জাতীয় প্রতিরক্ষা কলেজ
জাতীয় প্রতিরক্ষা কলেজ জাতীয় প্রতিরক্ষা কলেজ ১৯৯০ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন শহরের মীরপুর ক্যান্টনমেন্টে এ কলেজটি অবস্থিত। প্রতিরক্ষা বাহিনীর কমান্ড ও স্টাফ কলেজ প্রাঙ্গণে সাময়িকভাবে ১৯৯৯ সালের ১০ জানুয়ারি কলেজটি চালু করা হয়। জাতীয় প্রতিরক্ষা কলেজের বর্তমান অবস্থানের সন্নিকটেই ওই কলেজটি ছিল। প্রতিরক্ষা কলেজে প্রধানত দুই ধরনের শিক্ষাক্রম রয়েছে। জাতীয় প্রতিরক্ষা শিক্ষাক্রম এবং সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধ সংক্রান্ত বিষয়াদি (এএফডব্লিউসি)। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল বা তদুর্ধ পর্যায়ের একজন সামরিক কর্মকর্তার নেতৃত্বাধীন এ কলেজে চারটি শাখা রয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনীসহ বেসামরিক কর্মকর্তাগণ জাতীয় প্রতিরক্ষা শিক্ষাক্রমের আওতাভু্ক্ত। প্রতিরক্ষাসহ জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা বিষয়ে সশস্ত্র বাহিনী ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষিত করাই এ শিক্ষাক্রমের সার্বিক উদ্দেশ্যে।
এ শিক্ষাক্রমের উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের:
(ক) জাতীয় নীতিসহ উচ্চপর্যায়ে প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে জ্ঞান বৃদ্ধি;
(খ) বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ সামাজিক বিষয়ে বোধশক্তি শক্তিশালী করণ;
(গ) যে বিষয়সমূহ জাতীয় নীতি প্রণয়ন প্রভাবিত করে তা উপলব্ধি করা;
(ঘ) কৌশলগত রূপকল্পের উন্নয়নে দক্ষতা; এবং
(ঙ) ব্যক্তিগত গুণাবলিসহ আন্তঃব্যক্তিগত দক্ষতার উৎকর্ষসাধন।
কলেজের কমান্ড্যান্ট এ প্রতিষ্ঠানের ফ্যাকালটির প্রধান। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও সমপর্যায়ের অভিজ্ঞ স্বল্পসংখ্যক কর্মকর্তা তাকে সহায়তা প্রদান করেন। এদেরকে সিনিয়র ডাইরেকটিং স্টাফ বলা হয়। এ ছাড়া রয়েছে অন্যান্য যোগ্য স্টাফ কর্মকর্তা। এ কলেজে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও কারিগরী সুবিধাদি বিদ্যমান।
এ কোর্সে অংশগ্রহণকারীরা শিক্ষার্থী-সদস্য নামে অভিহিত। বর্তমানে প্রতি শিক্ষাক্রমে চল্লিশজন অংশগ্রহণকারী রয়েছে। এদের মধ্যে ষোল থেকে আঠার জন বিদেশি সদস্য। সব ধরনের সদস্যই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও সমপর্যায়ের বেসামরিক কর্মকর্তা। অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানসম্পন্ন এসব অংশগ্রহণকারী শিক্ষাক্রমের মান উন্নয়নে সহায়ক উৎস হিসেবে কাজ করে।
লেকচার ও প্যানেল আলোচনা শিক্ষা কর্মসূচির অংশ। অত্যন্ত যোগ্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করা হয়। এরা নিম্নোক্ত ধরনের ব্যক্তি হয়ে থাকেন:
১. খ্যতিমান ব্যক্তিত্ব যেমন রাষ্ট্রবিদ, কূটনীতিবিদ, মন্ত্রী, উপদেষ্টা যারা মূল্যবান মতামত দিতে সক্ষম;
২. শিক্ষা, বাণিজ্য, বিজ্ঞান, সাংবাদিকতা ও কারিগরী বিষয়সমূহে দক্ষ গুণীজন;
৩. কোনো বিষয়ে দক্ষতার সঙ্গে জ্ঞান দিতে সক্ষম এমন সব সরকারি জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।
লেকচার ও প্যানেল আলোচনা ব্যতীত গবেষণামূলক কর্মকান্ড, স্থানীয় পরিদর্শন, দেশে বিদেশে ভ্রমণ, সামাজিক ও খেলাধূলার কর্মসূচি। কলেজে অন্যান্য সহায়ক সুবিধাদির অন্তর্ভূক্ত রয়েছে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার, তথ্য প্রযুক্তি কেন্দ্র, শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক সুবিধা ও অফিসারদের মেস।
কলেজের কিছু প্রকাশনাও রয়েছে। এনডিসি সাময়িকী শীর্ষক একটি পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশ করা হয়। জাতীয় প্রতিরক্ষা ও এএফডব্লিউসি শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত গবেষণামূলক প্রবন্ধ এ সাময়িকীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কলেজের সম্মিলিত স্টাডি গ্রুপ কর্তৃক প্রণীত ‘নীতিপত্র’ও প্রকাশ করা হয়। সশস্ত্র বাহিনীর যুদ্ধ সংক্রান্ত শিক্ষা কর্মসূচি সম্মিলিত বাহিনীর জন্য চালু করা হয়। যুদ্ধ পরিচালনা ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনার উপর এ শিক্ষা কর্মসূচি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। মোট চারটি অংশে গঠিত এ শিক্ষা কর্মসূচির মেয়াদ চুয়াল্লিশ মাস। কার্যক্রমের কম্যান্ড ও দপ্তরভিত্তিক দায়িত্ব পালন সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানই এর লক্ষ্য।
নির্ধারিত উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ:
(ক) যুদ্ধের তাত্ত্বিক এবং কার্যক্ষেত্রের মূল বিষয়াবলির বিশ্লেষণ;
(খ) বাংলাদেশের বিদ্যমান কৌশলগত ও রাজনৈতিক কাঠামোর মূল্যায়নের ভিত্তিতে জাতীয় উদ্দেশ্যসমূহ অর্জনে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা;
(গ) একক বা সম্মিলিত বাহিনীর বাস্তবায়ন পর্যায়ের তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন;
(ঘ) সামরিক অভিযান সংক্রান্ত কার্যাবলির পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং চালু রাখার বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রস্ত্ততি প্রদান;
(ঙ) যুদ্ধ পরিচালনা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নেতৃত্ব প্রদানসহ দপ্তর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা দক্ষতার উৎকর্ষ সাধন।
এ শিক্ষাক্রমের প্রতি কোর্সে অনধিক লেফটেন্যান্ট কর্নেল অথবা সমপর্যায়ের অন্যান্য বাহিনীর মোট ৪০ জন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন।
এর পাঠক্রমের মধ্যে যুদ্ধতত্ত্ব, পরিচালনাতত্ত্ব, দেশের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণের বিষয় অন্তর্ভূক্ত। পাঠ্যক্রমে মূল বিষয় হলো যুদ্ধ। [এ.এম.এম শওকত আলী]
তথ্যসুত্র জাতীয় প্রতিরক্ষা কলেজের National Defence College, Bangladesh শীর্ষক পুস্তিকা।