১৯৯৬ - ২০.১০.২০০০ |
প্রফেসর দুর্গাদাস ভট্টাচার্য | ২১.১০.২০০০ - ০৯.০৯.২০০১ |
প্রফেসর আবদুল মমিন চৌধুরী | ১০.০৯.২০০১ - ০৪.০৭.২০০৩ |
প্রফেসর আফতাব আহমাদ | ০৫.০৭.২০০৩ - ২০.০৭.২০০৫ |
প্রফেসর ওয়াকিল আহমদ | ২১.০৭.২০০৫ - ২৬.১২.২০০৭ |
প্রফেসর সৈয়দ রাশিদুল হাসান (ভারপ্রাপ্ত) | ২৭.১২.২০০৭ - ১৬.০৭.২০০৮ |
প্রফেসর এম মোফাখ্খারুল ইসলাম | ১৭.০৭.২০০৮ - ২৩.০২.২০০৯ |
প্রফেসর কাজী শহীদুল্লাহ | ২৪.০২.২০০৯ - ০৫.০৩.২০১৩ |
প্রফেসর হারুন-অর-রশীদ | ০৬.০৩.২০১৩ - |
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন দুইজন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, বিভিন্ন স্কুলের ডীন, রেজিস্ট্রার, কলেজ ইন্সপেক্টর ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। সিনেট, একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের উৎস হলো অধিভুক্ত কলেজসমূহ থেকে প্রাপ্ত অর্থ।
অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলি ফ্যাকাল্টির ভিত্তিতে সাজানো নয়। এইগুলি স্কুলের ভিত্তিতে সাজানো। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবিধি অনুযায়ী এর তিনটি স্কুল রয়েছে (১) স্নাতক শিক্ষা স্কুল, (২) স্নাতকোত্তর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা স্কুল এবং (৩) পাঠ্যক্রম মূল্যায়ন ও পরীক্ষণ স্কুল। প্রত্যেকটি স্কুল একজন ডিনের অধীনে ন্যাস্ত রয়েছে। শিক্ষা কর্মসূচিসমূহ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সারা দেশব্যাপী অধিভুক্ত কলেজ এইগুলি কার্যকর করে থাকে।
স্নাতক শিক্ষা স্কুল একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট কর্তৃক প্রণীত বিধি ও প্রবিধি অনুযায়ী অধিভুক্ত কলেজগুলির শিক্ষা কার্যক্রম দেখাশুনা করে। স্নাতক শিক্ষাস্কুলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বাবলির মধ্যে রয়েছে ভর্তি, নিবন্ধন, পরীক্ষা ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ধরণের স্নাতক ডিগ্রি প্রোগ্রাম আছে (১) তিন বছর মেয়াদি পাস ডিগ্রি প্রোগ্রাম ও (২) চার বছর মেয়াদি অনার্স ডিগ্রি প্রোগ্রাম। ডিগ্রি (পাস) প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হলে ছাত্রদের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষা পাস করতে হয়। স্নাতক (সম্মান) প্রোগ্রামে ভর্তির জন্য ছাত্রদেরকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক পরিচালিত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে অধিভুক্ত কলেজের কোনো বিষয়ের ছাত্র হিসেবে ভুক্তি হতে হয়। স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণ ও গবেষণা স্কুল স্নাতকোত্তর ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা কর্মসূচিতে নিবন্ধন ও ভর্তির ব্যাপারটি নিয়ন্ত্রণ করে। তদুপরি এই স্কুল ল’কলেজ, বি.এড কলেজ, চারুকলা কলেজ, মেরিন ফিসারিজ একাডেমির ন্যায় পেশাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বৃত্তিমূলক শিক্ষা পরিচালনা করে থাকে। এছাড়া স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণ ও গবেষণা স্কুল এম.ফিল ও পিএইচ.ডি’র ন্যায় গবেষণা কর্মসূচিও পরিচালনা করে থাকে। এই স্কুলের অধীনে স্নাতকোত্তর ছাত্রদের জন্য কিছু গবেষণা বৃত্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
শিক্ষার মান নিশ্চিতকরণ ও বিভিন্ন চাকুরিকালীন বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থাগ্রহণ এই স্কুলের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এছাড়া জাতীয় গুরুত্ব বিবেচনা করে আর্থ-সামাজিক জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে ডিজিটাল কৌশল ব্যবহারের নিমিত্ত বিশ্ববিদ্যালয় আইসিটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
২০০৬ সাল থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ শিক্ষদের শিক্ষা ও পেশাগত উন্নয়নের জন্য এম.ফিল ও পিএইচ.ডি প্রোগ্রাম পরিচালনা করে আসছে।
পাঠ্যক্রম মূল্যায়ন ও পরীক্ষণ কেন্দ্র আমাদের জাতীয় মূল্য ও ঐতিহ্যের সাথে মিল রেখে এবং উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে চলমান অগ্রগতির সঙ্গে ছাত্রদের পরিচিত করার লক্ষ্য নিয়ে পাঠ্যক্রম প্রণয়ন করে। পাঠ্যক্রম প্রণয়ন ও উন্নয়নের জন্য দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪টি দ্বিবার্ষিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এগুলি হলো আর্টস জার্নাল, সোসাল সায়েন্স জার্নাল, সায়েন্স জার্নাল এবং বিজনেস স্টাডিজ জার্নাল। প্রত্যেকটি জার্নালের জন্য রয়েছে পৃথক সম্পাদনা পরিষদ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষক ও গবেষকগণ সাধারণত এই সকল পত্রিকায় গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করে থাকেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘দি লিংক’ নামের একটি বুলেটিং প্রকাশিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় ঘটনাবলি ও কার্যক্রম সম্পর্কিত তথ্য থাকে।
কাঠামোগত দৃষ্টিকোণ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সর্ববৃহৎ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে (২০১১) এর অধিভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার তালিকা নিম্নে সারণিতে দেওয়া হলো।
কোর্স অনুযায়ী কলেজ | বিভাগ অনুযায়ী কলেজ/ইনিস্টিউট সংখ্যা (২০০৯-২০১০) | ||||||
ঢাকা | বরিশাল | রাজশাহী | খুলনা | চট্টগ্রাম | সিলেট | মোট | |
ডিগ্রী কলেজ | ৩৫২ | ১৩০ | ৫০৯ | ২৫২ | ২২৯ | ৬০ | ১৫৩২ |
অনার্স কলেজ | ১১৯ | ১৪ | ৬৯ | ৭২ | ৪৪ | ০৮ | ৩২৬ |
মাস্টার্স প্রিলিমিনারী | ৪২ | ০৫ | ১০ | ০৭ | ১৪ | ০২ | ৮০ |
মাস্টার্স ফাইনাল | ৪৪ | ০৭ | ১৪ | ১১ | ১৫ | ০৩ | ৯৪ |
ল’ কলেজ | ৩৩ | ০৪ | ১৩ | ০৮ | ১১ | ০৩ | ৭২ |
বি.এড | ৪০ | ০৯ | ২৫ | ২১ | ২২ | ০৩ | ১২০ |
বি.পি.এড | ০৬ | ০৩ | ০৯ | ০৬ | ০৫ | - | ২৯ |
অন্যান্য প্রফেশসাল | - | - | - | - | - | - | ৯৭ |
পরীক্ষার নাম | পরীক্ষার্থীর সংখ্যা (প্রায়) | |
অনার্স | ১ম বর্ষ | ১,৬৫,০০০ |
২য় বর্ষ | ১,৪০,০০০ | |
৩য় বর্ষ | ১,৩০,০০০ | |
মাস্টার্স | ৪র্থ বর্ষ | ১,০০,০০০ |
প্রিলিমিনারী | ৫০,০০০ | |
ফাইনাল | ৮৬,০০০ | |
ডিগ্রী | ১ম বর্ষ | ১,৮০,০০০ |
২য় বর্ষ | ১,৫০,০০০ | |
৩য় বর্ষ | ১,০০,০০০ | |
প্রফেশসাল | এল.এল.বি, বি.এড এবং অনান্য | ২৫,০০০ |
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭৮ জন শিক্ষক, ৬৬৯ জন কর্মকর্তা ও ৯৯২ জন কর্মচারী কাজ করছে। একাডেমিক কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট বিষয়সমূহ যথাযথ পরিচালনার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আঞ্চলিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সকল একাডেমিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য আঞ্চলিক কেন্দ্রে পরীক্ষা বিভাগ, অর্থ বিভাগ, কলেজ পরিদর্শন বিভাগ এবং কম্পিউটার এবং আইসিটি ইউনিট-এর কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। [মোঃ আনোয়ার হোসেন এবং মোবশ্বেরা খানম]