নাঙ্গলকোট উপজেলা
নাঙ্গলকোট উপজেলা (কুমিল্লা জেলা) আয়তন: ২৩৬.৪৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°০২´ থেকে ২৩°১৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°০৭´ থেকে ৯১°১৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে লাকসাম ও চৌদ্দগ্রাম উপজেলা, দক্ষিণে সেনবাগ ও দাগনভূঁইয়া উপজেলা, পূর্বে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা, পশ্চিমে লাকসাম উপজেলা।
জনসংখ্যা ৩১৯৭৮২; পুরুষ ১৫৬৫৫৮, মহিলা ১৬৩২২৪। মুসলিম ৩১৫৩৬৪, হিন্দু ৪৩৭৩, বৌদ্ধ ৯, খ্রিস্টান ১৪ এবং অন্যান্য ২২।
জলাশয় প্রধান নদী: ডাকাতিয়া।
প্রশাসন নাঙ্গলকোট থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ১৩ | ২১৩ | ২৮৯ | ৬২৬৪ | ৩১৩৫১৮ | ১৩৫২ | ৪৫.৮২ | ৪০.৫০ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৩.২৫ | ৩ | ৬২৬৪ | ১৯২৭ | ৪৫.৮২ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
আদ্র ০৮ | ৭১৪৯ | ১৮৫২৫ | ১৯০৯০ | ৩৯.১৪ | ||||
জোড্ডা ৬০ | ৬৬১৩ | ১৬৮১৫ | ১৮১১৩ | ৩৯.৩৪ | ||||
ঢালুয়া ৪৩ | ৬৩২৮ | ১৩৮২৯ | ১৩৭৩৪ | ৩৯.০৫ | ||||
দৌলখাড় ৫১ | ৭১২৬ | ১৭০১৮ | ১৮৭৪৩ | ৩৯.৫১ | ||||
নাঙ্গলকোট ৭৭ | ২৫৩২ | ৯০৬১ | ৮৫৫৬ | ৪৪.২০ | ||||
পেরিয়া ৮০ | ৩৫৭৫ | ১১২৮৪ | ১২০৩৪ | ৩৯.৫০ | ||||
বক্সগঞ্জ ৩৪ | ৩৩২৭ | ৯৩৮৫ | ১০৬৫৩ | ৩৯.২০ | ||||
বঙ্গড্ডা ১৭ | ৩০৯৯ | ১০০১৭ | ৯৯৯৬ | ৩৯.৫৭ | ||||
মোকরা ৬৯ | ৫৮৪৪ | ১৬২২৭ | ১৬৫৩৮ | ৪৩.৩৭ | ||||
মোকরাবপুর | ২৫৫০ | ৭৬২১ | ৮০৮৬ | ৩৯.২৯ | ||||
রায়কোট ৮৬ | ৫৭২৪ | ১৬৫৩০ | ১৭৮৬৩ | ৪১.৬২ | ||||
সাতবাড়িয়া ৯৪ | ২২৭১ | ৪১০৭ | ৩৮১২ | ৫১.৬৮ | ||||
হেসাখালা | ২২৮৭ | ৬১৩৯ | ৬০০৬ | ৩৭.৫৪ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ পাটোয়ার দীঘির পাড়ে পুরাতন কিল্লা।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি মুক্তিযুদ্ধের সময় এ উপজেলা ২ নং সেক্টরের অধীন ছিল। পাকবাহিনী উপজেলার তেজের বাজারে ১১ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে। তাছাড়া স্থানীয় রাজাকাররা ১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে প্রকাশ্যে হত্যা করে হাসানপুর রেলস্টেশনের পাশে মাটিতে পুঁতে রাখে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন স্মৃতিস্তম্ভ ২, গণকবর ২ (পরিকোট ও তেজের বাজার)।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৬৫০, মন্দির ৬। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: নাঙ্গলকোট বড় মসজিদ, খন্দকার বাড়ি জামে মসজিদ, মোকরা শাহী জামে মসজিদ, তিলিপ জামে মসজিদ, হেসাখাল শ্রী শ্রী কালীমন্দির, বেলঘর মন্দির, ওহিয়াজোড়া কালীমন্দির।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪০.৬১%; পুরুষ ৪২.১৭%, মহিলা ৩৯.১৮%। কলেজ ৯, কারিগরি কলেজ ৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৩, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৩১, স্যাটেলাইট প্রাথমিক বিদ্যালয় ৩৯, মাদ্রাসা ৩৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: হাসান মেমোরিয়াল ডিগ্রি কলেজ (১৯৮৪), চলন কলেজ (১৯৮৫), হোমনাবাদ আদর্শ কলেজ (১৯৮৫), ভোলাইন কলেজ (১৯৯৫), ময়ুরা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৬), দৌলখাড় উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯), নাঙ্গলকোট এ আর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪১), বুদ্ধি প্রতিবন্ধি বিদ্যালয় (১৯৮৮), বাদশা মিয়া হাইস্কুল, মন্ডলী উচ্চ বিদ্যালয়, শাকতলী উচ্চ বিদ্যালয়, পাটোয়ার সিনিয়র মাদ্রাসা, নাঙ্গলকোট এ ইউ কামিল মাদ্রাসা।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক নাঙ্গলকোট বার্তা (অনিয়মিত)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, ক্লাব ১০২, খেলার মাঠ ১০, নাট্যমঞ্চ ১।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৫.৭২%, অকৃষি শ্রমিক ৩.১৫%, শিল্প ০.৭৯%, ব্যবসা ১২.৫৪%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৯১%, চাকরি ১৪.৩৯%, নির্মাণ ১.৪২%, ধর্মীয় সেবা ০.৪৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৮.৪২% এবং অন্যান্য ১০.২০%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৩.১৩%, ভূমিহীন ৩৬.৮৭%। শহরে ৬০.০৭% এবং গ্রামে ৬৩.১৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আলু, ভুট্টা, কলাই, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, কাউন, তুত, পান, অড়হর।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, আনারস, তরমুজ, কামরাঙ্গা।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য প্রজনন ও বিপনন কেন্দ্র ১১, হাঁস-মুরগি ১০, নার্সারি ১১, পশু প্রজনন কেন্দ্র ১৫।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৪০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ২০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫৪০ কিমি; রেলপথ ২৬ কিমি। কালভার্ট ৭২৪, ব্রিজ ২৩।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা চালকল, বরফকল, ইটের ভাটা।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, সূচিশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।
হাটবাজার ও মেলা হাট বাজার ৪০, মেলা ৪। নাঙ্গলকোট বাজার, ওমরগঞ্জ বাজার, চড়িয়া বাজার, জোড্ডা দৌলখাড় বাজার ও বক্সগঞ্জ বাজার, ঢালুয়া বাজার, মাহিনী বাজার, হেসাখাল বাজার, দায়েমচাতী বাজার এবং পৌষসংক্রান্তি মেলা (মোকরা গ্রাম) ও বৈশাখী মেলা (আজিয়ারা) উল্লেখযোগ্য।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২২.৯৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৮.১৬%, ট্যাপ ০.৯৩%, পুকুর ২.৭১% এবং অন্যান্য ৮.২১%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫৫.৩৫% (গ্রামে ৫৪.৯০% ও শহরে ৭৭.৫৫%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩১.৩৭% (গ্রামে ৩১.৭৪% ও শহরে ১২.৮৭%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৩.২৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ২, পবিরার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৩, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৪২, ইপিআই কেন্দ্র ২৪, ক্লিনিক ২, মানসিক হাসপাতাল ১, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৫৮, ১৯৯৮ ও ২০০২ সালের বন্যায় উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হলে ঘরবাড়ি, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
এনজিও ব্র্যাক, আশা, মানব কল্যাণ সংস্থা। [মো. মোবাশ্বের হোসেন]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; নাঙ্গলকোট উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।